সোমবার, ৪ঠা আগস্ট ২০২৫, ২০শে শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


কলকতায় পর্যটকশূন্য ‘মিনি বাংলাদেশ’, ক্ষতি ছাড়াল ১ হাজার কোটি রুপি


প্রকাশিত:
৪ আগস্ট ২০২৫ ১৬:৫৮

আপডেট:
৪ আগস্ট ২০২৫ ২০:০১

ছবি ‍সংগৃহিত

এক সময় কলকাতার নিউ মার্কেটের পাশের ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও মার্কুইস স্ট্রিট ছিল বাংলাদেশি পর্যটকদের সরব উপস্থিতিতে মুখরিত। সাশ্রয়ী হোটেল, দেশি খাবার, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা ও কেনাকাটার জন্য জায়গাটি পরিচিত ছিল ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে। তবে গত এক বছর ধরে এই এলাকাটি প্রায় পর্যটকশূন্য। রাস্তাঘাট এখন সুনসান, দোকানপাটে নেই সেই ভিড়।

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনার সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে হঠাৎ করেই থেমে যায় বাংলাদেশের পর্যটকদের কলকাতা যাত্রা। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ এলাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক বছরে এ অঞ্চলের ক্ষতি ছাড়িয়েছে ১ হাজার কোটি রুপি, আর আশপাশের নিউ মার্কেট ও বুররাবাজারের ক্ষতি ধরলে সেই অংক ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ব্যবসা ধস, দোকানপাট বন্ধ
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খান জানান, আগে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির ব্যবসা হতো এই এলাকায়। এখন সেই অংক নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল, রেস্তোরাঁ, মানি এক্সচেঞ্জ, চিকিৎসা ও পরিবহন ব্যবসা সবখানেই ধস নেমেছে।

মার্কুইস স্ট্রিটের ট্রাভেল কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস জানান, আগে প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে কয়েকটি বাস পর্যটক নিয়ে আসত, পার্কিংয়ের জায়গা পাওয়া কঠিন হতো। এখন পর্যটকের দেখা নেই।

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার অবস্থাও একই রকম। ইনতেজার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা পুরোপুরি বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এখন টিকে থাকার লড়াই করছি।”

রেস্তোরাঁ বন্ধ, চাকরি হারানো শত শত মানুষ
এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশ মাঝারি ও ছোট রেস্তোরাঁ ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বড় রেস্তোরাঁগুলোও কর্মী ছাঁটাই করে খরচ কমিয়ে চালাতে বাধ্য হয়েছে। ‘রাধুনী’ রেস্তোরাঁর মালিক এনসি ভৌমিক বলেন, “ব্যবসা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, এইভাবে চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন।”

করোনার ধাক্কা সামলে ওঠার পর অনেকে ধারদেনা করে হোটেল ও রেস্তোরাঁ সাজিয়েছিলেন, কিন্তু নতুন করে আবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। মানসিক চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেক মালিক।

পর্যটকনির্ভর সাধারণ মানুষ দিশাহীন
এই এলাকায় যারা হোমস্টে চালাতেন, গাইডের কাজ করতেন, খাবার সরবরাহ করতেন, তারাও এখন কর্মহীন। হোটেলকর্মী, ড্রাইভার, দোকানদারসহ শত শত মানুষ আয়ের উৎস হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রাসুল বলেন, 'দুইটি গাড়ি কিনেছিলাম পর্যটকের চাহিদা দেখে। এখন মাসে ৫-৬টা বুকিং পাই, তাও স্থানীয়, যারা ঠিকমতো ভাড়াও দিতে চায় না। অথচ আমাকে মাসে দেড় লাখ রুপি ইএমআই দিতে হয়।'

একবছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি মিনি বাংলাদেশ
করোনার সময় যেমন ক্ষতি হয়েছিল, এবার তা যেন আরও গভীর। এক বছর কেটে গেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশি পর্যটক ফিরে না আসা পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

মিনি বাংলাদেশে এখন শুধু অতীতের ব্যস্ততা আর সাফল্যের স্মৃতি। আশার কথা, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো প্রাণ ফিরে পেতে পারে কলকাতার এই বাংলাদেশি পাড়া। তবে ততদিন পর্যন্ত এখানকার মানুষকে টিকে থাকতে হবে অনেক কষ্টে, ক্ষতির বোঝা বয়ে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top