বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?


প্রকাশিত:
৬ আগস্ট ২০২০ ১৭:২৮

আপডেট:
৭ আগস্ট ২০২০ ০১:১৭

ছবি: সংগৃহীত

হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ হলো হার্টের রক্তনালীতে ব্লক হওয়া বা রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া।

কেন রক্তনালীর ব্লক হয়?

রক্তনালী ব্লক বা হার্ট ব্লকের অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বংশগত কারণে রক্তনালীর ব্লক হতে পারে। যদি কারো বাবা বা ভাইয়ের ৫৫ বছর বয়সের আগে এবং মা বা বোনের ৬৫ বছর বয়সের আগে হার্ট আ্যাটাক হয় তাহলে ধরে নিবেন আপনার বংশগত হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা আছে। সুতরাং ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই আপনাকে হার্টের চেক আপে থাকতে হবে এবং রক্ত নালীর ব্লক যাতে না হয় সেই জীবন পদ্ধতি (life style modification) অবলম্বন করতে হবে ২০ বছরের পর থেকেই।

যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাদের রক্তনালী ব্লক হতে পারে। তাই ২৪ ঘন্টাই যাতে আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবেন।

যারা ধূমপান করেন তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশংকা অনেক। তাই ধুমপান আজই বন্ধ করুন। এমনকি আপনার কাছে বসেও কাউকে ধুমপান করতে দিবেন না। এটাতে পেসিভ স্মোকিং হয়। এতেও আপনার ক্ষতি হতে পারে।

যাদের হাই প্রেসার আছে তাদেরও রক্তনালীতে ব্লক হতে পারে। তাই প্রেসারের ঔষধ কখনো বাদ দেওয়া যাবে না। বয়সের কারণেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। রক্ত নালী ব্লকের আরেকটি কারণ হলো রক্তের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল। কোলেস্টেরল বেশি থাকলে রক্ত নালীর ভিতরে জমে ব্লক তৈরী করে।

যারা শর্করা জাতীয় কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খায় তাদের রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে রক্তনালী ব্লক হতে পারে। কিছু রোগ আছে যেগুলো শরীরে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ তৈরি করে সেগুলো থেকেও রক্তনালিতে ব্লক হতে পারে।

কিভাবে বুঝবেন আপনার রক্তনালীতে ব্লক থাকতে পারে?
হার্টে রক্ত নালীতে ব্লক থাকলে বুকে ব্যথা হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়। তারা একটু পরিশ্রম করলেই তাদের বুকে ব্যথা চলে আসে। অতি অল্প পরিশ্রমেই তারা হাপিয়ে যায় অথবা শ্বাসকষ্ট হয়। হার্টের কিছু টেস্ট আছে যেমন ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইটিটি এবং এনজিওগ্রাম। এগুলো করে হার্টের ব্লক বা রক্তনালীর ব্লক নির্ণয় করা যায়।

হার্টের রক্ত নালীর ব্লকের চিকিৎসা কি?
রক্তনালীর ব্লক বা হার্টের ব্লক হলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এর রয়েছে ৪ টি চমৎকার এবং কার্যকরী চিকিৎসা:

১. লাইফস্টাইল মডিফিকেশন: মানে ব্যায়াম ও স্বাস্থকর খাবার দাবার
২. হার্টের ঔষধ
৩. স্টেন্টিং বা রক্তনালীতে রিং লাগানো
৪. বাইপাস সার্জারি বা ওপেন হার্ট সার্জারি

ব্যায়াম:
প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন ব্যায়াম করতে হবে। আপনার জন্য উপযোগী যেকোনো ব্যায়ামই আপনি করতে পারেন। তবে দ্রুত হাঁটা একটি ভালো ব্যায়াম। এছাড়া সাইক্লিং অথবা সুইমিংও করতে পারেন। যাদের খুব বেশি সময় থাকে না ব্যস্ত মানুষ তারা ট্রেডমিল এক্সারসাইজ করতে পারেন। ট্রেডমিল মেশিনে ৮-১০ মিনিটের এক্সারসাইজ করলেও চলবে।

খাবার দাবার:
হার্ট ভালো রাখার জন্য ফল মূল, শাকসবজি এবং মাছ বেশি খাবেন। অধিকাংশ মাছই হার্টের জন্য ভালো। সামুদ্রিক মাছ হার্টের জন্য বেশি ভালো। তবে গলদা চিংড়ি এড়িয়ে চলবেন। এতে অনেক কোলেস্টেরল থাকে। এটি বাদ দিলেই ভালো । মাংসের মধ্যে মুরগির মাংস খেতে পারবেন। তবে চামড়া বাদ দিয়ে। গরু ও খাসির মাংস খুবই কম খাবেন। বাদ দিতে পারলেই ভালো। কবুতর ও পাখির মাংস খাবেন না। ভেড়া ও শুকরের মাংসে অনেক চর্বি থাকে এগুলো খাবেন না। চর্বি ও তেল জাতীয় খাবার কম খাবেন। রান্নায় তেল খুবই কম ব্যবহার করবেন। রান্নায় যেকোন উদ্ভিজ্জ তেল যেমন সয়াবিন তেল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। তবে যে তেলই ব্যবহার করেন না কেন খুবই কম তেল ব্যবহার করবেন। হার্টের জন্য কোন তেল ভালো? এর উত্তর হলো কোন তেলই ভালো না যদি সেটা পরিমানে বেশি হয়।

দ্বিতীয় চিকিৎসা হলো ঔষধ:
হার্টের রোগীদের কয়েকটি ঔষধ সারাজীবন খেতে হয়। তবে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন ও খাবার-দাবারের নিয়ম মেনে চলেন তাদের জন্য ঔষধ এত বেশি দরকার হয় না। সঠিক নিয়ম মেনে চললে অনেক কম ঔষধেও হার্ট ব্লকের রোগীদেরকে ভালো রাখা সম্ভব। কার কি ঔষধ প্রয়োজন সেটা নির্ভর করে রোগের তীব্রতার উপর। এবং সেটা আপনার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ঠিক করে দিবেন। হার্টের ঔষধ কখনো হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করবেন না অথবা নিজে নিজে বাড়িয়ে খাবেন না।

তৃতীয় চিকিৎসা স্টেন্টিং বা রক্তনালীতে রিং স্থাপন:
হার্টের রক্ত নালীর ব্লকের তৃতীয় চিকিৎসা হলো স্টেন্টিং। মানে রক্তনালীতে রিং স্থাপন। হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমে ব্লক হয়ে যায়। রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে হার্ট ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। তাই হার্টের রক্ত নালীর ব্লকের স্থানে একটি রিং বসিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়া হয়। একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এই সিদ্ধান্ত নিবেন কার ব্লকে রিং বসাতে হবে অথবা কার বসাতে হবে না। ইমার্জেন্সি হার্ট অ্যাটাকে (Acute MI) এই স্টেন্টিং বা রিং স্থাপন একটি উন্নতমানের জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা। এবং হার্টের ঔষধ খাওয়ার পরও যাদের ব্যাথা থাকে কিংবা হার্টের কার্যক্ষমতা কম থাকে তাদের জন্যও রিং স্থাপন একটি ভালো চিকিৎসা।

চতুর্থ চিকিৎসা বাইপাস সার্জারি বা ওপেন হার্ট সার্জারি:
হার্টের রক্তনালীর ব্লকের অন্য আরেকটি চিকিৎসা হলো ওপেন হার্ট সার্জারি বা বাইপাস সার্জারি। ব্লক এর পরিমাণ এবং সংখ্যা অনেক বেশি হলে অনেক সময় রিং স্থাপন করা সম্ভব হয় না। তাদেরকে ওপেন হার্ট সার্জারি করে ব্লক গুলো বাইপাস করে বিকল্প রক্ত নালী তৈরী করে দেয়া হয় যাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকভাবে করতে পারে।

হার্টের রক্তনালীর ব্লক হলেই জীবন শেষ নয়। এর রয়েছে চমৎকার চিকিৎসা ব্যাবস্থা। আপনার হার্ট স্পেশালিস্টের নিবিড় তত্ত্বাবধানে থেকে আপনি পেতে পারেন পূর্বের নতুন জীবন।

লেখক:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top