বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


মিরাজের বীরত্বে রুদ্ধশ্বাস জয় বাংলাদেশের


প্রকাশিত:
৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৩৬

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২২:১৯

ছবি সংগৃহিত

১৮৭ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় ১৩৬ রানেই ৯ উইকেট নেই বাংলাদেশের। উইকেটে ব্যাটার বলতে ১১ নম্বরে নামা মুস্তাফিজুর রহমান আর মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরপুরের পরিপূর্ণ গ্যালারি তখন একদম নিশ্চুপ। জেতার আশা একদম ছেড়েই দিয়েছিলেন মাঠে থাকা দর্শকদের অনেকে। ম্যাচের এমন এক পরিস্থিতিতে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মিরাজ। খেলেন ৪১ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস। আর তাতে রোহিত-কোহলিদের হতাশায় ডুবিয়ে নাটকীয় এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

মিরপুরের শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার ভারতের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে মিরাজের বীরত্বে এক উইকেটে জিতেছে লিটন দাসের দল। অবিশ্বাস্য এই জয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

৫০ ওভারে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যটা ছিল ১৮৭ রানের। ওয়ানডে ম্যাচের প্রেক্ষিতে এই রান তাড়াকে বেশ সহজই বলা চলে। কিন্তু সেই লক্ষ্যটাও পাহাড়সম মনে হল বাংলাদেশি মিডল অর্ডারের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের কারণে।

শুরুটা হয় নাজমুল হোসেন শান্তকে দিয়ে। ইনিংসের প্রথম বলেই রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাঁহাতি এ ওপেনার।

ধীরগতির ইনিংস খেলতে থাকা এনামুল হক বিজয় নবম ওভারে একবার জীবন পান। তবে পরের ওভারে আউট হয়ে যান। মোহাম্মদ সিরাজের বলে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ১৪ রানে ফেরেন তিনি।

তবে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে চাপটা ভালোভাবেই সামলে যাচ্ছিলেন এই সিরিজে অধিনায়কত্ব পাওয়া লিটন দাস। রানের চাকাও চলছিল বেশ ভালোভাবেই। কিন্তু বাধ সাধেন ওয়াশিংটন সুন্দর। সুন্দরের স্লোয়ার বল কব্জির মোচড়ে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দেন লিটন। ভাঙে সাকিব-লিটনের ৪৮ রানের অনবদ্য জুটি।

লিটনের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাকিবও। ৩৮ বলে ২৯ রান করে ফেরেন সুন্দরের শিকার হয়ে। সাকিবকে সাজঘরে ফেরানোর পেছনে বড় অবদান আছে কোহলিরও। মিড অফে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে ক্যাচটা তিনই নিয়েছেন সেটা রীতিমতো চোখ ধাঁধানো।

তারপরও লক্ষ্যটা নাগালে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু পরপর দুই বলে সর্বনাশ। হঠাৎ করে পরপর বিদায় নেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ ১৪ ও মুশফিক ১৮ রানে ফেরেন।

এরপর বিপদটা আরও বাড়ে কুলদীপ সেনের বলে আফিফের বিদায়ে।

সেই ওভারেই আরও এক উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেন কুলদীপ। দিশেহারা টাইগাররা পরের ওভারে হারায় হাসান মাহমুদকে।

৪ উইকেটে ১২৭ থেকে ৯ উইকেটে ১৩৬ হয়ে যায় বাংলাদেশ! ৯ রানের মধ্যে হারায় ৫ উইকেট।

পরাজয় তখন কেবল অপেক্ষা।

সেখান থেকেই শুরু মিরাজের বীরত্ব। ৪১তম ওভারে পরপর দুই বলে দুই ছক্কা মেরে মোমেন্টামটা বাংলাদেশের দিকে নিয়ে আসেন তিনি।

এর পরের ওভারগুলোতেও মিরাজ খেলেছেন আগ্রাসী। তবে শার্দুল ঠাকুরের বলে একবার ক্যাচও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের জোরে সে ক্যাচটা লোকেশ রাহুলের হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। বেঁচে যান মিরাজ।

শেষের দিকে মিরাজকে ভালো সঙ্গ দিয়েছেন মুস্তাফিজও। রান বেশি না করতে পারলেও উইকেট বিলিয়ে দেননি। তার ব্যাট থেকে এসেছে একটি চারের মারও।

দুজনের ৫১ রানের জুটিতে ৪ ওভার হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। মিরাজ অপরাজিত থাকেন ৪১ রানে।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব-এবাদতদের বোলিং তোপে ৪১.২ ওভারে ১৮৬ রানে অল আউট হয় ভারত।

মিরপুরের স্পিন উইকেটে ভারতীয় ব্যাটারদের একাই নাচিয়েছেন সাকিব আল হাসান। দুর্দান্ত বোলিংয়ে নামের পাশে যোগ করেছেন আরেকটি ‘ফাইফার’ বা পাঁচ উইকেটের অর্জন।

প্রথমবার বাংলাদেশকে ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিতে নামা লিটন দাস আজ টস জিতে নিয়েছেন বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিগত ৭ রানে ধাওয়ানকে ফিরিয়ে অধিনায়ককে শুভ সূচনা এনে দেন মিরাজ। এরপর দলীয় ৪৮ রানে ফের আঘাত। এবার সাকিব ফেরান রোহিত শর্মাকে।

ব্যক্তিগত ২৭ রানে আউট ভারত অধিনায়ক। তাকে বোল্ড আউটের ফাঁদে ফেলেন সাকিব।

দুই বল পরই ফের সাকিব ম্যাজিক। ভারতের সেরা অস্ত্র কোহলিকে সাজঘরের পথ দেখান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। লিটনের দারুণ ক্যাচে ফিরে যান কোহলি, করেন ৯ রান।

৪৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা ভারত শিবিরে কিছুটা আশার সঞ্চার করেন শ্রেয়াস আয়ার ও কেএল রাহুল। তারা ৪৩ রানের জুটি গড়েন।

দলীয় ৯২ রানে আবারও আঘাত হানে বাংলাদেশ। এবার আয়ারকে ফেরান এবাদত হোসেন। ব্যক্তিগত ২৪ রানে লিটনের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ব্যাটার।

এরপর একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন রাহুল। কিছুক্ষণ তাকে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। কিন্তু আবারও সাকিবের বাধা। ওয়াশিংটনকে ১৯ রানে ফিরিয়ে আবারও রানের লাগাম টানেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

এই জুটি ভাঙার পর আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। পরের দুই ওভারে আরও তিন উইকেট তুলে নেন সাকিব-এবাদত। ৩৫তম ওভারে দীপক চাহারকে এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়ে নিজের পাঁচ নম্বর উইকেটটা তুলে নেন সাকিব।

বিশাল বিপদের মুখেও সিরাজকে নিয়ে একটু একটু করে আগাতে চেষ্টা করছিলেন কে এল রাহুল। কিন্তু তাকে সেই সুযোগটা দিলেন না এবাদত। তাকে ৭৩ রানে ফেরান ডানহাতি এ পেসার। শেষ উইকেটটাও নিয়েছেন তিনিই। তাতে ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় চারে।

শেষ পর্যন্ত ৪১ ওভার ২ বলে ১৮৬ রানে অলআউট হয় ভারত।


সম্পর্কিত বিষয়:

মিরাজ

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top