ক্রীড়া উপদেষ্টার ১০০ দিন : জনগণের ওপর ছাড়লেন মূল্যায়নের ভার
 প্রকাশিত: 
                                                ১৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:০৩
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৩৭
                                                
 
                                        ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই সরকারে দুই জন ছাত্র প্রতিনিধি নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।
আজ (রোববার) দুপুরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে সরকারের ১০০ দিনে আসিফ মাহমুদ তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্রীড়া ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের (বর্তমানে স্থানীয় সরকার) বিভিন্ন কর্মকাণ্ড উপস্থাপন করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সরকারে দুই জন ছাত্র প্রতিনিধি থাকায় অনেক আলোচনা হয়েছে। ১০০ দিন দায়িত্ব পালন শেষে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলছেন, ‘তরুণ সমাজ যেমন বিপ্লব করতে পারে তেমনি গঠনমূলক কাজও করতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদে থেকে এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের মাধ্যমে তরুণ সমাজ সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে।’
বেসরকারি ও সরকারি খাতে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রাইভেট সেক্টরে তরুণরা অনেক সাফল্য দেখিয়েছে। সরকারি খাতে সেই হার কম। এখানে হায়ারআরকি (পদসোপান নীতি) ও নানা বিষয় রয়েছে। গভ সেক্টরেও তরুণদের আমরা তরুণদের আরো সুযোগ করে দিতে চাই।’ ১০০ দিন সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। এরপরও এই দিনগুলোর পথচলা ও মূল্যায়ন সম্পর্কে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ফেডারেশনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছি। আমাদের জবাবদিহিতা জনগণের কাছে। কেমন কাজ করেছি, এটা জনগণ মূল্যায়ন করবে।’
গত তিন মাসে ক্রীড়াঙ্গনে জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা ভাঙা হয়েছে। বিসিবির সভাপতি ও পরিচালক পদে রদবদল এসেছে। বাফুফে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি নয়টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি গঠন হয়েছে। স্টেডিয়ামের দোকান ভাড়া পর্যালোচনা, ক্রীড়া পরিদপ্তরের ক্রীড়া সামগ্রি বিতরণ নীতিমালা সংশোধনসহ বেশ কিছু কর্মকাণ্ড হয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম অনেক হলেও মাঠের খেলা এখনো অনেকটা স্থবিরই রয়েছে। অনেক ফেডারেশন এখনো অভিভাবক শূন্য। জেলা পর্যায়েও কমিটি না থাকায় খেলাধূলা গতিশীল নয়। এই প্রসঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা শিগগিরই ফেডারেশনগুলোর কমিটি গঠন করব। জেলা-বিভাগীয় কমিটিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
সম্প্রতি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নয়টি কমিটি প্রকাশ করেছে। সেই কমিটির যেমন গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তেমনি আছে বিতর্কও। বিশেষ করে কাবাডি ফেডারেশনের বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদককে সাধারণ সম্পাদক নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। অন্য ফেডারেশনের কমিটিতেও টুকটাক প্রশ্ন রয়েছে। এ নিয়ে উপদেষ্টার মন্তব্য, ‘সার্চ কমিটি আমাদের কাছে কমিটির সুপারিশ করে। পরবর্তীতে আমরা সেটা পর্যালোচনা করি। ইতোমধ্যে একটি (কাবাডি ) কমিটি সংশোধন করা হয়েছে।’
দেশের অন্যতম শীর্ষ ফেডারেশন ক্রিকেট বোর্ড। সভাপতির পদে পরিবর্তন এলেও বোর্ডের কর্মকাণ্ড খানিকটা ঢিমেতালেই চলছে। সাবেক জাতীয় অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেছেন। সেই মন্তব্য উদ্ধৃত করে উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘যখন দায়িত্ব নেই , তখন বিসিবির লোকজনকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। নতুন পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে স্থবিরতা কাটানোর চেষ্টা চলছে। সেটা করতে হলে জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠন প্রয়োজন রয়েছে। সেটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে। তেমনি ক্রিকেট ছাড়া দেশের অন্য ফেডারশেনগুলোতেও আছে ঋণ। বিশেষ করে ফুটবল ফেডারেশনে ঋণের অঙ্ক ১৫ কোটি টাকার ওপর। কাজী সালাউদ্দিনের গত ১৬ বছরে বাফুফে এই ঋণের জালে পড়েছে। আরও অনেক ফেডারেশনেই এই সংকট রয়েছে। এ নিয়ে উপদেষ্টার মন্তব্য, ‘আমরা ফেডারেশনগুলোকে প্রতি বছরের হিসাব দিতে বলেছি। আপনারা (সাংবাদিকরা) স্ব স্ব ফেডারেশনকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন।’
৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। এই লক্ষ্যে তিনটি স্টেডিয়ামে কয়েক কোটি টাকার সংস্কার কাজ করছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ক্রীড়া খাতে বাজেট স্বল্পতা রয়েছে। ক্রিকেট বোর্ডের যেখানে হাজার কোটি টাকা এফডিআর সেখানে মন্ত্রণালয় স্ব উদ্যোগে এই সংস্কার কাজ করার কারণ সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ‘স্টেডিয়ামগুলো সরকারে অধীনে। তাই এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি। ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দেনা পাওনার ( গেট মানি- প্রচার স্বত্ত্ব) বিষয় থাকলে সেটি আমরা আলাদাভাবে দেখব।’
ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। বিগত সময়ে দলীয় পরিচয় ও প্রভাবে অনেক অযোগ্য ও অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যরা এই পুরস্কার পেয়েছেন। তাই উপদেষ্টা ক্রীড়া পুরস্কারের নীতিমালা নিয়ে কাজ করছেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে দলীয় প্রভাবে অনেক পুরস্কার পেয়েছে। আমরা এই সংক্রান্ত একটি নীতিমালা করব এবং একটি থাকবে সেটা অনুসরণ করে পুরস্কার প্রদান করবে।’
সম্পর্কিত বিষয়:



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: