শনিবার, ২রা আগস্ট ২০২৫, ১৮ই শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


বিমান থেকে খাবার ফেলায় অপমানিত ফিলিস্তিনিরা, ‘আমরা যেন হাড়ের পেছনে ছোটা কুকুর’


প্রকাশিত:
২ আগস্ট ২০২৫ ১৯:২৩

আপডেট:
২ আগস্ট ২০২৫ ২২:০৩

ছবি ‍সংগৃহিত

ইসরায়েলের টানা অবরোধের মুখে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে গাজা উপত্যকায় একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল পরিচালিত তথাকথিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের ত্রাণকেন্দ্রগুলোর কাছে প্রতিদিন ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের গুলি করে হত্যা করছে দখলদার বাহিনী।

এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার মধ্যে গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলছে কিছু দেশ। সেই খাদ্যগুলো মাটিতে পড়ার পর কুড়িয়ে নিতে চলছে প্রতিযোগিতা।

আল জাজিরা জানিয়েছে, বিমান থেকে যে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে, তা একটি 'স্বাগত স্বস্তির' বিষয় বলে মনে করা হলেও প্রায়শই ত্রাণের প্যালেটগুলো ফেটে যাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ক্ষুধার্ত মানুষগুলো খাবারের জন্য বালি আঁচড়ে - মাটি থেকে যা পারা যায়, তা নিতে বাধ্য হচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা বলছে, তারা এই প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ অপমানিত বোধ করছে।

গাজার একজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি রানা আত্তিয়া আল জাজিরাকে বলেন, 'আমরা হাড়ের পিছনে ছুটতে থাকা কুকুরের মতো। কেন তারা এভাবে জিনিস ছুঁড়ে মারে? আমরা চাই না, তারা আমাদের এভাবে সাহায্য করুক।'

ইসরায়েলের যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত এসলাম আল-তেলবানি জানান, তিনিও আকাশ থেকে পড়া সাহায্যের পিছনে দৌড়েছিলেন।

তিনি বলেন, 'আমি গিয়েছিলাম এবং আমার বাচ্চারা প্রার্থনা করছিল, যেন আমি খাবার নিয়ে ফিরে আসি। তারা দুই দিন ধরে কিছু খায়নি।'

ক্ষুধার্ত সন্তানদের রেখে খাবারের সন্ধানে বের হওয়া এই ফিলিস্তিনি আল জাজিরার সঙ্গে এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, 'এটা আমার হৃদয় ভেঙে দেয় যে, তারা আমার জন্য...তাদের খাওয়ানোর জন্য অপেক্ষা করছে।'

সম্প্রতি অনলাইনে শেয়ার করা একাধিক ফুটেজে দেখা যায়, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান থেকে ছোঁড়া বালি মিশ্রিত চাল সংগ্রহের জন্য শিশু এবং বয়স্ক বাসিন্দারা দৌড়াচ্ছে। সেগুলো কুড়িয়ে নিতে চলছে প্রতিযোগিতা।

ফিলিস্তিনি কর্মী এবং সাংবাদিকদের পোস্ট করা ভিডিওগুলো যাচাই করেছে আল জাজিরা। গাজা থেকে সাংবাদিক মোতাসেম আদলি বলেন, 'বিমানগুলো সাহায্য ফেলে দেয়। মরিয়া লোকগুলো বেঁচে থাকার জন্য এগুলো নিতে প্রতিযোগিতা করে। চারদিক থেকে অবরুদ্ধ মানুষের ট্র্যাজেডির সারসংক্ষেপ।'

বালি মিশ্রিত চাল সংগ্রহের ভিডিও শেয়ার করে গাজার আরেক সাংবাদিক সালমা কাদ্দৌমি লিখেছেন, 'ক্ষুধার্ত মানুষকে বালুভর্তি চাল খাওয়ানো হচ্ছে। বিমান থেকে বোমা ফেলার মতো করে বাস্তুচ্যুতদের ওপর অপমানজনকভাবে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।'

২৭ মে থেকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে একটি পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করে। এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী ত্রাণ সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইসরায়েলি বাহিনী বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল ২০২৩ সাল থেকে গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অঞ্চলজুড়ে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই অবিরাম বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top