সংবিধান পরিবর্তনকে হুমকি নয়, গণতান্ত্রিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে
প্রকাশিত:
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৩১
আপডেট:
১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৩২
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধান পরিবর্তনকে হুমকি হিসেবে নয়, বিচার বিভাগকে তা গণতান্ত্রিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া বিদায় সংবর্ধনায় তিনি একথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীদের উপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা একসঙ্গে দেশের বিচারিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিক্রম করেছি। গত ষোল মাসে আপনারা যে সহযোগিতা আমাকে করেছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আমাদের রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তিনটি প্রধান অঙ্গের মাধ্যমে— সেগুলো হচ্ছে আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ। তাই এই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্ট ভবন কেবল একটি স্থাপনা নয়; এটি নাগরিক জীবনের তিনটি ভিত্তির একটি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, জনগণের সংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে, তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানকে পরিবর্তন করতে পারে। বিচার বিভাগকে এটা হুমকি হিসেবে নয়, গণতান্ত্রিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বিচার বিভাগের শক্তি কোনো একক পদে নয়, বরং এটি ন্যায়, ভারসাম্য ও দূরদর্শিতার সঙ্গে সেবা দেওয়ার সম্মিলিত সংকল্পের এক প্রয়াস। আমরা সাধারণত রায়ের কৃতিত্ব বিচারকদের দিই, কিন্তু সেই রায়ের ভাষা, যুক্তি ও কাঠামো তৈরি করেন (আইনজীবী) আপনারা।
একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, অস্থির এই বিশ্বে বিচার বিভাগের স্থিরতা, সংযম, সততা ও সাহসই জাতির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থিতিশীলতার উৎস হতে পারে।
আজকের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আগামী ২৭ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করবেন। ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াডাম কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে আইন শাস্ত্রের ডিগ্রি পেয়েছিলেন। পরে মাস্টার্স ও পিএইচডি করেন যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টস ইউনিভার্সিটির ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসিতে। সৈয়দ রেফাত আহমেদ অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে কাজ করেছেন।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১৯৮৪ সালে ঢাকা জেলা আদালতে এবং ১৯৮৬ সালে হাই কোর্ট বিভাগে আইনজীবী হন। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হন। এর দুই বছর পর তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বাংলাদেশের প্রথিতযশা আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেলের ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ ও ড. সুফিয়া আহমেদের ছেলে। ইশতিয়াক আহমেদ দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সৈয়দ রেফাত আহমেদের মা ভাষা সৈনিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. সুফিয়া আহমেদ বাংলাদেশের প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন।
সম্পর্কিত বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: