সোমবার, ১৯শে মে ২০২৫, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


সংস্কৃতি চর্চায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ জরুরি কেন?


প্রকাশিত:
১৯ মে ২০২৫ ১০:১৫

আপডেট:
১৯ মে ২০২৫ ১৬:৫২

ছবি সংগৃহীত

মানুষ জন্ম থেকেই কাঁদতে শেখে, আর হাসতে শেখে অনেক পরে। কিন্তু জন্মের সময় সে নিজে কাঁদলেও পরিবারের মুখে হাসি ফোঁটায় পৃথিবীর আলো দেখা মানুষটি। এখন আমরা কাঁদতে শিখেছি, এবার হাসতে চাই।

পৃথিবীর মানুষের কাছে একটি দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরতে পারে তার ইতিহাস। সংস্কৃতিই বাঁচিয়ে রাখতে পারে তার দেশকে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই সমকালীন সমাজ নিয়ে- সমাজের মূল্যবোধ অবক্ষয়, মানুষের হতাশা বঞ্চনাকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতির চর্চা করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের পথ খুঁজতে হচ্ছে সংস্কৃতি চর্চার।

আমাদের সবারই জানা শিল্প- সংস্কৃতির আলোচনায় ঢাকা সর্বদাই প্রাধান্য পেয়ে আসছে শুরু থেকেই। কিন্তু বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চা মানেই শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয় তা হয়তো আমরা ভুলেই গেছি। ঢাকার বাইরে যারা সংস্কৃতি চর্চা করে তাদের মূল্য কতটুকু?

আমাদের ঐতিহ্য- লেটো গান, আলকাপ, গম্ভীরা, নছিমনের গান, বিষহরি সঙ, যাত্রা এমনও হাজার ঐতিহ্যের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু উদাহরণ দিয়ে লাভ কী? তারা কি বর্তমানে বেঁচে আছে, না মরে গেছে, সে খবর ক'জন রাখেন!

অথচ সংস্কৃতি ঐতিহ্যের কথা বলতে গেলে গালভরা উচ্চারণ করে নামগুলো বলে থাকি। আজ অর্থের অভাবে বিলুপ্তপ্রায় আমাদের সংস্কৃতি। এখনো সময় আছে ফিরিয়ে আনার। তবে একমাত্র ফিরিয়ে আনার হাল ধরতে পারে রাষ্ট্র।

স্বাধীন বাংলাদেশের অনেকগুলো মন্ত্রণালয় আছে। তার মধ্যে যে মন্ত্রণালয়টি সংস্কৃতি অঙ্গনের হাল ধরতে পারে সেটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই ২০২৪-২০২৫ সালের অর্থ বরাদ্দের একটি মোটা অংশ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য বরাদ্দ করা হবে।

যদি বলি 'সংস্কৃতি হোক জনগণের ইতিহাস রচনায় বিশ্বাসী' তবে অতীতে যেমন বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে তা সত্যিই দুঃখজনক। আমাদের জানা অতীতে ০.০৯ শতাংশ থেকে ০.১৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হতো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এই বরাদ্দের নাম "বিনোদন সংস্কৃতি ও ধর্ম খাত"।

এমনতর বরাদ্দ সংস্কৃতি অঙ্গনে কোনো সুস্থ কাজ করা সম্ভব নয়। সরকারকে ভাবতে হবে বাংলাদেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে সংস্কৃতির অবকাঠামো।

পৃথিবীর মানুষের কাছে একটি দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরতে পারে তার ইতিহাস। সংস্কৃতিই বাঁচিয়ে রাখতে পারে তার দেশকে।

প্রথমেই বলা যেতে পারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিনোদনের শাখাগুলো আছে- সেখানে কত শতাংশ বরাদ্দ দিলে সুস্থভাবে কাজ করা সম্ভব।

তারপর যাত্রা দল, নাট্যদল, সংগীত দল, নৃত্যের দল থেকে আরম্ভ করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, নজরুল একাডেমী, বাংলা একাডেমী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ, সংগীত বিভাগ, নৃত্যকলা বিভাগ, চারুকলা বিভাগ থেকে শুরু করে সংস্কৃতি চর্চারত অনেক দল কাজ করে যাচ্ছে তাদের জন্য কত বরাদ্দ হওয়া জরুরি?

এসব নিয়ে একটা জরিপ করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে হবে, কত শতাংশ বরাদ্দ দিলে বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চায় উন্নয়ন ঘটবে এবং হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো আবার ফিরে আসবে। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে পুতুল নাচ, যাত্রাপালা, গ্রামীণ খেলাধুলা, অষ্টক, ঘাটু বা গাঁডু গান, গম্ভীরা, ছোকরা নাচ ইত্যাদি।

আর মেলার কথা নাই বললাম। দেশের ৬৪ জেলায় আলাদা মেলার প্রচলণ ছিল। এইসব মেলা বিস্তার লোকজ মোটিফকে কেন্দ্র করে। সেইসব মেলার গল্প আমরা শহুরে লোকজন জানি না। এগুলো যে গবেষণার অংশ, সংস্কৃতির অংশ তা যেন সবাই দেখিয়ে দিতে হয়।

এখন বলা যেতেই পারে বর্তমান সরকার সংস্কৃতির দিকে ফিরে তাকাবেন। অন্তত বৃহদাংশ সংস্কৃতি চর্চার জন্য বরাদ্দ করবেন এমনটাই দাবি সংস্কৃতি কর্মীদের।

মানুষ বাঁচতে চায় একটু আশা নিয়ে। যে আশাটুকু লুকিয়ে আছে নকশী কাঁথার সেলাইয়ের মধ্যে আলাদা রঙিন সুতায়। যেমন গেঁথেছে ঠিক তেমনি করে এক সুতায় বাঁচতে চায় আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় চাইলেই পারে প্রতিটি বিভাগে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে তার সংস্কৃতির মান ফিরে আনতে।

যদি বলি যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগ, সংগীত বিভাগ, নৃত্যকলা বিভাগ, চারুকলা বিভাগ চলমান সেখানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়ে প্রতিটি বিভাগের কাছ থেকে উৎসব ভিত্তিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায়-যেখানে দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ থাকবে, অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থী, গবেষক, কলাকুশলীরাও থাকবেন।

সংস্কৃতি ঐতিহ্যের কথা বলতে গেলে গালভরা উচ্চারণ করে নামগুলো বলে থাকি। আজ অর্থের অভাবে বিলুপ্তপ্রায় আমাদের সংস্কৃতি।

অন্যদিকে শিল্পকলা একাডেমী, শিশু একাডেমী বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় তাদের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। একই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, চলচ্চিত্র বিভাগ থেকে আরম্ভ করে শিল্পকলার সব শাখায় পদচারণা করতেই পারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।

তাহলে আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারব সংস্কৃতি চর্চার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম তৈরি হবে তাকে জানতে হবে একটি শিশুর মৌলিক চাহিদা কী?

সংস্কৃতি চর্চা ছাঁচে বেঁধে হয় না। চায় তার স্বাধীনতা। উন্মুক্ত করতে হবে সব সংস্কৃতি চর্চার। প্রয়োজন মনের শক্তি। প্রয়োজন স্বায়ত্তশাসন। তাই দরকার বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

প্রতিটি জেলায় প্রয়োজন সংস্কৃতি চর্চার আর্কাইভ। যেখানে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে তার দেশের ইতিহাস। এখানে একটা কথা পরিষ্কার যে, অর্থ দিয়ে কখনো শিল্পী-শিল্পকে পরিমাপ যায় না। কিন্তু অর্থের প্রয়োজন আছে শিল্পী- শিল্প ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।

সংস্কৃতি বাঁচলে পাল্টে যাবে আমাদের মানসিকতা। এই মানসিকতার পরিবর্তনে যেদিন একটা শিশুর বন্ধু হবে একটি পুলিশ, সেদিনই এই বাংলার মাটিতে ঝরবে না রক্ত।

এ সময়ের বর্ষায়, ঝড় বৃষ্টিতে ভিজুক মানুষের মন। সবাই মেতে উঠুক উৎসবে। অশুভর মুখোমুখি দাঁড়াতে শিখুক আজকের প্রজন্ম।

ড. আরিফ হায়দার ।। অধ্যাপক, নাট্যকলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top