বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


শিশুর শিক্ষাজীবনের শুরু আনন্দময় করবেন যেভাবে


প্রকাশিত:
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৫

আপডেট:
১ মে ২০২৫ ১২:০১

ফাইল ছবি

নতুন বছরের এক মাস চলে গেছে এরই মধ্যে, এই সময়ে বাবা-মায়েরা শিশুর শিক্ষাজীবন নিয়ে চিন্তিত থাকেন। বিশেষ করে যাদের সন্তান প্রথমবার স্কুলে যাচ্ছে, তাদের জন্য এই সময়টি একই সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থায় চলমান পরিবর্তন এবং নতুন শিক্ষানীতির প্রেক্ষাপটে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে সচেতন হওয়া এখন আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর প্রথম স্কুলে যাওয়া তার জীবনের একটি বড় মাইলফলক। এই সময়ে শিশু যেমন নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শেখে, তেমনি বাবা-মায়েরও উচিত সন্তানকে সঠিকভাবে গাইড করা। সমালোচনার অনেক জায়গা থাকলেও নতুন শিক্ষানীতি প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও শিশুবান্ধব করতে চায়, যেখানে মুখস্থ করার চেয়ে বোঝা এবং সৃজনশীলতার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাবা-মায়েদেরও ভূমিকা পালন করতে হবে।

শিশুকে স্কুলের জন্য প্রস্তুত করবেন যেভাবে-

১. শিশুকে স্কুলের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। স্কুলে যাওয়া নিয়ে তার মনে কোনো ভয় বা উদ্বেগ থাকলে তা দূর করুন। তাকে বুঝিয়ে বলুন যে স্কুল একটি আনন্দের জায়গা, যেখানে সে নতুন বন্ধু বানাবে এবং অনেক কিছু শিখবে।
২. স্কুলের রুটিনের সঙ্গে তাকে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করুন। নিয়মিত ঘুম, খাওয়া এবং পড়াশোনার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৩. বাড়িতে শিশুর সঙ্গে খেলার ছলে নতুন নতুন বিষয় শেখানোর চেষ্টা করুন। বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষামূলক গেম, পাজল এবং ক্রিয়েটিভ অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে তাকে উৎসাহিত করুন। এতে তার শেখার আগ্রহ বাড়বে এবং স্কুলের পরিবেশেও দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবে।

অন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা শিশুদের যেভাবে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়-

১. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অনুকরণীয় পদ্ধতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা প্রাথমিক স্তরে শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠন এবং সামাজিক দক্ষতা বিকাশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। জাপানের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিশুদেরকে শেখানো হয় কিভাবে দলগতভাবে কাজ করতে হয়, কিভাবে অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয় এবং কিভাবে নিজের কাজ নিজে করতে হয়। এখানে শিশুদেরকে স্কুল পরিষ্কার করা, খাবার পরিবেশন করা এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করা হয়। এই পদ্ধতি শিশুদের মধ্যে দায়িত্ববোধ এবং স্বাবলম্বী হওয়ার গুণ গড়ে তোলে।

২. ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক স্তরে শিশুদের উপর পড়াশোনার কোনো চাপ দেওয়া হয় না। এখানে খেলার মাধ্যমে শেখাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের উপর জোর দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি শিশুদের মধ্যে শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ায় এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।

৩. সুইডেনে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় স্বাধীনতা এবং সৃজনশীলতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে শিশুদেরকে তাদের নিজস্ব গতিতে শেখার সুযোগ দেওয়া হয়। শিক্ষকরা শিশুদেরকে অনুসন্ধান এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শেখার জন্য উৎসাহিত করেন। সুইডেনের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিশুদেরকে প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত করা হয় এবং বাইরে খেলাধুলা ও শেখার জন্য প্রচুর সময় দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে।

৪. জার্মানিতে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো শিশুদের সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করা। এখানে শিশুদেরকে প্রাকৃতিক পরিবেশে শেখার সুযোগ দেওয়া হয় এবং তাদের সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তিকে উৎসাহিত করা হয়। জার্মান কিন্ডারগার্টেনগুলোতে শিশুদেরকে গল্প বলা, গান গাওয়া এবং হাতের কাজের মাধ্যমে শেখানো হয়। এই পদ্ধতি শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং স্বাধীনচেতা মনোভাব গড়ে তোলে।

শিশুর শিক্ষাজীবনের শুরুটি যেন হয় আনন্দময় এবং ইতিবাচক, সেদিকে খেয়াল রাখুন। নতুন বছরে পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলুন। মনে রাখবেন, শিশুর প্রথম শিক্ষক হচ্ছেন আপনিই। তাই তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে আজই সঠিক পদক্ষেপ নিন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সফল শিক্ষাপদ্ধতি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা প্রয়োগ করুন। এতে আপনার সন্তানের শিক্ষাজীবন হবে আরও সমৃদ্ধ এবং গতিশীল।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top