আত্মহত্যায় সহায়তার অভিযোগে চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে মামলা
প্রকাশিত:
২৭ আগস্ট ২০২৫ ১৭:৪৯
আপডেট:
২৭ আগস্ট ২০২৫ ২২:৫০

যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যায় সহায়তা করার অভিযোগে ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি এবং কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম আল্টমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক বাবা-মা। তারা দাবি করেছেন, ওপেনএআইয়ের চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি তাদের সন্তানের আত্মহত্যায় অবদান রেখেছে। এই বাবা-মা বলেছেন, আত্মহত্যার পদ্ধতি এবং চিরকুট লেখার ক্ষেত্রেও চ্যাটজিপিটি তাকে সহায়তা করেছে।
তাদের সন্তান অ্যাডাম রেইন মাত্র ১৬ বছর বয়সে আত্মহত্যা করে বলে বুধবার (২৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
অ্যাডাম মৃত্যুর মাত্র ছয়মাস আগে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার শুরু করে। এই সময়ের মধ্যেই সে চ্যাটবটটির সঙ্গে নিজেকে এতটাই সংযুক্ত করে ফেলে যে, সে শুধু চ্যাটজিপিটিকেই নিজের একমাত্র সঙ্গী হিসেবে ভাবা শুরু করে, যে তাকে বোঝে।
চ্যাটজিপিটির কারণে অ্যাডাম বাস্তব জীবন,পরিবার, বন্ধু এবং প্রিয়জনদের থেকে দূরে সরে যায় বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা-মা।
তারা বলেছেন— অ্যাডাম চ্যাটজিপিটিকে একবার বলেছিল, সে তার ফাঁসের দঁড়িটি তার রুমে রাখতে চায়। যেন কেউ এটি দেখে এবং তাকে আত্মহত্যা থেকে রক্ষার চেষ্টা করে।
কিন্তু চ্যাটজিপিটি তাকে রুমে ফাঁসির দঁড়িটি না রাখতে অনুৎসাহিত এবং আত্মহত্যার চিন্তাভাবনার বিষয়টি সবার থেকে গোপন রাখতে বলেছিল বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
অ্যাডামের পরিবারের মতো অনেকেই জানাচ্ছেন, এআই চ্যাটবট ব্যবহার করে তাদের ছেলেমেয়েরা নিজেদের ক্ষতি করছে এবং কেউ কেউ আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিচ্ছে। এ নিয়ে অনেকে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে।
গত বছর ফ্লোরিডার মেগান গার্সিয়া নামে এক মা ‘ক্যারেক্টার’ নামের একটি এআই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার অভিযোগ, এই প্রতিষ্ঠানের চ্যাটবট ব্যবহার করে তার ১৪ বছরের ছেলে আত্মহত্যা করে। এর কিছুদিন পর আরও দুটি পরিবার একই অভিযোগ এনে মামলা করে। তারা জানায় ক্যারেক্টার এআই তাদের সন্তানদেরকে যৌন ও নিজেদের ক্ষতি করার মতো ক্ষতিকর জিনিস দেখিয়েছে।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো এখনও চলছে। তবে কোম্পানিটি বলেছে, তারা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি "নিরাপদ" জায়গা তৈরি করতে চায়। এর অংশ হিসেবে কিশোর-কিশোরীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
চ্যাটবট নিয়ে বিশ্বব্যাপী ইতিমধ্যে বেশ জোরালো শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ এআই প্রোগ্রামগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন তারা সবসময় ব্যবহারকারীর প্রতি সহনশীল ও বন্ধুর মতো আচরণ করে। এতে করে অনেক মানুষ এই চ্যাটবটগুলোর সঙ্গে আবেগপ্রবণভাবে জড়িয়ে পড়ছেন। এর ফলে তারা বাস্তব সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন এবং মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
অ্যাডামের পরিবারের করা মামলায় বলা হয়েছে, “চ্যাটজিপিটি যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছে সেভাবেই এটি কাজ করছিল। অ্যাডাম যেভাবে যা চাচ্ছিল এটি তাই দিচ্ছিল এবং তাকে উৎসাহিত করছিল। এরমধ্যে আত্মহননমূলক চিন্তাভাবনা এবং তার জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলোও ছিল।”
এদিকে চ্যাটজিপিটির মুখপাত্র অ্যাডামের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আত্মহননমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ব্যবহারকারীদের দূরে রাখতে তারা কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
সূত্র: সিএনএন
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: