৪৮ ঘণ্টায় তিন শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল
প্রকাশিত:
৩ জুলাই ২০২৫ ২১:১৭
আপডেট:
৪ জুলাই ২০২৫ ০৫:২২

যুদ্ধবিরতি নিয়ে তোড়জোড়ের মধ্যেও গাজায় চরম বর্বরতা দেখিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে তিন শতাধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এ সময়ের মধ্যে গাজার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২৬টি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে নেতানিয়াহুর সেনারা। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, নিহত ওই তিন শতাধিক ফিলিস্তিনির মধ্যে শুধু গতকাল বৃহস্পতিবারই নিহত হয়েছে ৭৩ জন। এই ৭৩ জনের মধ্যে ৩৩ জন নিহত হয়েছেন ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিতর্কিত সংগঠন গাজা হিউম্যানিটিরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো ছাড়াও গাজাজুড়ে বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। গতকালও ওই ত্রাণ কেন্দ্রগুলো ছাড়াও হামলা চালিয়েছে আল-মাওয়াসির একটি শরণার্থীশিবিরে। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের অস্থায়ী তাবুই ছিল তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আল-মাওয়াসিতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৩ জন। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আরেক আশ্রয়কেন্দ্র মোস্তাফা হাফেজ স্কুলেও ইসরাইলি সেনাদের বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন ১১ জন।
গাজার দেইর আল-বালাহ শহর থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, জিএইএফ পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্রগুলোর বাইরে খাদ্যসামগ্রীর জন্য অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনিদের ওপর নতুন করে গুলিবর্ষণ শুরু হয়েছে। গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মার্কিন নিরাপত্তাকর্মীরা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর সরাসরি গুলি ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুইজন মার্কিন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা এ বিষয়টি সামনে আনছেন কারণ ঘটনাগুলো ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক।’ তাদের দাবি, নিয়োগ পাওয়া নিরাপত্তাকর্মীরা অধিকাংশই অযোগ্য এবং কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া তাদের। এসব নিরাপত্তাকর্মীরা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত বলেও জানান ওই দুই কর্মকর্তা। তাদের ভাষ্য—তাদের হাতে শুধু অস্ত্রই তুলে দেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়েছে অবাধ স্বাধীনতা। যাকে ইচ্ছা তাকে গুলি করছে এই নিরাপত্তাকর্মীরা।
এরই মধ্যে অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ১৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা গত মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে জিএইচএফ বন্ধের দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করেছে, জিএফএইচ এমন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করছে যার মাধ্যমে ক্ষুধাকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ওই সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ইসরাইলি বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রায় নিয়মিতভাবে খাদ্য সংগ্রহ করতে আসা বেসামরিক মানুষের ওপর গুলি চালাচ্ছে। তাদের হিসাব মতে, গত মে মাসের শেষে জিএইচএফের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে প্রায় ৪ হাজার জন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরাইলের বর্বরতায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৫৬ হাজার ৬৪৭ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১০৫ জন।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: