বিশ্ব আলঝেইমার দিবস আজ
প্রকাশিত:
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৩০
আপডেট:
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:০৯

বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ২১ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব আলঝেইমার দিবস। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আলঝেইমার ও ডিমেনশিয়ার মতো জটিল মস্তিষ্কজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতন করা, ভুল ধারণা দূর করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।
আলঝেইমার শব্দটির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত নই। ১৯০৬ সালে জার্মান মনোচিকিৎসক অ্যালয়েস আলঝেইমার প্রথম এ রোগটির বর্ণনা দেন। আর সে কারণে তার নাম অনুসারে এ রোগটির নাম রাখা হয় আলঝেইমার। সাধারণত ৬৫ বছর বয়সের বেশি লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হন। যদিও আলঝেইমারের সূত্রপাত অনেক আগেও হতে পারে। স্মৃতিভ্রংশ বা ভুলে যাওয়া রোগের নামই হলো- আলঝেইমার।
মূলত মস্তিষ্কের জটিল রোগগুলোর একটি হচ্ছে আলঝেইমার। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতি সময়ের সঙ্গে চলে যায়। একটা সময় সে কাউকে চিনতেও পারে না। এমনকি পরিবারের লোকদের কেউ সে ভুলে যায়। আর ভয়াবহ রোগটির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ‘এপিওই ফোর’ জিন। অ্যাপোলিপোপ্রোটিন- ই জিনের একটি রূপ এপিওই ফোর জিন। মানুষের প্রতিটি ‘এপিওই জিন একেকজন অভিভাবকের কাছ থেকে আসে, এবং এপিওই ফোর এক বা দুটি কপি থাকলে আলঝেইমার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এদিকে দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ স্মৃতি লোপ পাওয়ার অন্যতম প্রধান রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের আলঝেইমার প্রতিরোধে জাতীয় কোনো কার্যপরিকল্পনা নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা শুধু একজন মানুষকে নয়, বরং একটি পরিবারের আর্থসামাজিক কাঠামোকে নাড়িয়ে দেয়। বয়স্ক ব্যক্তি যখন ধীরে ধীরে সব ভুলে যেতে থাকেন, তখন তার সেবায় পরিবারও অর্থনৈতিক, মানসিক এবং শারীরিকভাবে চাপে পড়ে যায়।
জাতীয় কর্মপরিকল্পনার ঘাটতি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে সদস্য দেশগুলোকে জাতীয় পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। বাংলাদেশসহ ৬২টি দেশ সে সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি।
গবেষণায় পিছিয়ে বাংলাদেশ
২০১৭ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ডিমেনশিয়া সম্পর্কিত গবেষণার আউটপুট দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি।
অথচ জনসংখ্যার গড় আয়ু বেড়ে
যাওয়ায় প্রবীণ যেমন বাড়ছে, তেমনি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষ ৬০ বছরের বেশি বয়সী হবে। গবেষণা বলছে, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত মানুষ ২৪ লাখে পৌঁছাবে, যা বর্তমানের তুলনায় প্রায় তিন গুণ।
বিশ্বের ভয়াবহ চিত্র
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা দাঁড়াবে সাত কোটি ৮০ লাখে। প্রতিবছর ডিমেনশিয়ায় মৃত্যু হয় ১৬ লাখের। এ রোগের চিকিৎসা ব্যয় বছরে দাঁড়ায় প্রায় ১৫৮ লাখ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত হাসপাতাল দাবি
আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সেক্রেটারি জেনারেল আজিজুল হক বলেন, ভুলে যাওয়া রোগ প্রতিরোধে সরকারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। আমরা একটি কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছি, যেখানে রোগীর আইনি সুরক্ষা, পুনর্বাসন ও বিশেষায়িত হাসপাতাল তৈরির প্রস্তাব রয়েছে।
তিনি বলেন, ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত একজন ব্যক্তিকে সার্বক্ষণিক সেবা দিতে হয়। ফলে পরিবারের অন্য সদস্যদের জীবনে বড় প্রভাব পড়ে– আর্থিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে।
চিকিৎসকদের মতামত
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, আলঝেইমার একটি নিউরোলজিক্যাল রোগ। এতে মস্তিষ্কের কোষে ক্ষতিকর কেমিক্যাল জমে, কোষ মারা যায় এবং স্মৃতিক্ষয় শুরু হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় মানসিক অবসাদ, কথা বলতে সমস্যা, আচরণগত পরিবর্তন।
তিনি বলেন, সব ডিমেনশিয়া নিরাময়যোগ্য নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা করালে উন্নতি সম্ভব। যেমন হরমোনজনিত সমস্যা, মাদকাসক্তি, ভিটামিনের ঘাটতি, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি।
ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, সুস্থ খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বেশি করে শাকসবজি, মাছ, বাদাম খাওয়ার পাশাপাশি ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হলে রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সরকার কী বলছে?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, আলঝেইমারে শুধু একজন ব্যক্তি নন, গোটা পরিবার জড়িয়ে পড়ে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা ও পরিবারভিত্তিক সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলা। ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে একটি কর্মকৌশল ও জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: