শনিবার, ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২শে ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


সুন্নাহর অনুসরণ

নবীপ্রেমের প্রকৃত রূপ: আনুষ্ঠানিকতা নয়


প্রকাশিত:
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৪১

আপডেট:
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৪৮

ছবি ‍সংগৃহিত

ইসলামি বর্ষপঞ্জির তৃতীয় মাস রবিউল আউয়াল। এই মাসের ১২ তারিখ ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিনে মানবজাতির হেদায়েতের পথপ্রদর্শক, বিশ্বজাহানের রহমত, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এই ধরায় আগমন করেন। আবার এই দিনেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। তাই এই দিনটি আমাদের জন্য যেমন স্মরণ ও কৃতজ্ঞতার, তেমনি আত্মসমালোচনা ও সুন্নাহতে ফিরে আসার।

নবীজির প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা প্রকাশ করতে আমাদের কিছু সুন্নাহভিত্তিক আমল করা উচিত। এই দিন হোক নবীজির (স.) সুন্নাহকে জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রতিজ্ঞার দিন।

দোয়া ও সিরাত অধ্যয়ন: নবীজি (স.)-এর জন্য আল্লাহর কাছে রহমত ও মাগফিরাত প্রার্থনা করা এবং তাঁর উম্মাহর জন্য তাঁর ত্যাগ-তিতীক্ষা স্মরণ করে দোয়া করা। একই সঙ্গে সহিহ হাদিস ও প্রামাণ্য গ্রন্থ থেকে নবীজি (স.)-এর জীবন, আদর্শ, সংগ্রাম ও দাওয়াতের পদ্ধতি সম্পর্কে গভীরভাবে অধ্যয়ন করা এবং তা পরিবারে বিশেষত শিশু-কিশোরদের মাঝে তুলে ধরা।

সুন্নাহর অনুসরণ ও পুনর্জীবন: এই দিনে আমরা প্রতিজ্ঞা করতে পারি- সততা, আমানতদারিতা, প্রতিবেশীর হক আদায়, এতিম-গরিবদের সহায়তা, দ্বীনদারিত্ব ও সরলতা—এসব গুণে নিজেকে শোভিত করব।

দরুদ ও সালাম: নবীজি (স.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা ঈমানের অংশ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। দরুদে ইবরাহিমি বা অন্যান্য প্রমাণিত দরুদ অধিক পরিমাণে পাঠ করা উচিত।

দান-সদকা ও মানবসেবা: নবীজি (স.) ছিলেন দানশীলতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। তাঁর অনুসরণে গরিব-অসহায়দের সাহায্য করা, খাবার বিতরণ এবং কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা উচিত।

জ্ঞানচর্চা: কোরআন-হাদিসভিত্তিক বিশুদ্ধ আকিদার আলোচনায় অংশগ্রহণ করা। এর মাধ্যমে ভ্রান্ত মতবাদ, কুসংস্কার ও বিদআতের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

বর্জনীয়: বিদআত ও ভ্রান্ত ধারণা
নবীপ্রেমের নামে কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক, যেগুলো ইসলামি শরিয়তে প্রমাণিত নয় এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন ও তাবে তাবেয়িনের যুগে এর কোনো দৃষ্টান্ত নেই।

বিদআতপূর্ণ অনুষ্ঠান পরিহার: মিজশনে জুলুস, আলোকসজ্জা, আতশবাজি বা উৎসবমুখর র‍্যালি—এসব ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।

অতিরঞ্জিত আনন্দ-উল্লাস: ১২ রবিউল আউয়াল জন্মদিনের আনন্দ উৎসবের দিন নয়, আবার এটি কেবল শোকের দিনও নয়। এদিনকে ঈদের মতো উদযাপন, বিশেষ পোশাক, ভোজসভার আয়োজন বা হইচইপূর্ণ কার্যক্রম ইসলামের শিক্ষা বহির্ভূত।

ভ্রান্ত ধারণা: নবীজি (স.) মানুষ ছিলেন, আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দা ও রাসুল ছিলেন—এ বিশ্বাস রাখা আবশ্যক। তাঁকে আল্লাহর অংশ বা সৃষ্টির শুরু থেকে নূর মনে করা ভুল আকিদা ও গুনাহের কারণ হতে পারে।

শিরকি কাজ বর্জন: নবী-রাসুলদের ছবি আঁকা, প্রতিমূর্তি তৈরি বা কবর-মাজারকে কেন্দ্র করে বিশেষ আয়োজন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এটি তাওহিদের পরিপন্থী এবং শিরকের ঝুঁকি বহন করে।

বিভেদ ও ঝগড়া: ১২ রবিউল আউয়াল নিয়ে মতভেদ থাকলেও এ নিয়ে ঝগড়া, বিদ্বেষ বা ফিতনা সৃষ্টি করা অনুচিত। বরং ঐক্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সুন্নাহতে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানানো উচিত।

১২ রবিউল আউয়াল একটি মর্যাদাপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিনকে কেন্দ্র করে প্রকৃত করণীয় হলো—নবীজি (স.)-এর জীবন ও শিক্ষাকে জানা, তা জীবনে বাস্তবায়ন করা, সুন্নাহকে পুনর্জীবিত করা এবং বিদআত ও ভ্রান্ত কাজ থেকে বিরত থাকা। প্রকৃত ভালোবাসা আনুষ্ঠানিক উদযাপনে নয়, বরং তাঁর আদর্শ অনুসরণেই নিহিত। তাই এই দিন হোক নবীজি (স.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের অঙ্গীকার নবায়নের দিন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top