শখে শুরু, মশিউরের পণ্য যাচ্ছে আমেরিকা-কানাডা-ভারত
প্রকাশিত:
২২ জুন ২০২৫ ১৫:৫৬
আপডেট:
২২ জুন ২০২৫ ২১:১৯

শখের পণ্য অনলাইন থেকে কিনতে খুব বেশি ব্যয় হতো। শখ পূরণের সেই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের লাগাম টানতে বিকল্প পথে হাঁটতে শুরু করেন মশিউর রেজা। কারুকাজমণ্ডিত পণ্য কীভাবে তৈরি করা যায় তা শিখতে বেড়িয়ে পড়েন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রশিক্ষণ নেন ভারতেও। প্রথমিকভাবে যা তৈরি করতে পারছিলেন তা দেখে পরিচিত আর স্বজনরা বেশ আগ্রহ দেখান। এমনকি প্রথম মাসেই ১০ হাজার টাকা রোজগার হয়। এরপর সিদ্ধান্ত নেন সৃজনশীল এই কাজে উপার্জনের মাধ্যম করে তুলবেন।
বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের পাশে জহুর আলী সড়কের নিজ বাড়িতে মশিউর রেজার কারু শিল্পের স্টুডিও। নাম দিয়েছেন ঋদ্ধ।
মশিউর রেজা বলেন, ছাত্রজীবনে থিয়েটারে সৃজনশীল কাজে জড়িয়ে পড়ি। নাটকের প্রদর্শনী করতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছি। থিয়েটার চর্চা করতে বাংলাদেশে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব না। দেশের বাইরে দেখেছি কালচারাল মিনিয়েচার খুব বিক্রি হচ্ছে। সেগুলোর দাম ছিল অসম্ভব রকমের চড়া। ওখান থেকে আমার কাছে মনে হলো আমিও কালচারাল মিনিয়েচার নিয়ে কাজ করতে পারি।
তিনি বলেন, আমি সারাদিন স্টুডিওতে কাজ করতে পছন্দ করি। ইতোমধ্যে সাড়ে চারশ চরিত্রের মিনিয়েচার তৈরি করেছি। এগুলো খুব চাহিদা সম্পন্ন। এসবের মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশ চরিত্রের শিল্পরূপ ফুটিয়ে তুলেছেন শোপিসে। গৌতম বুদ্ধ, ময়মনসিংহের গীতিকা, আফ্রোদিতি থেকে জীবনানন্দের প্যাঁচা জীবন্ত হয়ে উঠেছে মশিউর রেজার নির্মাণে।
মশিউর রেজা দেশের বাইরে দু-মাস ট্রেনিং নিয়ে নিজের বাসায় কাজ শুরু করার পর যে কারুপণ্যগুলো তৈরি করছিলেন, পারিবারিকভাবে সকলে তা পছন্দ করে। স্বজনরা কিনতে আগ্রহ দেখান। সেগুলো বিক্রি করে প্রথম মাসেই ১০ হাজার টাকা রোজগার করেন। এরপর স্টুডিওতে পরিশ্রম আরও বাড়িয়ে দেন। শুধু পরিচিতজন নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঋদ্ধর পণ্য দিয়ে হাজির হন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে।
মশিউর রেজা বলেন, বাংলাদেশে মানসম্মত কারুপণ্যের বাজারের শক্ত অবস্থান গড়ে ওঠেনি। তারপরও চাহিদা সন্তোষজনক। আমি যে শুধু নিজেই এই কাজ করছি তেমন নয়, স্টুডিওতে আরও দুজন সহযোগী যুক্ত করেছি। এতে করে তারা কাজ শিখে নিজেরা তৈরি করে বাজারজাত করতে পারবে। মানুষের আরও চাহিদা বাড়বে। কারুপণ্যের বাজার স্থায়ী হবে। এসব পণ্য পরিবেশবান্ধবও, কারণ ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর সামগ্রীগুলো তৈরি হয় পরিবেশবান্ধব জিপসাম ও সাদা সিমেন্ট দিয়ে।
এই কারুশিল্পী জানান, ইতোমধ্যে আমেরিকা, কানাডা ও ভারতে তার পণ্য বিক্রি হয়েছে। সেখানে বসবাসকারী বাঙালিরা ঋদ্ধর কারুপণ্যের অর্ডার দেন। আমি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। নতুন শিল্পকর্মের বাজার সৃষ্টির চেষ্টা করছি। সমস্যা হচ্ছে এসব পণ্য বিদেশে পাঠাতে গেলে বিভিন্ন ধরনের বিপত্তির মুখে পড়তে হয়। তবে ঋদ্ধর কারুপণ্যের যেহেতু চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে প্রচেষ্টা রয়েছে আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করার।
সৃজনশীল কাজে অনিশ্চিত জীবিকা হলেও পরিবার থেকে পূর্ণ সহায়তা পেয়েছেন। তার বাবা সাবেক অধ্যাপক আ.খ.ম ফজলুদ্দোহা বলেন, বাংলাদেশে বেকারত্বের যে অভিশাপ সেখান থেকে সরে এসে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়ানোর জন্যই তাকে অনুপ্রাণিত করেছি। নিজেকে চিনতে পারা এবং নিজেকে প্রকাশ যদি করতে না পারে তাহলে মানবজীবনের সার্থকতা কোথায়? আমার ছেলের মধ্যে সৃজনশীল কাজ করার আগ্রহ ছিল। এজন্য আমরাও বাধাগ্রস্ত করিনি। এখনতো দেখছি, খুব ভালো কিছু হচ্ছে।
ঋদ্ধর প্রোডাকশন ম্যানেজার আসাদুজ্জামান লাবিব বলেন, আমাদের এখানে অসংখ্য সৌখিন পণ্য প্রদর্শিত আছে। অসংখ্য চরিত্র চিত্রায়ন করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্য মানুষ আগ্রহ নিয়ে সংগ্রহ করে।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বরিশাল বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জেলার সকল ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও মাঝারি শিল্প মালিকদের সেবা দেওয়াই আমাদের কাজ। আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে এই কাজ করে যাচ্ছি। নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ এবং উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে স্বপ্ল পরিসরে ঋণের ব্যবস্থা করে থাকি।
ঋদ্ধর মতো উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বিসিকের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: