শনিবার, ১৬ই আগস্ট ২০২৫, ১লা ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


পাকিস্তানে বন্যা: মৃতদের দাফন করার মতো লোকও নেই গ্রামটিতে


প্রকাশিত:
১৬ আগস্ট ২০২৫ ১৮:২৫

আপডেট:
১৬ আগস্ট ২০২৫ ২০:৩৯

ছবি ‍সংগৃহিত

আকস্মিক বন্যা-ভূমিধসে বিধ্বস্ত পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়া। সরকারি হিসাবে প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে গত ৪৮ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ৩৪০ ছাড়িয়ে গেছে। সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রাণহাণী হয়েছে বুনের জেলায়। বুনেরের পীর বাবা সাহেব উপজেলার বেশন্ত্রি নাম একটি গ্রামে ভয়াবহ দৃশ্য সামনে এসেছে। সেখানে মৃতদের জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করার জন্য গ্রামটিতে কোনো মানুষ ছিল না। এসব কাজে পাশের গ্রামের মানুষদের সাহায্যে করতে হয়েছে।

বেশন্ত্রি গ্রামে আকস্মিক বন্যার খবর পেয়ে মসজিদের স্থানীয় ইমাম মওলানা আব্দুল সামাদ অন্য গ্রামবাসীর মতো তার পরিবারকেও দ্রুত বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেন।
তিনি তখন নফল নামাজ পড়ছিলেন। কিছুক্ষণ পর যখন তিনি বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তিনি দেখতে পান আকস্মিক এই বন্যার পানির তোড়ে তার বাড়িসহ অনেকের বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। বন্যায় পুরো বাড়ি ভেসে যাওয়ার সময় আব্দুল সামাদের পরিবারের পাঁচজন সদস্য ছিলেন ভেতরে। তারা এখনো নিখোঁজ। কেউ তাদের খবর জানে না।

সেই সময় পীর বাবা সাহেব উপজেলার সাবেক কর্মকর্তা বা তহসিল নাজিম আশফাক আহমদ ইসলামাবাদে ছিলেন। যখন তিনি তার বাড়ি থেকে খবর পান যে বিশাল বন্যা হানা দিতে পারে, তিনি তখনই তার পরিবারকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে পরিবারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে গেলে কারও কোনো খোঁজ মেলেনি। এমনকি পুরো গ্রামের কাউকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

এই উদ্বেগজনক অবস্থায় তিনি যখন তার গ্রামে পৌঁছান, তখন সর্বত্র কেয়ামতের দৃশ্য দেখা যায়। পুরো গ্রাম ধ্বংসপ্রাপ্ত, বাড়ি-ঘর বিনষ্ট হয়ে গেছে, আহতরা এখানে সেখানে লুটিয়ে পড়ে আছে। সর্বত্র ধ্বংস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যারা পানিতে ভেসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তারা গুরুতর আহত।

আশফাক আহমদের বাড়িতে তখন ১৪ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজনের লাশ পাওয়া গেছে, বন্যার সময় গাছে ওঠার কারণে একটি পরিবারের দুই সদস্য বেঁচে গেছেন, আর বাকি নয়জন সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন।

বেশন্ত্রি গ্রামে সাহায্য করতে আসাদের মধ্যে ছিলেন পাশের গ্রামের এক ব্যবসায়ী নূর ইসলাম এবং বিদেশ থেকে ছুটিতে নিজ ভিটায় আসা মুহাম্মদ ইসলাম। তারা দুর্গত গ্রামবাসীর সহায়তার এগিয়ে আসেন।

নূর ইসলাম জানান, তিনি দুপুর ১টার দিকে বেশন্ত্রি গ্রামে পৌঁছান। তখন সেখানে একটা বাড়িও অক্ষত ছিল না।

তিনি বলেন, ‘আমি সকাল ১১টায় বন্যার খবর পাই। এর সাথে সাথে এলাকার মসজিদগুলোয় ঘোষণা দিয়ে জানানো হয়। এরপর আমি অন্যান্য মানুষদের সাথে বেশন্ত্রি গ্রামের দিকে হেঁটে যাই। সন্ধ্যা নাগাদ আমি আমার বন্ধুবান্ধব এবং স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি জানাজায় অংশ নিয়েছি। আমার সংখ্যাটিও মনে নেই, যদিও আমি নিজে ছয়টি কবর খননে সাহায্য করেছি।’

নূর ইসলাম আরও বলেন, ‘বেশন্ত্রি গ্রামটি পীর বাবা সাহেব সদর উপজেলা থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে, কিন্তু আকস্মিক বন্যার কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। সর্বত্র ধ্বংসের চিহ্ন। ফলে ‌আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে দুপুর ১টা বেজে যায়। আমাদের আগেই সেখানে আরও অনেক লোক চলে এসেছিলো যারা ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যস্ত ছিল। সেখানকার দৃশ্য ছিল ভয়াবহ। আমি দেখেছি আহতরা মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। যারা সেখানে পৌঁছেছিল তারা আহতদের তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল, আবার অনেকে ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করছিল।’

ব্যক্তিগতভাবে বেশন্ত্রি গ্রামের মসজিদের ইমাম মওলানা আব্দুল সামাদকে চিনতেন উল্লেখ করে নূর ইসলাম বলেন, ‘তিনি আমাকে বলেছেন, যখন বন্যার পানি আসছিল, তখন পানির তোড় খুব একটা বেশি ছিল না। তিনি পরিবারের সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তারা যেন এলাকার অন্যান্য লোকদের মতো তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলে যান। তিনি নফল নামাজ পড়া শেষ করে আসবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি পীর বাবা সাহেব উপজেলার সাবেক কর্মকর্তা আশফাক আহমেদের পরিবারের সদস্যদের কবর খননে সাহায্য করেছি। দুর্ঘটনার সময় আশফাক আহমেদ ইসলামাবাদে ছিলেন। তার পরিবারের দশজন সদস্য এখনো নিখোঁজ।’

বুনারের জরুরি উদ্ধার বিভাগের তথ্য মতে, বেশন্ত্রি গ্রামের মোট জনসংখ্যা প্রায় এক হাজার। অনেক মানুষ তাদের পরিবারের সদস্যদের, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু, তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। বহু মানুষ এখনো তাদের পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পাচ্ছেন না।

প্রবাসী মুহাম্মদ ইসলাম জানান, তিনি দুপুর আড়াইটায় সেখানে পৌঁছান। পুরো গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়েছিলো তখন, যেন এক মৃত্যুপুরি। সেই দৃশ্য ছিল ভয়াবহ ও মর্মস্পর্শী।

তিনি বলেন ‘সেখানকার সব ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা মৃতদেহ রাখার জন্য উপযুক্ত কোনো জায়গা ছিল না। দুর্গত মানুষদের সাহায্যে শত শত মানুষ এগিয়ে এসেছিলো এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সবাই মৃতদেহ উদ্ধার ও কবর খোঁড়ার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।’

জরুরি উদ্ধার বিভাগ বা রেসকিউ ১১২২ বুনেরের কর্মকর্তা আব্দুল রহমান জানান, বেশন্ত্রি ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি গ্রামও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের উদ্ধারকারী দল ইতোমধ্যেই দুর্গত অঞ্চলে পৌঁছেছে। পাশাপাশি প্রদেশের অন্যান্য এলাকা থেকেও উদ্ধারকারী দল আসছে।

প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার (পিডিএমএ) জানিয়েছে, ভারী বর্ষণ ও বন্যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো সোয়াত, বুনের, বাজাউর, তোরঘর, মানসেহরা, শাংলা এবং বটগ্রাম। ভারী বৃষ্টিপাত এবং আকস্মিক বন্যার কারণে সংস্থাটি বাজাউর এবং বটগ্রামকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করেছে।

এদিকে বাজাউর জেলায় ত্রাণ সরবরাহসহ একটি এম-১৭ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে এবং দুই পাইলট এবং তিনজন ক্রু নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সরকার।

সূত্র: বিবিসি


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top