বৃহঃস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১


দুই কোটি পরিবারকে মাসে ৮ হাজার টাকা করে দেবার প্রস্তাব সিপিডির


প্রকাশিত:
১৪ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২০

আপডেট:
৯ মে ২০২৪ ০৭:৪১

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)

দেশের প্রায় ২ কোটি দরিদ্র পরিবারকে দুই মাসের জন্য ৮ হাজার টাকা করে নগদ অর্থসহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। এতে সরকারের খরচ হবে ৩০ হাজার কোটি টাকারও কম। এতে ওই পরিবারগুলো উপকৃত হবার পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দেশের অর্থনীতিও বেশ চাঙ্গা হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

সোমবার ‘কোভিড-১৯-সরকার গৃহীত পদক্ষেপসমূহের কার্যকারিতা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও আয় নিরাপত্তা: সিপিডির প্রাথমিক বিশ্লেষণ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সিপিডি বলছে, সবশেষ খানা জরিপ অনুযায়ী ১০ হাজার টাকারও কম আয় রয়েছে এমন পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ। আর এসব পরিবারে জনসংখ্যা রয়েছে ৬ কোটি ৮৪ লাখ। আর ১১ হাজার টাকারও কম আয় রয়েছে এমন পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৯০ লাখ। আর এমন পরিবারের জনসংখ্যা ৭ কোটি ৫৭ লাখ। এসব পরিবারকে (৪ সদস্যের পরিবার) দুই মাসের জন্য ৮ হাজার টাকা করে (১৬ হাজার টাকা) দেওয়ার প্রস্তাব করেছে সিপিডি।

সিপিডি বলছে, ১ কোটি ৭০ লাখ পরিবারকে ৮ হাজার টাকা করে দেওয়া হলে সরকারের খরচ হবে ২৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা, যা জিডিপির শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। আর ১ কোটি ৯০ লাখ পরিবারকে সম পরিমাণ সহযোগিতা দেওয়া হলে সরকারের খরচ হবে ২৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ শতাংশ। দুই প্রস্তাবের যেকোনো একটি গ্রহণ করে সরকার দরিদ্র জনগেষ্ঠীকে সহযোগিতা করতে পারে।

সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এ টাকা দুই মাসে দেওয়ার প্রস্তাব করছি আমরা। দুই মাসে ১৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে প্রতি পরিবারকে। যেখানে প্রতি সপ্তাহ ভিত্তিক দেওয়া হতে পারে। মানে সপ্তাহে ২ হাজার টাকা করে আট সপ্তাহেও দেওয়া যেতে পারে। এজন্য সরকারকে জেলা উপজেলা বা ইউনিয়ভিত্তিক কমিটি করতে হবে।

প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এখানে শুধু পর্যালোচনাই করা হয়েছে তা নয়, একটি প্রস্তাবনাও দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়র কথা বলা হয়েছে। ১ কোটি ৭০ লাখ পরিবারকে (পরিবার প্রতি চার সদস্য) ৮ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হল ৬ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ উপকারভোগী হবে। আর ১ কোটি ৯০ লাখ পরিবারকে দেওয়া হলে ৭ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। যে অর্থ খরচ হবে তা জিডিপির হিসাবে শতকরা শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ থেকে শতকরা ১ শতাংশ।

এগুলো যদি হতদরিদ্র মানুষকে দেওয়া হয় অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রে একটা প্রভাব পড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্প চাঙ্গা হবে এবং চাহিদা চাঙ্গা হওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে একটা চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে। বড় ব্যবসায়ী ও সেবা খাতের জন্যই কিন্তু ৩০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আরও ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা কিন্তু খুবই জরুরি। বিরাট জনগোষ্ঠীর জন্য এটা খুবই প্রয়োজন, সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে এটা কাভার করবে। আমরা জেনেছি সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করবেন, সেখানে আমাদের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে আমরা আশাবাদী।

এদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে সরকার যে বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্টির জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই বলেও মন্তব্য করছে সিপিডি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২৫ মার্চ রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষাণা করেছে। যার সুদের হার দুই শাতাংশ। যেটা এ খাতের প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারবে। ৫ এপ্রিল সরকার আরও চারটি প্রণোদণা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন যার পরিমাণ করে ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার। সর্বশেষ কৃষি খাতের জন্য ৫হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে চার শতাংশ সুদের হারে। যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এর বেশিরভাগই ব্যাংক নির্ভর। বলা হয়েছে ব্যাংক ও ক্লাইন্টের সম্পর্কের ভিত্তিতে এ প্রণোদনা দেওয়া হবে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বলার অপেক্ষা রাখেনা এই প্রণোদনায় প্রান্তিক জনগোষ্টির জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ নেই। যদিও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ঘোষণায় বালেছেন যে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে। ভিজিএফ, ভিজিডির মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ করা হবে, খোলা বাজারে চাল বিক্রি করা হবে। বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এবং যারা অনানুষ্ঠানিক খাতে আছে, দিনমজুর রিকশাওয়ালা ইত্যাদি তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সহায়তা এবং অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, যে প্রণোদনা ঘোষাণা করা হয়েছে এটার সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা, ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো যাতে এ প্রণোদনা পায়। ভার্চুয়াল এই ব্রিফিংয়ে আরও সংযুক্ত ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

 


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top