শনিবার, ২৬শে জুলাই ২০২৫, ১১ই শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


কাল্পনিক দেশের ‘দূতাবাস’ খুলে প্রতারণা, ভুয়া রাষ্ট্রদূত গ্রেফতার


প্রকাশিত:
২৪ জুলাই ২০২৫ ১৯:৫৩

আপডেট:
২৪ জুলাই ২০২৫ ১৯:৫৬

ছবি সংগৃহীত

ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে ভুয়া দূতাবাস চালানোর অভিযোগে মঙ্গলবার এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)।

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম হর্ষবর্ধন জৈন। বছর ৪৮-এর ওই ব্যক্তি গাজিয়াবাদে একটা বাড়ি ভাড়া করে সেখান থেকেই ভুয়া দূতাবাস পরিচালনা করছিলেন বলে অভিযোগ। তার কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে সন্দেহজনক ও ভুয়া সামগ্রী উদ্ধার করেছে এসটিএফ। এই তালিকায় কূটনৈতিকদের অনুকরণে তৈরি ভুয়া নম্বর প্লেট লাগানো চারটি গাড়ি ছিল। এছাড়া গাড়িতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি অতিরিক্ত ১৮টি ভুয়া নম্বরপ্লেটও ছিল।

এছাড়া ১২টি অবৈধ পাসপোর্ট, দুটি ভুয়া প্যান কার্ড এবং ৩৪টা দেশ ও কোম্পানির জাল সিলমোহর, দুটি প্রেস কার্ড, নগদ ৪৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা, বিভিন্ন দেশের মুদ্রা এবং কোম্পানি সম্পর্কিত নথিও উদ্ধার করা হয়েছে।

ওয়েস্টার্কটিকা, সাবোরগা, পলভিয়া এবং লোডোনিয়ার মতো তথাকথিত ‘দেশের’ কনসাল বা রাষ্ট্রদূত বলে পরিচয় দিয়ে মানুষকে প্রতারণা করতেন বলেও এসটিএফ-এর তরফে জানানো হয়েছে। মূলত দেশ হিসেবে এগুলোর স্বীকৃতি নেই।

এসটিএফ-এর নয়ডা ইউনিটের এসএসপি সুশীল ঘুলে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি ওয়েস্টার্কটিকা, সাবোরগা, পলভিয়া, লোডোনিয়া এবং আরও কয়েকটা তথাকথিত দেশের দূত সেজে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করত। তার কাছ থেকে অনেক আপত্তিকর সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। যে সমস্ত গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে কূটনীতিকদের ব্যবহার করা গাড়ির নম্বর প্লেটের অনুকরণে তৈরি নম্বর প্লেট লাগানো ছিল। এতে কোনো অনুমোদিত সংস্থার স্বীকৃতি ছিল না।’

বেশ কয়েক বছর ধরেই ওই জাল দূতাবাস চালানো হচ্ছিল বলে পুলিশ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। গাজিয়াবাদের ভাড়া করা বাড়ি থেকেই কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছিল।

এসএসপি সুশীল ঘুলে জানিয়েছেন, ‘ওই অভিযুক্ত ব্যক্তি গাজিয়াবাদের কবি নগরের কেবি-৪৫-এর বাসিন্দা। কবি নগরেরই কেবি-৩৫-এতে একটা বাড়ি ভাড়া করে ওই বেআইনি দূতাবাস চালাচ্ছিল।’

আন্তর্জাতিকস্তরে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে এমন দাবি জানিয়ে বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আদায় করতেন ওই ব্যক্তি। প্রমাণ হিসাবে গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিও তাদের দেখাতেন যার সবই জাল করা।

এসএসপি ঘুলে বলেছেন, ‘অন্যদের সামনে নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি জাহির করতে এবং তাদের ঠকানোর উদ্দেশ্য নিয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে নিজের মর্ফ করা (বিকৃত) ছবি ব্যবহার করত।’

পুলিশ জানিয়েছে হর্ষবর্ধন জৈনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন তিনি। তাছাড়া ভুয়া শেল কোম্পানির মাধ্যমে হাওয়ালা (অর্থ স্থানান্তরের একটি পদ্ধতি) চক্র চালাত বলেও জানা গেছে।

এদিকে ওই এলাকার বাসিন্দারা ঘুণাক্ষরেও ভুয়া দূতাবাস চালানোর বিষয়ে টের পাননি। কারণ বাড়ির সামনে গাড়ির বহর লেগে থাকত।

প্রতিবেশীদের ধারণা ছিল জৈন বাস্তবে একজন কূটনীতিক। ওই এলাকার এক তরুণী বার্তাসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘আমরা ভাবতাম কোনো কূটনীতিক হয়তো এখানে থাকেন। লোকজন খুব বেশি বাড়িতে থাকতে দেখিনি। বাড়ির সামনে অনেক গাড়ি দেখা যেত। বিভিন্ন মাইক্রোকান্ট্রির পতাকাও থাকত।’

তিনি বলেন, ‘কেউ লক্ষ্যই করিনি যে এখানে একটা ভুয়া দূতাবাস চালানো হচ্ছে। কার পক্ষে বোঝা সম্ভব! আমরা ভাবতাম প্রভাবশালী কোনো কূটনীতিক হয়ত এই পাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন।’

অন্যদিকে এর আগেও ২০১১ সালে হর্ষবর্ধন জৈনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বিষয়টাকে নিশ্চিত করেছেন এসএসপি সুশীল ঘুলে।

তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘সেই সময় তার কাছ থেকে একটা স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়েছিল। সেই সময় কবিনগর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।’

এইবার তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু করেছে গাজিয়াবাদ থানার পুলিশ।

বেআইনি কার্যকলাপ, নথি রাখা ও জালিয়াতি এবং প্রতারণার অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ওয়েস্টার্কটিকা

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ওয়েস্টার্কটিকা নামটাও খবরের শিরোনামে চলে এসেছে। গ্রেফতার হর্ষবর্ধন নিজেকে যে দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত হিসেবে পরিচয় দিতেন তার মধ্যে একটা এই ওয়েস্টার্কটিকা। প্রথমবার নাম শুনে একে দূরবর্তী কোনো দেশ বা ছোট দেশ বলে মনে হতে পারে। তবে ওয়েস্টার্কটিকা আসলে একটা কাল্পনিক দেশ।

২০০১ সালে ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরি নামের মার্কিন এক নৌ কর্মকর্তা এই দেশ গঠনের দাবি করেন। ওয়েস্টার্কটিকাকে অ্যান্টার্কটিকার বরফাচ্ছাদিত অংশের প্রতিনিধি হিসেবে বর্ণনা করা হয় যার ওপর কোনো দেশের আনুষ্ঠানিক দাবি নেই। কিন্তু বিশ্বের কোনো দেশ বা জাতিসংঘ একে সত্যিকারের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। দেশটির নিজস্ব ওয়েবসাইট, পতাকা, জাতীয় প্রতীক এবং একটা মুদ্রাও রয়েছে।

ওয়েস্টার্কটিকা নামে ট্র্যাভিস ম্যাকহেনরির তৈরি একটা সংস্থাও রয়েছে। একটা অলাভজনক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত যার লক্ষ্য পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো।

ওয়েস্টার্কটিকা 'সরকারের' নেতৃত্বে রয়েছেন গ্র্যান্ড ডিউক ট্র্যাভিস, যার সাহায্যের জন্য একজন প্রধানমন্ত্রী এবং 'রয়্যাল কাউন্সিল' রয়েছে।

এ ছাড়া গ্র্যান্ড ডুকাল কোর্ট নামে একটা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা ওয়েস্টার্কটিকায় প্রণীত আইনগুলো ব্যাখ্যা করার কাজ করে। তবে এই সমস্ত কিছুই ডিজিটাল ও প্রতীকী কাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বাস্তব জগতে যার কোনো আইনি বা কূটনৈতিক বৈধতা নেই।

ওয়েস্টার্কটিকাতে বিভিন্ন সাম্মানিক পদ বা উপাধি রয়েছে। 'পিয়ার্স'ও রয়েছেন যারা এই নিজেদের জ্ঞান, সময় এবং দক্ষতার মাধ্যমে এই সংস্থার উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন।

এদিকে ওয়েস্টার্কটিকার দূত হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেওয়া জৈনের গ্রেফতারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ওই সংস্থার পক্ষ থেকে একটা বিবৃতিও জারি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, এইচ ভি জৈন ওয়েস্টার্কটিকাকে উদারহস্তে অনুদান দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে তার দেশে আমাদের পরিবেশগত ও দাতব্য মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবকদের দলে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাকে ‘অনারারি কনসাল টু ইন্ডিয়া’র আনুষ্ঠানিক উপাধি দেওয়া হয়েছিল, কখনোই রাষ্ট্রদূতের পদ বা কর্তৃত্ব দেওয়া হয়নি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top