মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


শবে কদরের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য


প্রকাশিত:
১৯ মে ২০২০ ০৬:০৩

আপডেট:
৭ মে ২০২৪ ১০:৫৪

ফাইল ছবি

রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস। এ মাসের এক মহিমান্বিত রজনীতে ‘লওহে মাহফুজ’ থেকে পৃথিবীর আকাশে অবতীর্ণ হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন। অনন্য মাহাত্ম্যপূর্ণ সে রাতকে আমরা ‘শবে কদর’ বলে জানি। মহান আল্লাহ শবে কদরকে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর ঘোষণা করেছেন। এমনকি আল কুরআনে ‘কদর’ নামে পূর্ণ একটি সূরাও অবতীর্ণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছেÑ ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) নাজিল করেছি কদর (মর্যাদাপূর্ণ) রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরাঈল) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সকল বিষয় নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে ঊষার উদয় পর্যন্ত।’ (সুরা কদর : আয়াত ১-৫)।

শবে কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনÑ যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি : হাদিস ৬৭২)।

আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু তা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই।’ ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনÑ ‘যে লোক শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয় সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হলো।’

কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সে জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাজানের শেষ দশ দিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন। রমজানের শেষ দশকের যেকোনো বিজোড় রাতে শবে কদর হতে পারে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো রাতকে নির্দিষ্ট করেননি। মহামহিম আল্লাহ তায়ালা বিশেষ কোনো হিকমতে সম্মানিত এ রজনীটি গোপন রেখেছেন। হতে পারে আল্লাহ চান বান্দা মহিমাময় রজনীটি লাভের আশায় সম্ভাবনাময় প্রতিটি রাতই যেন প্রভুর ইবাদাতে নিমগ্ন হয়।

হজরত আবু সালামা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু সায়িদ (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেছি, সে আমার বন্ধু ছিল। তিনি বলেন, আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে রমজানের মধ্য ১০ দিন ইতিকাফে ছিলাম। তিনি ২০ তারিখ সকালে বের হন এবং আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে বলেনÑ আমাকে কদরের রজনী দেখানো হয়েছিল, অতঃপর ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তোমরা তা শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ করো। আমি নিজেকে মাটি ও পানিতে সিজদা করতে দেখেছি। তাই যারা রাসুলের সঙ্গে ইতিকাফে ছিল, তারা যেন ফিরে আসে। তখন আমরা ফিরে এসেছি। আমরা আকাশে কোনো মেঘ দেখিনি। হঠাৎ একরাতে মেঘ এলো, বৃষ্টি হলো, মসজিদের ছাদ ভেসে গেল। তা ছিল খেজুরগাছের ঢালের এবং নামাজ শুরু হলো, তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছি, তিনি পানি ও মাটিতে সিজদা করছেন। এমনকি তাঁর কপালে মাটির চিহ্ন ছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৬)

সহিহ বুখারির অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘হজরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) আমাদের কদরের রজনীর খবর দেওয়ার জন্য বের হয়েছেন। তখন দুজন মুসলিম পরস্পর ঝগড়া করে। তিনি বলেন, আমি বের হলাম তোমাদের কদরের রজনীর খবর দেওয়ার জন্য। কিন্তু অমুক অমুক ঝগড়া করেছে, অতঃপর তা তুলে নেওয়া হয়েছে। তাতে তোমাদের জন্য কল্যাণ থাকতে পারে। তাই তোমরা শেষের পঞ্চম, সপ্তম ও নবম তারিখে তালাশ করো।’ (বুখারি, হাদিস : ২০২৩)

রমজানের শেষ দশক চলছে, কয়েকটা দিন বাকি আছে। এ দিনগুলোকে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের মহা সুযোগ মনে করে আলস্যের চাদর ঝেড়ে ফেলে দিয়ে প্রভুর ইবাদাতে জেগে ওঠার এখনই সময়। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আমাদের ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করুন। অনন্য মাহাত্ম্যপূর্ণ এ রজনীটি ইবাদাতে কাটানোর তওফিক দান করুন। আমিন।


সম্পর্কিত বিষয়:

শবে কদর

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top