ভারতের মন্দির নগরীতে শত শত নারীকে ধর্ষণের পর মাটিচাপার অভিযোগ
প্রকাশিত:
২৩ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৫৬
আপডেট:
২৪ আগস্ট ২০২৫ ০০:১২

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের ক্ষুদ্র ধর্মীয় শহর 'ধর্মস্থল'। হিন্দুদের পবিত্র ত্রিমূর্তীর শিবের অবতার মঞ্জুনাথ স্বামীর শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরের আবাসস্থল এই শহর। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী ভ্রমণ করেন।
তবে মনোরম এই ধর্মীয় শহরের এক রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন প্রাচীন মন্দিরটির একজন কর্মী। তিনি দাবি করেছেন, হত্যার আগে ধর্ষণের শিকার শত শত নারীর মৃতদেহ তাকে দিয়ে মাটিচাপা দেওয়াতে বাধ্য করা হয়েছে। বিস্ফোরক এই তথ্য দেওয়া ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, এমন ঘটনা নিয়ে রাজ্যটিতে রাজনৈতিক বিরোধের ফলে সরকার ওই ব্যক্তির অভিযোগ যাচাই করার জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এসআইটি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, 'মিথ্যা কথা বলার জন্য' ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
জুলাইয়ের গোড়ার দিকে মধ্যবয়সী ব্যক্তিটি পুলিশের কাছে শত শত নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা সংশ্লিষ্ট একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর তার বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য তাকে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হয়। তার পরিচয় এখনো গোপন রাখা হয়েছে। এরপর থেকে তার চেহারাও গোপন রাখা হয়েছে। তাকে সম্পূর্ণ কালো পোশাক পরিয়ে জনসমক্ষে হাজির করা হয় - যার মধ্যে একটি হুড এবং একটি মুখোশও রয়েছে।
নতুন করে তাকে নিয়ে তদন্ত হলেও বিবিসি পুলিশে দায়ের করা আগের অভিযোগটি দেখেছে। এতে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সুপরিচিত ওই মন্দিরে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন, তাকে শত শত নারী এবং তরুণীদের মৃতদেহ কবর দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এসব মেয়েদের নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি পাঁচটি ঘটনার বর্ণনা দেন। সুনির্দিষ্টভাবে ঘটনাও উল্লেখ করেন এবং বলেন, আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। লোকটির অভিযোগ, ভুক্তভোগীদের মধ্যে কয়েকজন নাবালিকা ছিল।
তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। ফিরে এসে তার ক্ষিপ্ত বিবেককে শান্ত করার জন্য ঘটনাগুলো নিয়ে কথা বলেছেন।
এসব ঘটনায় দায়ী হিসেবে মন্দিরের প্রশাসন এবং কর্মীদের দায়ী করেছেন তিনি। মন্দিরের প্রধান এই অভিযোগগুলোকে 'মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন' বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এদিকে, তাকে যখন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন প্রমাণ হিসেবে ব্যাগ থেকে একটি মানুষের খুলি বের করে দেখান। তিনি বলেন, এটি একটি মৃতদেহের, যাকে তিনি মাটিচাপা দিয়েলেন এবং সম্প্রতি ঘটনাস্থল থেকে এটি নিয়ে আসা হয়েছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) তাকে গ্রেপ্তারের পর রাজ্যের ভেতরে এবং বাইরে ঘটনাটি আলোড়ন তুলেছে। লোকজন তার গ্রেপ্তারকে 'ঘটনার বিশাল মোড়' হিসেবে দেখছেন।
অভিযোগগুলো মিডিয়ায় ব্যাপক কভারেজ পেয়েছে। রাজ্যের মহিলা কমিশনের উদ্বেগ জানিয়েছে। এরপর সরকার তদন্ত শুরু করে এবং 'SIT' গঠন করে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তদন্ত দলটি ধর্মস্থল এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন স্থানে খননকাজ চালিয়েছে লোকটির দাবি যাচাই করার জন্য। তিনি প্রাথমিকভাবে ১৩টি স্থান চিহ্নিত করেছিলেন। এর মধ্যে কয়েকটি ঘন পাতায় ঢাকা এবং বিষাক্ত সাপে ভরা দুর্গম এলাকায় অবস্থিত।
এসআইটির সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, দুটি স্থানে একটি মাথার খুলি এবং প্রায় ১০০টি হাড়ের টুকরোসহ মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। সেগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এগুলো কার, তা স্পষ্ট নয়।
এই অভিযোগগুলো মন্দিরের বংশগত প্রশাসক - প্রভাবশালী হেগড়ে পরিবারের ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মন্দিরের প্রধান প্রশাসক বীরেন্দ্র হেগড়ে (ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের একজন সাংসদ) বলেন, 'ধর্মস্থল এবং এর আশেপাশে ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগের তদন্তের জন্য SIT নিয়োগের জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষ সরকারকে ধন্যবাদ জানায়। আমরা ইতোমধ্যেই তদন্তের জন্য পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। আমাদের বিচার বিভাগ, তদন্ত সংস্থা এবং ভারতের সংবিধানের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
পরে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রাক্তন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর দাবিকে 'অসম্ভব' বলে অভিহিত করেন। হেগড়ে বলেন, 'চিরকালের জন্য সত্য বেরিয়ে আসা উচিত।'
এই অভিযোগের ফলে একটি বিশাল রাজনৈতিক বিতর্কও তৈরি হয়েছে - রাজ্য বিধানসভার সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বিজেপি সদস্যরা এটিকে লাখ লাখ ভক্তের একটি হিন্দু ধর্মীয় স্থানের বিরুদ্ধে 'কলঙ্কজনক প্রচারণা' বলে অভিহিত করেছেন।
রাজ্যের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর বলেছেন, কাউকে রক্ষা করার বা কাউকে অপমান করার কোনো ইচ্ছা রাজ্য সরকারের নেই। তবে সত্য কি বেরিয়ে আসা উচিত নয়?
তিনি বলেন, 'যদি কিছু না পাওয়া যায়, তাহলে ধর্মস্থলের মর্যাদা আরও শক্তিশালী হবে। যদি কিছু বেরিয়ে আসে, তাহলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।
এসএন/রুপা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: