শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ক্ষমা


প্রকাশিত:
২৪ মে ২০২০ ০২:১৬

আপডেট:
১৭ মে ২০২৪ ০৮:২৯

ফাইল ছবি

আমাদের পরস্পরের মাঝে অনেক সময় ঝগড়া, কলহ-বিবাদ এবং মনোমালিন্য লেগে থাকে। কারো সাথে সখ্যতা তো কারো সাথে ঝগড়া। জীবনের পথে একসাথে চলতে গিয়ে গিয়ে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। সবার সাথেই মিল মুহব্বত হবে এমনটা হবার নয়। কারো সাথে না কারো সাথে বিবাদ লাগতেই পারে।

যখন কারো সাথে ঝগড়া বা কলহ হয়, তখন রাগ মেটানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে অনেকে। যতক্ষণ প্রতিপক্ষকে পরাস্ত না করা যায় ততক্ষণ যেন থামতেই চায় না। মনের জেদ যেন মেটাতেই হবে। পরাজিত করতেই হবে। কিন্তু ইসলাম কী বলে? এভাবেই জেদ মাটানোয় লিপ্ত হবে সবাই?

এই বিবাদে কেউ একজন তো অপরাধী হবে। অপর জন সত্যের ওপর। কিংবা উভয় জনই অপরাধী। অথবা কারোই কোনো কসুর নেই। পুরোটাই ভুল বোঝাবুঝি। দোষী যেই হোক প্রত্যেকেই কিন্তু আপন দৃষ্টিতে নির্দোষ। একজন মনীষী বলেছেন, ‘কোনো অপরাধীই নিজেকে অপরাধী ভাবতে পছন্দ করে না। সবাই নিজেকে নির্দোষ ভাবে।’ যার ফলে অপরজনকে ভুল সাব্যস্ত করে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতেই যত সব বিবাদের সূচনা হয়। এই ছোট্ট একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে শুরু এ বিবাদের আগুন ছড়াতে থাকে এবং বড়ো কোনো অঘটন না ঘটা পর্যন্ত থামে না।

তাহলে এর শেষ কোথায়? এই বিবাদ কি শেষ হবে না? হ্যাঁ, এই বিবাদ মিমাংসা করার সুন্দর এক পন্থা শিখিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। তা হচ্ছে পরস্পর একে অপরকে ক্ষমা করে দেয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তারা যেন ক্ষমা করে, মার্জনা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুক? আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা নূর : ২২)

যদি উভয়েই এটা ভেবে নেয়, ভুল যার হয়েছে হোক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। তাহলে সে বিবাদ কি আর এক পা এগুতে পারে?

এ সুযোগে যে ক্ষমাগুণ অবলম্বন করলো সে হয়ে গেলো আল্লাহর প্রিয় পাত্র। সে হয় সম্মানের অধিকারী। হাদিস শরিফে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ক্ষমার দ্বারা আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আর যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয় অবলম্বন করে আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেন।’(মুসলিম)

মানুষকে ক্ষমা করা প্রসঙ্গে নবীজি (সা.)-এর একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-এর সাথে হাঁটছিলাম। তাঁর পরনে ছিল একটি ইয়েমেনি চাদর, মোটা পাড় বিশিষ্ট। এক বেদুঈন তার কাছে এসে সেই চাদর ধরে সজোরে টান দিল। আমি দেখলাম মোটা পাড়ের ঘষায় নবী (সা.)-এর কাঁধে দাগ বসে গেল। লোকটি কর্কশস্বরে তাঁকে বলল, ‘আল্লাহর যে মাল তোমার কাছে আছে তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বল!’ নবী (সা.) লোকটির দিকে ফিরে তাকালেন এবং মুচকি হাসলেন এরপর তাকে কিছু দেয়ার আদেশ করলেন।’ (বুখারি : ৩১৪৯)

ক্ষমার এ গুণ যার মধ্যে থাকবে সে শুধু দুনিয়াতেই নয় পরকালেও হয় মর্যাদার অধিকারী। জান্নাতের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমালাভের জন্য প্রতিযোগিতা করো আর প্রতিযোগিতা করো সেই জান্নাতের জন্যে যার বিশালতা আসমান-জমিনের বিশালতার সমান, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্যে। (জান্নাতের উত্তরাধিকারি ভাগ্যবান তারা) যারা স্বচ্ছল কি অস্বচ্ছল সর্বাবস্থায় নিজেদের সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আর যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দেয়। (এটা সৎ মানুষের গুণ) আর সৎ মানুষদেরকে সবসময় আল্লাহ ভালোবাসেন।’ (সূরা আল ইমরান : ১৩৩-১৩৪)

ক্রোধ সংবরণ আর ক্ষমার মাধ্যমে আল্লাহ ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য হওয়া যায়। তাই আমাদের উচিৎ সর্বদা ক্ষমার পথ অবলম্বন করা। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।


সম্পর্কিত বিষয়:

মুমিন ক্ষমা

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top