রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


রানির মৃত্যুর পরই শুরু ‘অপারেশন ইউনিকর্ন’


প্রকাশিত:
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:২৬

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০৬:৫২

ছবি সংগৃহীত

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় সিংহাসনে ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাবা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর ২৫ বছর বয়সে বসেছিলেন সিংহাসনে। তারপর ৭০ বছর পেরিয়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনামলের সমাপ্তি ঘটল।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু সংবাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সময় থেকে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পর্যন্ত ঘটনাগুলো আগে থেকেই ঠিকঠাক করা আছে। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু হলে সে খবর ছড়িয়ে পড়বে মাত্র একটি বার্তায়। সেটা নির্ধারণ করা ছিল, লন্ডন ব্রিজ ইজ ডাউন (London Bridge Is Down)। রানির প্রাইভেট সেক্রেটারি এই বার্তা পাঠাবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে। লন্ডনে রানির মৃত্যু এবং শেষযাত্রায় সংকেতেই চলবে প্রশাসনের কাজ। তবে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। রানির মৃত্যুতে ব্রিটেনে এখন অপারেশন ইউনিকর্ন (Operation Unicorn) কোড ব্যবহার করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানা যায়, লন্ডনের পরিবর্তে স্কটল্যান্ডে রানির মৃত্যু হওয়ায় তার পরে সমস্ত কাজের ক্ষেত্রে এই কোড ব্যবহারের কথা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল ব্রিটিশ প্রশাসন।

স্কটল্যান্ডের জাতীয় পশু ইউনিকর্ন। রয়্যাল কোট অফ আর্মসেও ব্রিটিশ সিংহের সঙ্গে থাকে এই ইউনিকর্ন। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদের মৃত্যুবরণ করেন রানি এলিজাবেথ। তারপর থেকেই অপারেশন ইউনিকর্ন অনুসারে কাজ শুরু করে দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রশাসন।অপারেশন ইউনিকর্ন হচ্ছে-

ব্রিটেনের রানির অন্যতম প্রিয় আবাস ছিল স্কটল্যান্ডের এই বালমোরাল প্যালেস। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, ২০১৭ সালে এডিনবার্গের পার্লামেন্টের অনলাইন নথিতে প্রথম এই ‘অপারেশন ইউনিকর্ন’ কথাটি ব্যবহার করা হয়। রানি স্কটল্যান্ডে মারা গেলে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এডিনবার্গের প্রাসাদ, গির্জায় যে জনস্রোত তৈরি হবে, সেই প্রসঙ্গও ছিল ওই পুরনো নথিতে।

পরিকল্পনা অনুসারে রানির মরদেহ এডিনবার্গের প্রাসাদে আনা হবে। সেখান থেকে ট্রেনে দেহ পৌঁছবে লন্ডনে। রানির প্রয়ানের দিনটিকে ডি ডে (D Day) বলে উল্লেখ করা হবে নথিতে। পরবর্তী শোকের দিনগুলিকে ডি-১ ডি-২ বলে চিহ্নিত করেই চলবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা। অপারেশন ইউনিকর্ন অনুসারে মৃত্যুর পর স্কটল্যান্ড থেকে লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে আনা হবে রানির মরদেহ। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর বালমোরাল প্যালেস থেকে এডিনবার্গের রাজপ্রাসাদে আনা হবে রানির কফিন।

এডিনবার্গের প্রাসাস থেকে সেন্ট জাইলস ক্যাথিড্রাল পর্যন্ত শোক মিছিলও হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর রয়্যাল ট্রেনে শেষবারের মতো এডিনবার্গ থেকে লল্ডন ফিরবেন রানি এলিজাবেথ। স্টেশনে উপস্থিত থাকবেন নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। লন্ডনে পৌঁছনোর পর বাকিংহাম প্যালেসে রাখা হবে রানির মরদেহ। মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় রানির শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে। King George VI Memorial Chapel-ই সমাধিস্থ করা হবে ব্রিটেনের সম্রাজ্ঞীকে। আর সেই সঙ্গেই শেষ হবে অপারেশন ইউনিকর্ন।

ডি-ডে এর প্রথম দিনে বাকিংহাম প্যালেস থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে একটি 'কল ক্যাসকেড' হয়। প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে রাণীর ব্যক্তিগত সচিব অবহিত করেন এবং খবরটি ক্যাবিনেট সেক্রেটারি এবং প্রাইভি কাউন্সিল অফিসে পৌঁছে দেওয়া হয়, যাতে সরকারি কাজের সমন্বয় করা যায়। এরপরই জনসাধারণ জন্য 'সরকারি বিজ্ঞপ্তি' জারি করা হয়।

রাজকীয় বাসভবন, হোয়াইট হল এবং অন্যান্য সরকারি ভবনগুলোতে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। রাজপরিবারের ওয়েবসাইটটি রানীর মৃত্যুর ঘোষণার একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিসহ একটি কালো মোড়কে পরিবর্তন করা হয়েছে। কালো ব্যানার দেখানোর জন্য সরকারি ওয়েবসাইটগুলোও পরিবর্তন করা হয়েছে।

শোকের প্রথম দিনে, হাইড পার্ক ও টাওয়ার হিলে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দুকের গুলি ছুরে স্যালুট এবং জাতীয়ভাবে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হবে।

ডি-ডে এর দ্বিতীয় দিনে ঊর্ধতন সরকারি কর্মকর্তা ও পরামর্শদাতাদের সমন্বয়ে গঠিত অ্যাক্সিশন কাউন্সিলের সদস্যরা শনিবার সেন্ট জেমস প্রাসাদে নতুন রাজার নাম ঘোষণার জন্য মিলিত হবেন। পরে সেন্ট জেমস প্যালেসের বারান্দা থেকে জনসমক্ষে বিবৃতি পাঠের মাধ্যমে জানানো হবে।

ডি-ডে এর তৃতীয় দিনে রানির কফিনটি বালমোরাল থেকে সড়কপথে হলিরুডহাউসের প্রাসাদে নিয়ে যাওয়ার হবে। এডিনবার্গ, কার্ডিফ এবং বেলফাস্টে ঘোষণা দেওয়া হবে এবং পার্লামেন্টে শ্রদ্ধা নিবেদন অব্যাহত থাকেব।

ডি-ডে এর চতুর্থ দিনে রাজা চার্লস উত্তর আয়ারল্যান্ডে উড়ে যাবেন, যেখানে পার্লামেন্টের সদস্যরা আরেকটি শোক প্রস্তাব দেবেন। এরপর তিনি বেলফাস্টের সেন্ট অ্যান'স ক্যাথেড্রালে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

ডি-ডে এর পঞ্চম দিনে রানির মরদেহ বাকিংহাম প্যালেস ত্যাগ করবে এবং লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হবে। রানির মৃত্যুর পর মিছিলটি হবে প্রথম বড় সামরিক কুচকাওয়াজ।

ডি-ডে এর ষষ্ঠ থেকে নবম দিনে ওয়েস্টমিনস্টার হল দিনে ২৩ ঘণ্টা জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, তবে প্রথমে ভিআইপিরা শ্রদ্ধা জানাবেন।

রাজকীয় পরিবার এবং হোয়াইট হলে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে, বিশেষ করে রাষ্ট্রপ্রধান, ভিআইপি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ১০তম দিনে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য।

ডি-ডে এর দশম দিন রানির শেষকৃত্য হবে। দিনটি 'জাতীয় শোক দিবস' হবে, তবে ব্রিটেনে সরকারি ছুটির দিন হবে না। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ওই সময় ব্রিটেনজুড়ে দুই মিনিটের নীরবতা পাওল করা হবে। এতে প্রায় দুই হাজার মানুষ উপস্থিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


সম্পর্কিত বিষয়:

ব্রিটিশ

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top