রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


এক মাস যুদ্ধবিরতির পথে এগোচ্ছে ইসরায়েল-হামাস


প্রকাশিত:
২৪ জানুয়ারী ২০২৪ ১১:৪১

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ২০:১৬

ফাইল ছবি

গাজা উপত্যকায় এক মাসের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পথে অনেকটা অগ্রসর হয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এবং গাজা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস; কিন্তু সেখানে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিয়ে উভয়পক্ষের মতপার্থক্য এখনও দূর হয়নি।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলার মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের শুরু থেকে মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে কাতার, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিসর। এই তিন দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামাসের হাতে থাকা ১৩০ জনেরও বেশি জিম্মি ও ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, গাজায় সহিংসতা স্থগিত করা এবং উপত্যকায় ত্রাণের সরবরাহ আরও বাড়াতে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এবং হামাস— উভয়ই এক মাসের ‍যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, গত ১ ডিসেম্বর গাজায় মানবিক বিরতি শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যাবতীয় কূটনৈতিক তৎপরতা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল। পরে ২৮ মার্চ কাতার ও মিসরের মাধ্যমে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বরাবর একটি প্রস্তাব পাঠায় হামাস। প্রস্তাবে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা নিজেদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত রয়েছে; তবে তার বিনিময়ে ইসরায়েলকে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, উপত্যকায় ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ করতে দেওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে দিতে হবে।

কিন্তু হামাসের এই প্রস্তাবে সম্মত হয়নি ইসরায়েল। মধ্যস্থতাকারী একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই অসম্মতির প্রধান কারণ হামাসের এই ‘প্যাকেজ চুক্তি’। যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এই চুক্তিতে সম্মতি প্রদানের পরিবর্তে এ ইস্যুতে আলোচনা চালিযে যেতে আগ্রহী।

এদিকে ইসরায়েল অসম্মতি জানানোর পর হামাসও আর এ ইস্যুতে অগ্রসর হয়নি। ‘গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না করলে জিম্মিদের মুক্তি নয়’— এই অবস্থানে দীর্ঘসময় অনড় ছিল এই গোষ্ঠী।

তবে পরে কাতার, মিসর এবং ওয়াশিংটনের চাপে এক মাসের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় হামাস। তবে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারীদের নিশ্চয়তা চাওয়া হয় যে— এই বিরতির পর গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, কোনো না কোনোভাবে হামাস সেই নিশ্চয়তা পেয়েছে এবং তার ফলাফল এক মাসের যুদ্ধবিরতিতে এই গোষ্ঠীটির প্রাথমিক সম্মতি। হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গাজা উপত্যাকায় আগ্রাসন বন্ধ এবং উপত্যকা থেকে দখলদার বাহিনীকে স্থায়ীভাবে প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দেবে— এমন যে কোনো চুক্তি-উদ্যোগ বা প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সামরিক-বেসামরিক ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকসহ ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জন ইসরায়েলি এবং অন্যান্য দেশের নাগরিককে।

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে সেদিন প্রথম একদিনে এতজন মানুষের হত্যা দেখেছে ইসরায়েল। অভূতপূর্ব সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এবং তার এক সপ্তাহ পর বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে গত প্রায় সাড়ে চার মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধসে যাওয়া বিভিন্ন ভবনের ধ্বংস্তূপের নীচে এখন ও চাপা পড়ে আছেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ।

গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘোষিত এক মানবিক বিরতির সাত দিনে মোট ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বাকি ১৩২ জন এখনও তাদের হাতে আটক রয়েছে।

চাপে আছেন নেতানিয়াহু-

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অবশ্য অবশ্য যুদ্ধের শুরু থেকেই বলে আসছেন যে, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বসের আগ পর্যন্ত এই অভিযান চলবে, তবে বর্তমানে এই ইস্যুতে বেশ চাপে রয়েছেন তিনি। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক— উভয় দিক থেকেই চাপ বাড়ছে তার ওপর।

অভ্যন্তরীণ চাপে থাকার প্রধান কারণ— হামাসের হাতে থাকা অবশিষ্ট জিম্মি এবং তার পরিবারের স্বজনরা। নেতানিয়াহু যদিও বলছেন, যে জিম্মিদের মুক্ত করতে গাজায় অভিযান হচ্ছে তবে সেনা অভিযানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো জিম্মিকে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা ও গোলায় নিহত হয়েছেন কয়েকজন আটকে থাকা জিম্মি।

জিম্মিদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা জিম্মিদের ফিরে আসা দাবি জানাচ্ছেন। দাবি আদায়ে দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছেন তারা, কিন্তু যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা তাদের সে দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ।

এ পরিস্থিতিতে কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের অধিবেশনে হামলাও চালিয়েছন জিম্মিদের স্বজনরা।

এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমাবর্ষণে প্রতিদিন গাজায় নিহত হচ্ছেন শত শত মানুষ। নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২৫ হাজার। বিশ্বের দেশে দেশে ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ দুই মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ গাজায় বেসামরিকদের হতাহত হ্রাস করার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে।

আবার যুদ্ধে যে ইসরায়েলি বাহিনী কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাচ্ছে— এমনও নয়। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত প্রায় চার মাসের যুদ্ধে হামসের মাত্র এক পঞ্চমাংশ যোদ্ধাকে শেষ করতে পেরেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এসব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে নেতানিয়াহু বেশ চাপে রয়েছেন।

ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র এইলন লেভি অবশ্য মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, জিম্মিদের মুক্তির জন্য কাজ করছে ইসরায়েল, এমন কোনো চুক্তিতে সরকার যাবে না, যেটি হামাসকে গাজায় ফের স্থায়ী হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে।

তবে এই বক্তব্যকে চুড়ান্ত মনে করার কিছু নেই। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে এই যুদ্ধের ভবিষ্যত অনেকাংশে নির্ভর করছে কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top