শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


‘এক কিডনি গ্রাম’


প্রকাশিত:
১৭ মার্চ ২০২২ ০২:২৫

আপডেট:
১৭ মার্চ ২০২২ ০২:৩৬

 ছবি : সংগৃহীত

কিডনি মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এক অঙ্গ। প্রত্যেকের শরীরেই দুটি করে কিডনি থাকে। যদিও বিভিন্ন রোগে কারও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে আক্রান্ত কিডনি অপসারণ করা হয়। এজন্য আবার ওই কিডনির স্থানে করা হয়ে ট্রান্সপ্ল্যান্টও।

কারণ মানুষের বেঁচে থাকতে দুটো কিডনিরই প্রয়োজন আছে। আবার আর্থিক অভাবের কারণে অনেকেই কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট না করিয়ে এক কিডনি নিয়েই বছরের পর বছর বেঁচে থাকেন। তবে সেক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকেই যায়।

তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, অনেকেই টাকার লোভে বিক্রি করে দেন শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যদিও বিষয়টি অনেকেই লুকিয়ে করেন। তবে জানলে অবাক হবে, আফগানিস্তানে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানকার সব বাসিন্দাই এক কিডনি নিয়ে বেঁচে আছেন।

এ কারণে স্থানটি ‘এক কিডনি গ্রাম’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তানের হেরাত শহরের কাছে শেনশায়বা বাজার এলাকাতেই আছে ‘এক কিডনি গ্রাম’।

ছবি: সংগৃহীত

গত বছর তালেবান ক্ষমতায় আসার আগ থেকেই আফগানিস্তান অর্থনৈতিকভাবে ধসে পড়ে। ফলে সে দেশের অনেক পরিবারের জন্যই খাবার জোগাড় করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

তারা এতোটাই অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েন যে, কিছু মানুষ ঋণ পরিশোধ করতে ও খাদ্য কেনার জন্য তাদের একটি করে কিডনি কালোবাজারে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন।

ফ্রান্স২৪ প্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নুরউদ্দিন নামের ৩২ বছর বয়সী এক বাবা বলেন, ‘আমি চাইনি, কিন্তু আমার কাছে কোনো বিকল্প ছিল না। আমি এটা আমার সন্তানদের জন্য করেছি।’

‘তবে আমি এখন এ কাজের জন্য অনুতপ্ত। কারণ আমি শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আর কাজ করতে এমনকি ভারী কিছু তুলতেও পারছি না। আমি প্রতিদিন ব্যথায় ভুগছি।’

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মানুষের অঙ্গ বিক্রি বা কেনা বেআইনি, কিন্তু আফগানিস্তানে এটি অনিয়ন্ত্রিত। চিকিৎসকরাও বলছেন, কিডনিদাতারাই তা বিক্রির জন্য অনুরোধ করছেন।

এ কারণে তাদেরও কিছু করার নেই। তবে দানের পরে কী হয়? অঙ্গগুলো কোথায় যায়? তা কিন্তু কারো জানা নেই। সেখানকার ডাক্তাররা এসব বিষয়ে কিছু স্বীকার করেন না।

যদিও আফগানিস্তানে ঠিক কতগুলো কিডনি বিক্রি হয়েছে তা জানা অসম্ভব। তবে বিভিন্ন রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে শুধু হেরাত প্রদেশেই শত শত কিডনি অপসারণের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। জনগণের অর্থনৈতিক সমস্যা যত খারাপ হয়, এই ধরনের অঙ্গ বেচাকেনার সংখ্যাও বাড়ে।

আজিজা নামে কিডনি বিক্রি করা এক নারী বলেন, ‘আমার কিডনি ২ লাখ ৫০ হাজার (২৯০০ ডলার) আফগান আফগানিতে বিক্রি করেছি। এটা আমাকে করতে হয়েছে, কারণ আমার স্বামী কাজ করেন না। অন্যদিকে আমাদের অনেক ঋণ ছিল।’

তিন সন্তানের এই মা আরও বলেন, ‘আমার সন্তানরা রাস্তায় ভিক্ষা করে ঘুরে বেড়ায়। আমি যদি কিডনি বিক্রি না করি, আমার এক বছরের মেয়েকে বিক্রি করতে বাধ্য হতাম।’

আফগানিস্তানে ২৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অর্থাৎ সেখানকার জনসংখ্যার ৫৯ শতাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে আছেন। তালেবানরা ক্ষমতা দখল করার পরে অর্ধ মিলিয়ন নাগরিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন।

আগানিস্তানের ‘এক কিডনি গ্রাম’ এর মতো নেপালের হোকসেতেও একটি গ্রাম আছে। যেখানকার প্রায় প্রত্যেক মানুষই তাদের একটি কিডনি বিক্রি করেছেন আর্থিক অভাবে মেটাতে।

এসএন/তাজা/২০২২

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল/আল জাজিরা/ফ্রান্স২৪/ন্যাশনাল পোস্ট


সম্পর্কিত বিষয়:

আফগানিস্তানে ফ্রান্স বিশ্ব

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top