ধন-ক্ষমতার প্রলোভন ব্যর্থ: নবীজির জবাবে উতবা হতবাক!
প্রকাশিত:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৩২
আপডেট:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:১৪

ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে যখন হজরত হামজা (রা.) ও হজরত ওমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। কোরাইশ নেতারা বুঝতে পারে যে, কেবল নির্যাতন চালিয়ে নবী মুহাম্মদ (স.)-কে থামানো আর সম্ভব নয়। তাই তারা কৌশল পাল্টে প্রলোভন ও রাজনৈতিক সমঝোতার পথ বেছে নেয়। এবার ধন-সম্পদ, ক্ষমতা, নেতৃত্ব ও ভোগ-বিলাসের প্রলোভন দিয়ে নবীজিকে তাঁর দাওয়াতি কর্ম থেকে নিবৃত্ত করতে চাইল।
উতবার প্রলোভন
কোরাইশ নেতা উতবা ইবনে রাবিআ বৈঠকে প্রস্তাব দিলো- ‘আমি মুহাম্মদের সাথে কথা বলব। হয়ত তিনি আমাদের কিছু শর্ত মেনে নেবেন। যদি গ্রহণ করেন, তাহলে আমরা তাঁকে তা দেব, আর এর বিনিময়ে তিনি তাঁর দাওয়াত ছেড়ে দেবেন।’
মসজিদুল হারামে একাকী অবস্থায় থাকা নবীজি (স.)-এর কাছে উতবা গিয়ে বলল- ‘ভ্রাতুষ্পুত্র! তুমি আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছ, আমাদের দেবতাদের গালি দিচ্ছ, পূর্বপুরুষদের কাফের বলছ। তুমি আসলে কী চাও? যদি সম্পদ চাও, আমরা তোমাকে ধনীতম করব। যদি ক্ষমতা চাও, আমরা তোমাকে নেতা বানাব। যদি রাজত্ব চাও, তাহলে তোমাকে রাজা বানাব। এমনকি যদি তোমার ওপর জিন-ভূতের প্রভাব থাকলে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’
নবীজির হৃদয়কাঁপানো জবাব
মহানবী (স.) ধৈর্যের সঙ্গে সব শুনলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন- ‘আবুল ওয়ালিদ, আপনার কথা শেষ?’ উতবা বলল, ‘হ্যাঁ।’
তখন নবীজির (স.) কণ্ঠে ভেসে এলো কোরআনের আয়াত- ‘হা-মীম। এ কিতাব পরম দয়াময় করুণাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। এমন এক কিতাব, যার আয়াতগুলো জ্ঞানী কওমের জন্য বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, কোরআনরূপে আরবি ভাষায়। সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, অতএব তারা শুনবে না। আর তারা বলে, তুমি যার প্রতি আমাদেরকে ডাকছ সে বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণ-আচ্ছাদিত, আমাদের কানে আছে বধিরতা এবং তোমার ও আমাদের মধ্যে আছে পর্দা; কাজেই তুমি তোমার কাজ কর, নিশ্চয় আমরা আমাদের কাজ করব।’ (সুরা ফুসসিলাত: ১-৫)
এরপর নবীজির (স.) কণ্ঠে যখন এ আয়াত ধ্বনিত হলো— ‘এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দিন, আমি তোমাদের সতর্ক করছি ‘আদ ও সামূদের শাস্তির মতো এক ভয়াবহ বিপর্যয় সম্পর্কে।’ (সুরা ফুসসিলাত: ১৩)
এবার উতবা ভয়ে কেঁপে উঠল, মুখে হাত রাখল এবং অনুনয় করে বলল, ‘আত্মীয়তার খাতিরে, আর আল্লাহর নামে, দয়া করে থামুন!’
উতবার রূপান্তর
প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া সেই উতবা ফিরে এল সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ হয়ে। কোরাইশদের বলল- ‘আল্লাহর শপথ! আমি এমন কিছু শুনেছি যা কখনো শুনিনি। এটা না কবিতা, না যাদু। হে কোরাইশগণ! তাকে একা ছেড়ে দাও। যদি অন্যরা তাকে হত্যা করে, তবে তোমরা বেঁচে যাবে। আর যদি সে বিজয়ী হয়, তবে তার গৌরব তোমাদেরও গৌরব হবে।’
কিন্তু কোরাইশরা তাতে কর্ণপাত করল না। তারা বিদ্রুপ করে বলল, ‘তুমিও কি মুহাম্মদের যাদুর কবলে পড়েছ?’
ঐতিহাসিক তাৎপর্য
এই ঘটনা প্রমাণ করে— মহানবী মুহাম্মদ (স.) কখনো ধন, ক্ষমতা, রাজত্ব বা ভোগ-বিলাসের লোভে দাওয়াত থেকে বিচ্যুত হননি।
কোরআনের প্রভাব ছিল এতই গভীর যে, মুহূর্তেই এক কঠিন বিরোধীও কেঁপে ওঠে।
সত্য অস্বীকার করে কোরাইশরা এক সুবর্ণ সুযোগ হারিয়ে নিজেদের ধ্বংসের পথই বেছে নিল।
(সিরাতুন নববিয়্যাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৯৩-২৯৪; তাফসির ইবনে কাসির, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৫৯-১৬১)
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: