সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল ভারী করার চেষ্টা


প্রকাশিত:
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:১৭

আপডেট:
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:২০

ছবি-সংগৃহীত

আগামী নভেম্বরেই নির্বাচন। তার আগে নিজের দল ভারী করার সব চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে তিনি মনোনীত করলেন অ্যামি কোনি ব্যারেটকে। বলা হচ্ছে, রক্ষণশীল ব্যারেটকে মনোনয়ন দেওয়ায় পাল্টে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের চালচলন। যদি ব্যারেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হয়েই যান, তবে বদলে যাবে ইতিহাসও।

স্থানীয় সময় ২৬ সেপ্টেম্বর অ্যামি কোনি ব্যারেটকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে মনোনয়ন দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যারেট স্বভাবতই ট্রাম্পের অনুগত। বিবিসি বলছে, ২০১৭ সালে শিকাগোভিত্তিক সপ্তম সার্কিট কোর্ট অব আপিলসে বিচারক হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ব্যারেট। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে মনোনীত করেছিলেন। ইন্ডিয়ানার নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করার পর তিনি কিছুদিন এক বিচারকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন। সব ঠিক থাকলে এবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হতে যাচ্ছেন ৪৮ বছর বয়সী ব্যারেট।

ব্যারেট হাঁটছেন ট্রাম্পের মতাদর্শিক পথেই। তিনি এর আগেও ট্রাম্পের পক্ষে রায় দিয়েছেন। যেমন ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির পক্ষে একসময় রুল দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র কেনা ও ব্যবহারের ব্যক্তিগত অধিকারের পরিধি বাড়ানোর পক্ষেও তিনি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছিলেন।

রক্ষণশীল ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ব্যারেট ব্যাপক জনপ্রিয়। পিপল অব প্রেইস নামের একটি ক্যাথলিক গোষ্ঠীর সদস্য তিনি। এই গোষ্ঠী মনে করে, বিয়ে শুধু বিপরীত লিঙ্গের মধ্যেই হতে হবে। তাই এলজিবিটি গোষ্ঠীগুলোর কাছে ব্যারেট প্রতিকূল এক নাম। আবার গর্ভপাত বৈধ করার ১৯৭৩ সালের আইন পরিবর্তনের জন্যও ব্যারেটকে বড় অস্ত্র বলে মনে করে থাকে রক্ষণশীলেরা। তিনি বিচারপতি হলে উল্টে যেতে পারে ওবামাকেয়ারও। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

সিএনএন বলছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রুথ বেইডার গিন্সবার্গের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া পদে ব্যারেটের নিয়োগ মার্কিন উচ্চকক্ষ সিনেটে অনুমোদন পেলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে থাকা সাম্যাবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে মোট ৯ জন বিচারপতি থাকেন। এত দিন তাঁদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন রক্ষণশীল ঘরানার। বাকি চারজন ছিলেন উদারপন্থী। সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুমোদনের জন্য পাঁচটি ভোটের প্রয়োজন হতো। উদারপন্থীদের ক্ষেত্রে চারজনের বাইরে আরেকটি ভোট নিজেদের দিকে টানার সুযোগ ছিল। অনেক ইস্যুতেই দেখা গেছে, উদারবাদীদের বিজয় হয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র কট্টর ডানপন্থার দিকে ঝুঁকতে পারেনি, চূড়ান্ত রক্ষণশীল নীতি নির্ধারণ থেকেও বিরত থাকতে পেরেছে। কিন্তু ব্যারেট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হলে উদারবাদী বিচারকদের সংখ্যা তিনে নেমে যাবে। ফলে কোনো ইস্যুতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে উদারবাদীদের অতিরিক্ত দুটি ভোট পক্ষে টানতে হবে, যা অত্যন্ত কঠিন। সে ক্ষেত্রে বিরোধীদের ওজর-আপত্তি অগ্রাহ্য করে অনেক রক্ষণশীল নীতি বাস্তবায়নের অনুমোদন পেয়ে যেতে পারে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। এমনও হতে পারে যে প্রগতির উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছে দেশটি।

অ্যামি কোনি ব্যারেটকে বিচারপতি পদে মনোনীত করায় ডেমোক্রেটিক পার্টি এরই মধ্যে বিরোধিতায় নেমেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলটির প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, নির্বাচনের আগে বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত হবে না। এ জন্য সিনেটের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ব্যারেটকে নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের কপালে ভাঁজ পড়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। ট্রাম্প বুঝেশুনেই নিজের সেনা বাছাই করছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, ট্রাম্প বারবার বলছেন যে নির্বাচনের ফলাফল তিনি না-ও মানতে পারেন। নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো প্রার্থী যদি ভোটের ফল না মানেন, তবে তা আদালত পর্যন্ত গড়াবে। আদালতেই নির্ধারিত হবে, কে বিজয়ী। ব্যারেটের নিয়োগ চূড়ান্ত হলে সেই আদালতে থাকবেন ছয়জন রক্ষণশীল বিচারপতি। তাঁদের মধ্যে আবার ব্যারেটসহ তিনজন থাকবেন ট্রাম্পেরই মনোনীত। সুতরাং আদালতে কে বেশি সুবিধা পেতে পারেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ২০১৭ সালে নিল গরসাচকে এবং ২০১৮ সালে ব্রেট কাভানাকে মনোনয়ন দেন ট্রাম্প।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও ইতিহাসের দ্রুততম সময়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে অ্যামি কোনি ব্যারেটের মনোনয়ন অনুমোদন পেয়ে যেতে পারে। কারণ, সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ট্রাম্পও তা–ই চাইছেন। সিনেটের বিচারবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান লিন্ডসে গ্রাহাম শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, অ্যামি কোনি ব্যারেটের নিয়োগের বিষয়ে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুনানি শুরু করতে পারে। তবে ডেমোক্র্যাটরা এ বিষয়টি অনুমোদনের পথ যতটা সম্ভব কঠিন করে তুলবেন বলেই বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন। কারণ, একবার ব্যারেটের নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে গেলে আর করার কিছু থাকবে না। তখন নির্ভর করতে হবে অনেক ‘যদি-কিন্তুর’ ওপর।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top