শুক্রবার, ২০শে জুন ২০২৫, ৬ই আষাঢ় ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ট্রাম্প বলেন এক, করেন আরেক; মার্কিন প্রেসিডেন্টের শেষ চাল কী?


প্রকাশিত:
২০ জুন ২০২৫ ১৩:৩১

আপডেট:
২০ জুন ২০২৫ ১৮:৪৭

ছবি সংগৃহীত

ইসরাইল-ইরান সংঘাত নিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই অবস্থান পালটাতে হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। অবস্থা দৃশ্যে মনে হচ্ছে, ইরান যে এমন জবাব দেবে ইসরাইলকে তা তিনি ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি। আর এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শেষ চাল কী হবে তা দেখার অপেক্ষা এখন গোটা বিশ্ব।

ইরানি-আমেরিকান বিশ্লেষক নেগার মোর্তাজাভি আল জাজিরাকে বলেছেন, নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে ‘কৌশলে পরাজিত’ করছেন। মোর্তাজাভি প্রশ্ন তোলেন, ‘ট্রাম্প জানেন না যে, তিনি কী চান।’ তিনি মনে করিয়ে দেন যে, ট্রাম্প শান্তির প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছিলেন ও সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলছে, গাজার পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে। আর এখন তার তত্ত্বাবধানে তৃতীয় বৃহৎ মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ—(শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের যুদ্ধ) শুরু হতে যাচ্ছে। তাই মোর্তাজাভির মনে করেন, ‘তিনি বলেন এক কথা। কিন্তু তিনি করেন অন্যটা।’

এদিকে গত সপ্তাহে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি একদিকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে শিগগিরই স্থায়ীয় শান্তি চুক্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন, অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনিকে হত্যা করা বা ইসরাইলের বোমা হামলা অভিযানে যোগ দেওয়াকে একটি বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সর্বশেষ ঘোষণায়, বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প দুই সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেবেন।

ট্রাম্পের এই অবস্থান পরিবর্তন দেখে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, তার হয়তো কোনো স্পষ্ট কৌশল নেই, বরং নেতানিয়াহু তাকে যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।

পারমাণবিক কর্মসূচি ও সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি

ট্রাম্প কি ইরানের বিরুদ্ধে তার কঠোর বক্তব্য ব্যবহার করে তেহরানকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করতে বাধ্য করতে চাইছেন? যদি তাই হয়, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, তেহরানের বিরুদ্ধে তার ক্রমবর্ধমান যুদ্ধবাজ বক্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হতে পারে।

ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের সভাপতি জামাল আবদি বলেন, ট্রাম্প ইরানকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ-এর দাবি মেনে নিতে বাধ্য করার হুমকি দিয়ে ক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করতে পারেন। আবদি আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি নিজেকে একজন পাগল হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। এটি অপ্রত্যাশিত এবং এর মাধ্যমে তিনি এই কঠোর নীতির ওপর জোর দিতে পারেন, যা ইরান কয়েক দশক ধরে তাদের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলার জন্য মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যের আরেকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো, নেতানিয়াহু তাকে ইরানের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে বাধ্য করার জন্য প্ররোচিত করছেন।

ওমানে মার্কিন ও ইরানি কর্মকর্তাদের ষষ্ঠ দফা আলোচনার জন্য বৈঠকের মাত্র দুই দিন আগে, গত সপ্তাহে ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে বোমা হামলা অভিযান শুরু করে। ইসরাইলি হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প কূটনীতির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। ইসরাইলি হামলার প্রতি প্রাথমিক মার্কিন প্রতিক্রিয়া ছিল ওয়াশিংটন এই হামলায় জড়িত নয় বলে জোর দেওয়া। তবে পরবর্তী দিনগুলোতে ট্রাম্প ইসরায়েলি বোমা হামলার জন্য কৃতিত্ব নিতে দেখা গেছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ইরানের আকাশের ওপর এখন আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’

ইসরাইলি হামলায় ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা, সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা, তেল অবকাঠামো ধ্বংস, আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে (যার মধ্যে শীর্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তা ও অনেক বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন)। অন্যদিকে ইরান শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে পাল্টা আক্রমণ করেছে, যার ফলে কমপক্ষে ২৪ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে ও দেশজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ছড়িয়ে পড়েছে।

ইসরাইলি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তারা ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন। তবে এও উল্লেখ করেছেন যে, তাদের সামরিক অভিযান ইরানের শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটাতে পারে, যা তারা স্বাগত জানাবে। তবে, ব্যাপকভাবে তারা বিশ্বাস করেন, ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ফোরডো (যা পাহাড়ের ভেতর অবস্থিত), তা ধ্বংস করার জন্য ইসরাইলের মার্কিন সাহায্যের প্রয়োজন হবে।

‘বিপর্যয়কর’ পরিণতি ও বিশ্বব্যাপী প্রভাব

এদিকে ইরান যেকোনো মার্কিন আক্রমণের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই অঞ্চলে হাজার হাজার মার্কিন সেনা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হতে পারে। যুদ্ধ আরও তীব্র হলে ইরান উপসাগরে জাহাজ চলাচলের পথও ব্যাহত করতে পারে—যা বিশ্বব্যাপী জ্বালানির জন্য একটি প্রধান জীবনরেখা। ইরানের আইন প্রণেতারা ইতোমধ্যেই পরামর্শ দিয়েছেন, ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ২০ শতাংশ তেল প্রবাহিত হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি আঘাতে ইরানের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আগে মার্কিন যুদ্ধবাজদের সতর্ক থাকা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ইরান ৯ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ। সরকারের পতন হলে অভ্যন্তরীণ সংঘাত, বাস্তুচ্যুতি সংকট ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

অধিকার গোষ্ঠী ডনের নির্বাহী পরিচালক সারাহ লিয়া হুইটসন বলেছেন, ট্রাম্প যদি তার হুমকি দিয়ে ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করেন, কিংবা ইরানে যুদ্ধ বা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন না চান, তবুও এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল। হুইটসন আল জাজিরাকে বলেন, ‘ইরানের ওপর আক্রমণ কেবল একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধ নয়, বরং একটি সম্ভাব্য বিশ্বব্যাপী যুদ্ধে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি।’ তিনি যোগ করেন, ‘তাই, ট্রাম্পের অব্যাহত যুদ্ধবাজ ও শত্রুতাপূর্ণ বক্তব্য কেবল আগুনে ঘি ঢালছে।’


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top