সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


করোনা পরীক্ষায় নতুন চমক ভারতের ‘ফেলুদা’


প্রকাশিত:
৫ অক্টোবর ২০২০ ২১:৩৬

আপডেট:
৫ অক্টোবর ২০২০ ২১:৪৭

করোনাভাইরাস শনাক্তে কাগজ-ভিত্তিক পরীক্ষাপদ্ধতি ফেলুদা কিট। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ভারতের একদল বিজ্ঞানী করোনাভাইরাস শনাক্তে কাগজ-ভিত্তিক পরীক্ষাপদ্ধতি উদ্ভাবন করছেন। এতে করোনা পরীক্ষার ফল খুব দ্রুত পাওয়া সম্ভব বলছেন বিজ্ঞানীরা। এটি অনেকটা গর্ভধারণের পরীক্ষার মতো। খরচও খুব কম। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের লেখা জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদার নামে এই কিটের নামকরণ করা হয়েছে। ক্রিসপার নামের জিনভিত্তিক এক প্রযুক্তির সহায়তায় এই পরীক্ষা করা হবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফেলুদা কিটের ফলাফল পাওয়া যাবে এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে। খরচ পড়বে ৫০০ রুপি। অর্থাৎ বর্তমান বাজারমূল্যে বাংলাদেশের ৫৭৮ টাকার মতো।

ফেলুদা কিটটি ভারতের টাটা কোম্পানি তৈরি করবে। এটি সম্ভবত বিশ্বের প্রথম কাগজ ভিত্তিক কোভিড পরীক্ষাপদ্ধতি হবে। আর এটি বাজারে সহজলভ্য হবে।

ভারত সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা অধ্যাপক কে বিজয় রাঘবান বিবিসিকে বলেন, এটি সহজ, সুনির্দিষ্ট, বিশ্বাসযোগ্য ও কম খরচের পরীক্ষা। দিল্লিভিত্তিক সিএসআইআর-ইন্সটিটিউট অফ জিনোমিক্স অ্যান্ড ইনটিগ্রেটিভ বায়োলজির (আইজিআইবি) গবেষকেরা ফেলুদা কিট নিয়ে গবেষণা করেন। বেসরকারি পরীক্ষাগারগুলোতেও গবেষণা চলে। প্রায় দুই হাজার রোগীর নমুনা নিয়ে গবেষণা করা হয়। তাদের মধ্যে আগেই করোনা শনাক্ত হয়েছে এমন একজনও ছিলেন।

গবেষকরা দেখেন, নতুন পরীক্ষায় ৯৬ ভাগ সংবেদনশীলতা ও ৯৮ ভাগ যথার্থতা রয়েছে। কোনো পরীক্ষার যথার্থতা দুটি অনুপাতের ওপর নির্ভর করে। উচ্চমাত্রায় সংবেদনশীল পরীক্ষা করোনায় সংক্রমিত এমন বেশিরভাগ রোগীকে শনাক্ত করবে।

উচ্চমাত্রায় নির্ভুল পরীক্ষা যারা করোনায় সংক্রমিত হননি তাদের সবাইকে বাদ দেবে।

বাংলাদেশের রোগনিয়ন্ত্রণ, রোগতত্ত্ব ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সংবেদনশীলতা ও যথার্থতার যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে তাতে ভারতের এই কিটটি কার্যকর বলে মনে হয়েছে।’

পরীক্ষায় খুব বেশি ফলস নেগেটিভ বা ফলস পজেটিভ ফল আসেনি। ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য এই পরীক্ষাটির অনুমোদন দিয়েছে।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় করোনায় সংক্রমিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত। ভারতে করোনায় সংক্রমণ ৬০ লাখের বেশি। দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে এক লাখের বেশি মানুষ।

ভারতে দিনে প্রায় এক লাখ নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। দেশটিতে ১ হাজার ২০০টিরও বেশি পরীক্ষাগার রয়েছে। ভারতে দুই ধরনের পরীক্ষা হচ্ছে। প্রথমটি পিসিআর ও দ্বিতীয়টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। পিসিআরে সোয়াব পরীক্ষা করা হয়। আর অ্যান্টিজেনে ভাইরাসের অংশগুলো পরীক্ষা করা হয়।

পিসিআর টেস্ট সাধারণত নির্ভরযোগ্য। এতে ২ হাজার ৪০০ রুপির মতো খরচ পড়ে।

অ্যান্টিজেন টেস্ট তুলনামূলক সস্তা। এতে আঙুল থেকে রক্তের নমুনা নেওয়া হয়।

এভাবে আগের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। পিসিআরের তুলনায় এতে ফলস নেগেটিভ ফল বেশি আসে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যনীতি বিষয়ক গবেষক অনন্ত ভান বিবিসিকে জানান, ‘করোনা পরীক্ষার জন্য ভারতে রোগীদের এখনো দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। কিটেরও স্বল্পতা রয়েছে। আমরা অনেক বেশি র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালাচ্ছি। এতে ফলস নেগেটিভ ফল আসার সমস্যা রয়েছে।’

অনন্ত ভান মনে করেন, অ্যান্টিজেন টেস্টের পরিবর্তে ফেলুদা টেস্ট করা যাবে। কারণ এটা তুলনামূলক সস্তা এবং বেশি নির্ভরযোগ্য।

আইজিআইবির পরিচালক চিকিৎসক অনুরাগ আগারওয়াল বিবিসিকে বলেন, ‘নতুন এই পরীক্ষায় পিসিআর টেস্টের মতো নির্ভরযোগ্যতা রয়েছে।এই পরীক্ষা ছোট গবেষণাগার যেখানে অত্যাধুনিক মেশিন নেই সেখানেও করা সম্ভব।’

ফেলুদা টেস্টে নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি অনেকটা পিসিআর টেস্টের মতোই। নাকের মধ্যে থেকে নমুনা নেওয়া হয় এ পদ্ধতিতে। ভারত এখনো লালা নমুনা হিসেবে নিয়ে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়নি।

ফেলুদা কিটে দুটো নীল দাগ এলে কোভিড পজেটিভ ও একটি নীল দাগ এলে কোভিড নেগেটিভ হিসেবে রোগীকে শনাক্ত করা হবে।

হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের রিসার্চ ফেলো স্টিফেন কিসলার বলেন, সহজে করোনা পরীক্ষা করা ও পরীক্ষা সহজলভ্য করতে ফেলুদা কিট খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণাগার একই ধরনের কাগজের স্ট্রিপ দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। এগুলো সস্তা হবে। অনেক বেশি সরবরাহ করা যাবে। শার্লক বায়োসায়েন্সের তৈরি একটি কাগজের স্ট্রিপ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন।

সিএসআইআর-আইজিবিএমআরের বিজ্ঞানী দেবজ্যোতি চক্রবর্তী ফেলুদা কিটের গবেষণাকাজের নেতৃতত্বদানকারী দলের একজন। বিবিসিকে তিনি বলেন, তারা একটি পরীক্ষার প্রোটোটাইপ নিয়ে কাজ করছেন। এতে ঘরে বসে পিসিআর মেশিন ব্যবহার করে আরএনএ নেওয়া যাবে। এটি পরীক্ষার কাজে সাহায্য করবে।

হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের রিসার্চ ফেলো স্টিফেন কিসলার বলেন, ভারতে জনসংখ্যা অনেক বেশি। তাই এ ধরনের পরীক্ষা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝানোর সুযোগ আছে ভারতে। তিনি বলেন, করোনা পরীক্ষা আমরা দাঁত ব্রাশ করা বা পাউরুটি টোস্ট করার মতো সহজ করতে চাই।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top