শনিবার, ২রা আগস্ট ২০২৫, ১৭ই শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ব্যায়াম


প্রকাশিত:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:২০

আপডেট:
২ আগস্ট ২০২৫ ০০:০১

ছবি-সংগৃহীত

রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা বা ইমিউনিটি শক্তিশালী করা—এই বাক্য বা কথার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানি না এই রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কারা কাজ করে এবং কীভাবে সেই ক্ষমতা বাড়ানো যায়। এই ঘটনাকে খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। ধরুন, আমাদের বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ বাস করে। কৃষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, ইঞ্জিনিয়ারসহ নানা ধরনের পেশায় থেকে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এই ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষার বিষয় যখন আসে, তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি ইত্যাদি সেবা সংস্থার কথা আসে। অর্থাৎ প্রতিরক্ষার জন্য বা বাইরের শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সব মানুষ কিন্তু কাজ করছে না। কিছু বিশেষ পেশার মানুষই এ ক্ষেত্রে কর্মরত। আমাদের প্রত্যেকের শরীরটাও এমন।

আমাদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত পুরো শরীর কোষ দিয়ে গঠিত। কিন্তু বাইরের জীবাণু থেকে শরীরকে রক্ষার জন্য কিন্তু সব কোষ কাজ করে না। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ বা জীবাণুর আক্রমণ ঠেকানার জন্য যে কোষগুলো কাজ করে তাদের নাম শ্বেত রক্তকণিকা বা হোয়াইট ব্লাড সেল; সংক্ষেপে ডবলিউবিসি। শরীরে যখনই অবাঞ্ছিত বস্তু বা জীবাণু প্রবেশ করে, তখনই ডবলিউবিসি ওই জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। এটা কিন্তু প্রতিনিয়ত অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টাই চলছে; কারণ নাক, কান, চোখ মুখের মাধ্যমে বা কোথাও কেটে গেলে সেখান দিয়ে প্রতিনিয়ত জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। যখন সেই জীবাণু শক্তির তুলনায় ডাবলিউবিসির সংখ্যা ও শক্তি কম থাকে, তখনই আমরা রোগাক্রান্ত হই।

অতএব শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা পরিমিত থাকলে এবং ভালোভাবে কাজ করার শক্তি থাকলে আমরা সুস্থ থাকব। বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা পরিমিত ও সর্বাধিক শক্তির জন্য আমাদের তিনটি জিনিস ঠিক রাখা জরুরি।

১. সুষম খাবার, ২. প্রতিদিন ব্যায়াম করা, ৩. মানসিক সুস্থতা বা মানসিক অবস্থা ভালো রাখা

শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য প্রয়োজন মিনারেল ও ভিটামিন সমৃদ্ধ সুষম খাবার। জিংক আমাদের শ্বেত রক্ত কণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় জিংকযুক্ত খাবার রাখা প্রয়োজন। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন সিসহ অন্যান্য ভিটামিনের ভূমিকা রয়েছে।

এর সঙ্গে অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়ামের প্রয়োজন। অবশ্য ব্যায়াম করার কথা বলতেই আমাদের মাথায় জিমে যাওয়া বা যোগাসন করার কথা আসে। ব্যাপারটা আসলে এই দুটোতে সীমাবদ্ধ না। বরং আমরা জেনে নিতে পারি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বা ঠিক রাখতে আমাদের করণীয় ব্যায়াম সম্পর্কে।

হাঁটা

সবচেয়ে সহজ ব্যায়ামের একটি হলো প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটা; এটা আপনি পার্কে, পরিষ্কার রাস্তায় বা বাসার ছাদেও করতে পারেন। তবে এই হাঁটা যদি অফিসে বা কোনো কাজে যাওয়ার হাঁটা হয়, তবে সেটা ব্যায়ামের মধ্যে পড়বে না। এবং আপনি তেমন কোনো উপকারও পাবেন না। প্রতিদিন নিয়ম করে মিনিট তিরিশ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু দ্রুতগতিতেই হাঁটতে হবে আলাদা সময় করে।

দৌড়ানো

প্রাচীনকাল থেকে দৌড়ানো খুবই পরিচিত একটি ব্যায়াম। প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিট বা তার চেয়ে বেশি সময় নিয়েও আপনি ধীরগতিতে দৌড়ানোর মাধ্যমে ব্যায়ামের কাজটি সেরে নিতে পারেন। দৌড়ানোর সময় শরীরের বেশির ভাগ ভর যাতে পায়ের গোড়ালিতে না থেকে পায়ের পাতার ওপর পড়ে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় গোড়ালি, হাঁটু বা মেরুদণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হতে পারে।

সাঁতার

জনপ্রিয় ব্যায়ামগুলোর মধ্যে সাঁতার অন্যতম। শরীরের প্রায় প্রতিটি অংশের ব্যায়াম হয় সাঁতারের মাধ্যমে। প্রতিদিন সম্ভব না হলেও সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন সাঁতারের অভ্যাস করতে পারেন। শারীরিক কসরতের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের উপরিভাগের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্যও সাঁতার গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা গ্রামেগঞ্জে থাকেন, তাঁদের জন্য জলাশয় সহজলভ্য হলেও বড় বড় শহরগুলোতে সাঁতার কাটার মতো জলাশয় বা সুইমিংপুলেরও কমতি রয়েছে। এরপরও যেখানেই সুযোগ পাওয়া যায়, সাঁতারটা শিখে নেওয়া উচিত।

লাফ দড়ি

ঘরের বাইরে বেরোনোর সুযোগ কম থাকলে আপনি খুব সহজেই আপনার ঘরের মধ্যে এ ব্যায়ামটি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে লাফানোর সময় পায়ের গোড়ালি যেন কোনো অবস্থাতেই মাটিতে আঘাত না লাগে। সে ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। ক্লান্ত হয়ে গেলে বা পায়ের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে গেলে ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নিয়ে কমপক্ষে ১৫ মিনিট অনুশীলন করলে সুফল পাওয়া যাবে।

খালি হাতে ব্যায়াম

সাঁতার কাটা, জিমে যাওয়া বা দৌড়ানোর জন্য বাইরে বের হওয়ার অবস্থা বা সুযোগ না থাকলে ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরনের ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন। যেমন ওঠবস, বুক ডন (পুশ আপ) বেলি বা সিট আপ, জাম্পিং জ্যাক, বারে ঝোলা বা পুল আপসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন। এসব ব্যায়াম ওজনও ঠিক রাখে, শরীর ঝরঝরে করে এবং কাজকর্মে গতি আনে।

অ্যারোবিক্স ও জুমবা

উঁচু তালের বাজনার সঙ্গে নির্দিষ্ট প্যাটার্নের ব্যায়াম করাই হলো অ্যারোবিক্স। বিভিন্ন গানের সঙ্গে শারীরিক কসরতের জন্য নাচা হলো জুমবা অ্যারোবিক্স। অ্যারোবিক্সে প্রশিক্ষকের ধারাবাহিক মৌখিক নির্দেশনা থাকে; কিন্তু জুমবায় তা হয় না। বরং এ ক্ষেত্রে প্রশিক্ষক বিভিন্ন আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। উভয় ব্যায়ামই বর্তমান প্রজন্মের কাছে, বিশেষ করে নারীদের কাছে জনপ্রিয়। ঢাকার জিমগুলোতে এখন এ দুটো বিষয় অনুশীলনের ব্যবস্থা আছে। শরীর ও মন চাঙা করতে ও ওজন কমাতে উভয় ব্যায়াম বেশ কার্যকর।

খেলাধুলা

বিভিন্ন খেলাধুলা যেমন ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল, ভলিবল, হকি, কাবাডি, বাস্কেটবল প্রভৃতি খেলাধুলার মাধ্যমেও আমাদের শরীর ও মন ভালো রাখা যায়। এতে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাও শক্তিশালী হয়। খেলাধুলার সঙ্গে জড়িতদের মনও প্রফুল্ল থাকে।

মার্শাল আর্ট

বিভিন্ন ধরনের মার্শাল আর্ট যেমন কারাতে, জুডো, কুংফু, তায়কোয়ান্দো, ফেন্সিং, কিক বক্সিং, বক্সিং প্রভৃতির মাধ্যমে আমরা যেমন আত্মরক্ষার কৌশল শিখি, তেমনি আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়াতে পারি। যাঁরা মার্শাল আর্ট শেখেন, তাঁরা অন্যদের তুলনায় অনেক আত্মবিশ্বাসীও হয়ে ওঠেন।

জিম

মাংশপেশি গঠন এবং সুঠাম শারীরিক গড়নের জন্য জিম খুবই জনপ্রিয়। শারীরিক গঠন ঠিক করা, বডি টোনিং, ওজন কমানো, ওজন বাড়ানো-সাধারণত এগুলোর জন্য জিম বর্তমানে বিভিন্ন বয়সের মানুষের কাছে খুব পরিচিত। সপ্তাহে ৩-৬ দিন নিয়মিত জিমে ব্যায়াম করার মাধ্যমে আমাদের ক্যালরি হ্রাস বা ক্ষয় করতে পারি। শারীরিক গঠন সুন্দর হয়। তবে জিম করার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

যোগব্যায়াম

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সব ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে যেটি সবার প্রথমে আসে সেটি হলো যোগব্যায়াম। কারণ যোগব্যায়ামের মাধ্যমে একই সঙ্গে শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। যোগব্যায়ামে আমাদের শুধু হাত, পা, পেটের মাংসপেশির ব্যায়ামই হয় না, আমাদের শরীরের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের (যেমন মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃত, পাকস্থলী, কিডনি প্রভৃতি) বলতে গেলে সব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অংশের ব্যায়াম হয়। যোগব্যায়ামকে এখন শুধু ব্যায়াম বললে ভুল হবে; বরং এটি একটি চিকিত্সাপদ্ধতিও বটে। বাংলাদেশের বিভাগীয় শহর বাদে অন্য শহরগুলোতে যোগব্যায়াম করার মতো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তবে ইউটিউব বা ফেসবুকে জনপ্রিয় চ্যানেলগুলো দেখেও আপনারা ঘরে বসে যোগব্যায়াম শিখতে পারেন।

পরিশেষে এটাই বলব, হাঁটা, দৌড়, জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা, যোগব্যায়াম যেটাই সম্ভব করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট আমাদের শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ধারণে অনুপ্রাণিত করবে। বিশেষত বর্তমানের এই সময়ে। কারণ করোনার জন্য আমাদের প্রতিদিনের রুটিনে নানা পরিবর্তন এসেছে। অনেক কিছুই ওলটপালট হয়ে গেছে। কেবল শারীরিক নয়, মানসিক চাপও যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীর ও মনে। ফলে ব্যায়াম আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

লেখক: বাপ্পা শান্তনু, যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক


সম্পর্কিত বিষয়:

যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top