শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছে ফারদিন : ডিবিপ্রধান


প্রকাশিত:
১৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:১৯

আপডেট:
১৮ মে ২০২৪ ১৭:৩৪

ছবি সংগৃহিত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধারের পর ধারণা করা হচ্ছিল তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার। তবে ডিবির তদন্তে বের হয়ে এসেছে যে, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। হতাশা থেকে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি ডিবির।

ফারদিন হত্যা মামলাটি ৩৮ দিন তদন্ত করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, নিখোঁজ হওয়ার আগে ফারদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একা একাই ঘুরে বেড়িয়েছেন। ফারদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি, হতাশা থেকে তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

এদিকে ডিবির দাবি করা তথ্য বা তদন্ত আসলেই সঠিক কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) ডিবি কার্যালয়ে আসেন বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থী। প্রায় তিন ঘণ্টা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ শেষে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, ডিবির তদন্তে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। ডিবি কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত দেখে এগুলো প্রাসঙ্গিক বলে দাবি করেন তারা।

এরপর মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনাটি আমরা তদন্ত করেছি। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আমরা তার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলেছি। বান্ধবী বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ব্যাখ্যা দিয়েছি। কিন্তু তার সঙ্গে কেউ ছিল না, একা একাই বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন।

যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর একপাশে ফারদিন নেমে যায়। কিন্তু সে চনপাড়ার দিকে যায়নি, সেখানে কোনও ঘটনাও ঘটেনি। ঘটনার ৩৮ দিন তদন্ত শেষে এটিকে আমরা সুইসাইডাল ঘটনা বলেছি। এ বিষয়ে বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থী এসে তিন ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা তার পরিবার, বন্ধু-আত্মীয়দের বলেছি ফারদিন আত্মহত্যা করেছে।

ডিবিপ্রধান বলেন, ফারদিন সেদিন রাতে বাবুবাজার ব্রিজ ও সুলতানা কামাল ব্রিজে যান। অথচ গত ২ বছরেও সে এসব এলাকায় যায়নি। ফারদিন ২ বছরে ৫২২টি নম্বরে কথা বলেছে, আমরা সবার কাছে খোঁজখবর নিয়েছি।

ফারদিন বিভিন্ন নোবেল বই পড়তেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় হতাশার কথা বলেছেন। এক বান্ধবীকে লিখেছেন ‌‘৩০ বছরের বেশি কারও বাঁচার দরকার নাই’ বা ‘৩০ বছরের বেশি কোনও মানুষের বাঁচার প্রয়োজন নেই’।

আবার কাউকে লিখেছেন ‘যদি মারা যাই, বন্ধু সাজ্জাদ কষ্ট পাবে।’ আরেকজনকে লিখেছেন ‘কোনও একদিন শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবা কেউ আত্মহত্যা করেছে’ বা এমন একটি আত্মহত্যার কথা ফারদিন লিখেছিলেন। ফারদিনও কিন্তু শুক্রবারই আত্মহত্যা করেছেন।

তিনি বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে তার কথা বলা দেখে মনে হয়েছে ফারদিন হতাশায় ভুগছিলেন। তাছাড়া ফারদিনের মরদেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না, ধস্তাধস্তির আলামত নেই। তার মোবাইল-টাকা পকেটে ছিল। হাতে ঘড়ি ছিল, কোনও কিছু খোয়া যায়নি। বুয়েটের ৪০ শিক্ষার্থীও এসব আলামত দেখে একমত পোষণ করেছেন।

ডিবিপ্রধান বলেন, ফারদিন আত্মকেন্দ্রিক ছিলেন। তার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিল, কিন্তু কাউকে কিছু বলেনি। ফারদিন লিখেছে ৯৫ ভাগ মানুষের জীবন পরিবার দ্বারা সীমাবদ্ধ। হয়তো পরিবার তাকে বাসায় থাকতে বলতেন, কিন্তু তিনি চাচ্ছিলেন না। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাই এখানে হত্যার কোনও লক্ষণ নেই। যেসব ব্রিজে সে গিয়েছে সেদিন রাতে এর আগে ২ বছরেও সে সেসব এলাকায় যায়নি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গতকালই তার পরিবারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। কোনও মানুষ যদি দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যা করে সেখানে তো সাক্ষি থাকে না। পারিপার্শ্বিক বিষয় দেখে মনে হয়েছে, তিনি আত্মহত্যা করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সব মিলিয়েই আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি।

কারাগারে বন্দি ফারদিনের বান্ধবী বুশরার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, এটি আদালতের বিষয়। আমরা আমাদের রিপোর্টে জানিয়ে দেবো তার সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি।


সম্পর্কিত বিষয়:

বুয়েট

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top