মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৪শে বৈশাখ ১৪৩১


মেডিটেশন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক


প্রকাশিত:
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:৪৩

আপডেট:
৭ মে ২০২৪ ১৮:৩৪

 ছবি : সংগৃহীত

ডায়াবেটিস বর্তমানে একটি বড় স্বাস্থ্য উদ্বেগের কারণ। কারও যদি একবার এই রোগ হয়, তাহলে তা জীবনভর ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসাব্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া ডায়াবেটিস থেকে অন্যান্য অনেক গুরুতর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। ডায়াবেটিসকে বলা হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর প্লেগ।

বিশ্বব্যাপী দিনকে দিন বেড়েই চলছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। আইডিএফ ডায়াবেটিস এ্যাটলাস দশম সংস্করণ ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ২০-৭৯ বছর বয়সী প্রায় ৫৩৭ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট)-এর জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগী ১ কোটি ১০ লাখ। দেশে মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস এবং প্রতি ১০ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দেশে প্রতিবছর ডায়াবেটিস চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয় প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। আগাম সতর্কতায় ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮ (বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এ্যান্ড হেলথ সার্ভে- বিডিএইচএস) এর প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৯ হাজার ৫০০ পরিবারের ওপর জরিপটি করা হয়েছে। জরিপে বলা হয়, ২০৪০ সালের মধ্যে ৩৫ বা তদুর্ধ বয়সের ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে এক কোটি ৬০ লাখে দাঁড়াতে পারে।

ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ ভুল জীবনধারা ও ভ্রান্ত জীবনদৃষ্টি। কাজেই সুস্থ ও পরিকল্পিত জীবনাচার গড়ে তুলতে পারলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধই শুধু নয়, নিরাময়ও সম্ভব। লাইফস্টাইল এক্সপার্টরা এখন এটাই বলছেন। তাই সচেতনতার প্রথম এবং অন্যতম ধাপ হলো সুস্থ জীবনাচার এবং মেডিটেশন।

জীবনাচার বদলে ডায়াবেটিস নিরাময় করা যায়- এই বিষয়ে প্রথম গবেষণা করেন আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিভাগের এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. নিল বার্নার্ড ও তার টিম। রোগীর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারে পরিবর্তন এনে তারা ডায়াবেটিস নিরাময় করতে সক্ষম হন। নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি তাদের পরামর্শ হলো সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন রোজা/উপবাস/ফাস্টিং, দৈনিক একঘণ্টা ব্যায়াম, ৩/৫ দফা প্রাণায়াম এবং দুই বেলা মেডিটেশন।একজন ডায়াবেটিস রোগী নিয়মিত মেডিটেশন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, তার শরীরের ভেতরে প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় থেকে টপ টপ করে ইনসুলিনের প্রবাহ বাড়ছে, তারপর রক্তের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, রক্তে সুগারের মাত্রা কমছে। কিছুদিন এভাবে মেডিটেশন করলে বা মেডিটেশনের মাধ্যমে ব্রেইনে ইমেজ দিতে থাকলে দেখা যায় যে, বাস্তবেই তার ইনসুলিন প্রবাহ স্বাভাবিক হতে থাকে।

চমৎকারভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকে তার ডায়াবেটিস। অবশ্য এর সঙ্গে অন্যান্য পালনীয় বিষয়গুলোও মেনে চললে দ্রুত নিরাময় হবে। এমনই একজন মেডিটেশন চর্চাকারীর ডায়াবেটিসের মাত্রা ছিল ৩০ থেকে ৩৫। তিন মাস নিয়মিত মেডিটেশন করার পরে তিনি দেখলেন, তার ডায়বেটিস এখন ৫ থেকে সাড়ে ৫-এর মধ্যে। এভাবে আমাদের দেশেও সুস্থ জীবনাচার এবং মেডিটেশন চর্চা করে ডায়াবেটিসসহ ৭৫ ভাগ মনোদৈহিক রোগ থেকে নিরাময় লাভ করে ভাল আছেন হাজারো রোগী।

গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত মেডিটেশন অত্যন্ত ফলপ্রসূ। ২০০৮ সালে থাইল্যান্ডের বিজ্ঞানী চাইওপানোন্ট ৫০ জন টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর ওপর গবেষণা করেন। সকালে নাশতার পর এই রোগীদের তিনি মেডিটেশন করান। দেখা গেল, মেডিটেশন এবং পরিমিত জীবন পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক আছে।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ন্যাশনাল লাইব্রেরী অব মেডিসিনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয় (মে-আগস্ট ২০১৮)। গবেষণায় ৬০ জন রোগীকে দুই ভাগে ভাগ করে ছয় মাসব্যাপী একদলকে মেডিটেশন করানো হয় এবং অন্য দলকে করানো হয় না। গবেষণা শেষে দেখা যায়, যে দল মেডিটেশন করেছে তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এবং ফাস্টিং সেরাম ইনসুলিনের মাত্রা ছয় মাস আগের মাত্রার চেয়ে অনেক কম।

এমনকি এই গবেষণা এটাও প্রমাণ করে যে, মেডিটেশন হতাশা, দুশ্চিন্তা ও নানারকম মানসিক অস্থিরতা ও চাপ কমায়। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ার এগুলোও কিন্তু উল্লেখযোগ্য কারণ।


সম্পর্কিত বিষয়:

ডায়াবেটিস

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top