শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


ফিতরা প্রদানে আমাদের করনীয়


প্রকাশিত:
২১ মে ২০২০ ০৫:৫৪

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ০০:৩৭

ফাইল ছবি

প্রত্যেক স্বাধীন মুসলমানের ওপর ফিতরা আদায় কার ওয়াজিব। যার কাছে ঈদের দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য (ঘর, কাপড়, গাড়ি ইত্যাদি) ছাড়া সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসাপণ্য কিংবা নগদ টাকা থাকবে- তিনি নিজের ও পরিবারের ছোট-বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করবেন। ফিতরা প্রদানের উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের দিন ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে। তবে এর এক-দুদিন আগেও ফিতরা প্রদান করা যাবে।

ইসলামে ঈদের নামাজ আদায় যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, ততটুকুই গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করতে হবে সদকাতুল ফিতর। নিজের রোজাকে ত্রুটিমুক্ত ও অসহায়-গরিবদের ঈদকে আনন্দময় করতেই ‘সদকাতুল ফিতর’-এর বিধান এসেছে। কিন্তু ওয়াজিব এ বিধান পালনে খুব কম মানুষই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত- সবাই গতানুগতিক নির্ধারিত পরিমাণেই ফিতরা আদায় করে দায় সারার চেষ্টা করেন। অথচ বিষয়টি এমন নয়! হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.)-এর জমানায় আমরা সদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (সাড়ে তিন কেজি প্রায়) খাদ্যবস্তু। তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।’ (বোখারি : ১/২০৪)। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু, যেমন : এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ। (বোখারি : ১/২০৫)।

হাদিস দুটি থেকে বোঝা যায়, খাদ্যবস্তু তথা আটা, খেজুর, কিশমিশ, পনির ও যব ইত্যাদি পণ্যগুলোর যেকোনো একটির মাধ্যমে ফিতরা প্রদান করা যায়। খেজুর, কিশমিশ, পনির ইত্যাদির ক্ষেত্রে পরিমাণ হবে এক সা তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। আটার ক্ষেত্রে পরিমাণ হবে অর্ধ সা বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম। এই পণ্যগুলোর আবার বাজার মূল্য এক নয়।

অর্ধ সা আটার মূল্য যদি (আনুমানিক) ৭০ টাকা হয়, খেজুরের হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য হয় ২০০০ টাকা (আনুমানিক), কিশমিশের মাধ্যমে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য দাঁড়ায় ১৩২০ টাকা (আনুমানিক), পনির দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২৩১০ টাকা (আনুমানিক) এবং যব দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য (আনুমানিক) ৫০০ টাকার মতো আদায় করতে হয়। এর অর্থ দাঁড়ায় পণ্য হিসেবে টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ, তিনগুণ বা তার চেয়েও বেশি হবে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো- আমাদের সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সবাই নিজের ফিতরা প্রদানে সর্বনিম্ন মূল্যের আটাকে বেছে নেন। এতে ফিতরা হয়তো আদায় হয়ে যাবে- কিন্তু যে অর্থে ফিতরা দেওয়া হয়, তথা গরিবদের ঈদকে আনন্দময় করা- সেটি কি অর্জন হবে? ৭০ টাকার মাধ্যমে একজন গরিব কি স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন? তাহলে ধনীরাও কেন ফিতরা আদায়ে চাল-আটাকে বেছে নিচ্ছি। আমরা যারা অঢেল সম্পদের মালিক, নিজেদের ঈদ উদযাপনে যারা হাজার হাজার (কখনও লাখ) টাকা ভাঙতে কার্পণ্য করি না- আমরা কেন খেজুর, পনির, কিশমিশ ইত্যাদির হিসাবে একটু বেশি ফিতরা দিচ্ছি না? কেন আমরা দায়সারা ফিতরা আদায়েই ক্ষ্যান্ত থাকছি! অথচ আমাদের ইমামগণ বলেছেন অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায়ের কথা।

ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে, অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম; অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবদের বেশি উপকার হয় সেটাই উত্তম ফিতরা। ইমাম মালিক (রহ.)-এর মতে, খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম এবং খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ‘আজওয়া’ খেজুর দ্বারাই আদায় করা উত্তম। ইমাম শাফি (রহ.)-এর মতে, হাদিসে উল্লিখিত বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা আদায় করা শ্রেয়।

অন্য ইমামগণের মতও অনুরূপ। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর মতে, সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর অনুসরণ হিসেবে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম। এছাড়াও সদকার ক্ষেত্রে সকল ফকিহগণের ঐকমত্য হলোÑ ‘যা গরিবদের জন্য বেশি উপকারী।’ (আল মুগনী : ৪/২১৯; আওজাযুল মাসালিক শরহে মুআত্তা মালিক : ৬/১২৮)। তাই আসুন, ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ (৭০ টাকায়) আটকে না থেকে সর্বোচ্চ কিংবা মাঝারি পরিমাণ মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায়ের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সর্বপ্রকার দানকে কবুল করুন। আমিন।


সম্পর্কিত বিষয়:

ফিতরা মুসলমান

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top