সোমবার, ১৮ই আগস্ট ২০২৫, ৩রা ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


হোয়াইট হাউজের পথে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা


প্রকাশিত:
১৮ আগস্ট ২০২৫ ১২:৪০

আপডেট:
১৮ আগস্ট ২০২৫ ১৬:১৬

ছবি ‍সংগৃহিত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (১৮ আগস্ট) বৈঠকে বসছেন ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে। চলতি বছরের শুরুর দিকে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার পর দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে এটি প্রথম সাক্ষাৎ। তবে এবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকছেন ইউরোপীয় মিত্ররাও।

ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারসহ আরও কয়েকজন নেতা ওয়াশিংটনে জেলেনস্কির সঙ্গে যোগ দেবেন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আয়োজিত এই বৈঠকে।

এর আগে শুক্রবার আলাস্কায় ট্রাম্প পুতিন বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির প্রচেষ্টা চালালেও যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসেনি, বড় কোনো অর্জনও আসেনি।

এর তিনদিনের মাথায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সাথে। যে কারণে এই বৈঠকটি স্বাভাবিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, এর আগে দুই পারমানবিক শক্তিধর দেশ রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠকে কি হয়েছে, তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণাও ছিল না।

যে কারণে ইউরোপীয় নেতারা সোমবারের বৈঠকে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে চাইবেন, সেটি হলো ইউক্রেনের অনুপস্থিতিতে সে দেশটিকে নিয়ে কোনো চুক্তি যেন না হয়, অন্যদিকে কোনো চুক্তি হলে সেটি যেন শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিয়ে সুরক্ষিতও করা যায়।

রোববার একজন মার্কিন দূত জানিয়েছে, পুতিন ইউক্রেনের জন্য নেটো-সদৃশ নিরাপত্তা চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন। ট্রাম্পও তার সোশ্যাল প্লাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, রাশিয়ার ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হয়েছে। সাথে থাকুন।

তবে এর বাইরে বিস্তারিত কিছু তিনি লেখেননি।

সোমবারের বৈঠকের জন্য ওয়াশিংটনের পথে রয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন।

তবে, তাদের সবাই হোয়াইট হাউজে যাবেন কিনা, সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। এত অল্প সময়ে আটলান্টিক পেরিয়ে এতগুলো রাষ্ট্রপ্রধানের যাত্রার ঘটনা নজিরবিহীন। তবে, সংকট যে এতটা গুরুত্বর সেটিই হয়তো এর অন্যতম কারণ।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন এই কারণে যে ট্রাম্প হয়তো জেলেনস্কিকে কিছু শর্তে রাজি করানোর জন্য চাপ দিতে পারেন। বিশেষ করে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জেলেনস্কিকে বাদ দিয়ে পুতিনের সাথে ট্রাম্পের বৈঠকের কারণেই ইউরোপিয়ান নেতাদের এই উদ্বেগ।

তবে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিবিসির অংশীদার সিবিএসকে বলেছেন, জেলেনস্কিকে ট্রাম্পের জোর করে কোনো শান্তিচুক্তিতে রাজি করানোর বিষয়টি একটি হাস্যকর মিডিয়া গল্প।

গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প জেলেনস্কি বৈঠকে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি চান না নেটো নেতারাও। সেই বৈঠকে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছিলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন জেলেনস্কি। যা ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ককে অনেকটা নড়বড়েও করে দিয়েছিল।

ওই ঘটনার পর থেকে ইউরোপীয় নেতারা সম্পর্ক পুনর্গঠনে পর্দার আড়ালে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জেলেনস্কিকে চুক্তি করার ক্ষেত্রে আরো কৌশলী ভাষা ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। যেন ট্রাম্প কোনো কারণে নাখোশ না হন কিংবা এমন ভাষায় কথা বলার কথা বলছেন তারা, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করে।

গত এপ্রিল মাসে ইউক্রেন একটি খনিজসম্পদ চুক্তি সই করে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে আর্থিকভাবে অংশীদারও হয়। একই মাসে ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ব্যক্তিগতভাবে কথাও বলেন। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কেনারা আগ্রহও দেখায় ইউক্রেন।

গত জুলাইয়ে দুই নেতার মধ্যে ফোনালাপ হয়, এই ফোনালাপকে জেলেনস্কি খুব গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ বলেও উল্লেখ করেছিলেন।

এরপরই ট্রাম্পও ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা নিয়ে ক্রমেই বিরক্তি প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন। ট্রাম্প পুতিনকে "উন্মাদ" বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন। এবং মস্কোর উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন।

একদিকে এই আলোচনা যখন চলছিল তখন অন্যদিকে রুশ সেনারা ইউক্রেনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে তারা ইতিমধ্যে ইউক্রেনের প্রায় পাঁচভাগের একভাগ দখল করে নিয়েছে।

রোববার জেলেনস্কি ইউরোপিয়ান নেতাদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগ দেন। যেখানে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপিয়ান জোটের নেতারা ইউক্রেনকে রক্ষার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন।

এরপরই ইমানুয়েল ম্যাক্রো সাংবাদিকদের বলেন, তাদের পরিকল্পনা হলো সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ইউরোপিয়ানদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তুলে ধরা। শুক্রবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ মার্কিন টেলিভিশনকে বলেছেন যে, পুতিন জোরালো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে রাজি হয়েছেন।

জেলেনস্কি ও নেটো নেতারা আরও জানতে আগ্রহী, কারণ মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ মার্কিন টেলিভিশনকে বলেছেন, শুক্রবার পুতিন যে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় রাজি হয়েছে এবং সেটিকে 'গেম চেঞ্জিং' হিসেবেই তিনি আখ্যা দিয়েছেন।

উইটকফ বলেন, এমন একটি চুক্তির ইউক্রেনকে ভবিষ্যৎ আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে পারে। তিনি সিএনএনকে বলেন, আমরা এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছি যা ইউক্রেনকে সুরক্ষা দিতে পারে।

তিনি আরো জানান, রাশিয়া ইউক্রেনের পাঁচটি বিতর্কিত অঞ্চলের বিষয়ে "কিছুটা ছাড়" দিয়েছে। আলাস্কা বৈঠকের পর ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প বলেন, পুতিন ডনবাসের গুরুত্বপূর্ণ দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলগুলো নিজের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

কিন্তু রোববার নেটো নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার সতর্ক করে বলেন, ইউরোপের গত ৮০ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের অবসান খুব দ্রুতই যে হবে, এমনটি ভাবা ঠিক নয়। রুবিও বলেন, "আমাদের অনেক পথ এখনও বাকি"


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top