বুধবার, ৯ই জুলাই ২০২৫, ২৫শে আষাঢ় ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ট্রাম্পের বাড়তি শুল্কে যেসব খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে


প্রকাশিত:
৯ জুলাই ২০২৫ ১৪:১৮

আপডেট:
৯ জুলাই ২০২৫ ২০:২৭

ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রকে। চলতি বছর থেকে ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ১ আগস্ট থেকে এটি কার্যকর হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার চিঠি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিষয়টি জানিয়েছেন। যদিও শুল্ক কমানো নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দরকষাকষি চলছে।

অতিরিক্ত এ শুল্কহার কার্যকর হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে দেশের পোশাকশিল্পসহ রপ্তানি খাত। বিশেষ করে পোশাক খাতে বড় ধরনের অশনিসংকেত দেখা দিতে পারে। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অনেকটা কমিয়ে দেবে। চীন-পাকিস্তান-ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে আমাদের।

যুক্তরাষ্ট্র হলো বাংলাদেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার। এই বাজারে যদি এতো শুল্ক দিতে হয় তবে তৈরি পোশাক শিল্পের মুনাফা কমে যাবে। এছাড়া এর প্রভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমনটিই মনে করেন বিশেষজ্ঞ ও পোশাকশিল্পের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।

যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে আশা প্রকাশ করে বলা হচ্ছে, এ শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো আলোচনা অব্যাহত আছে। আজ আরেক দফা আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বৈঠক করবেন। এছাড়া নতুন শুল্কহার নিয়ে ১০, ১১ ও ১২ জুলাই ইউএসটিআর-এর সঙ্গে নেগোসিয়েশন বৈঠক রয়েছে বাংলাদেশের। বৈঠকগুলোর পর শুল্কহার আরও কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগই আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর একক দেশ হিসাবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। গত বছর মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির বাজারে মোট রপ্তানি পণ্যের ৮৭ শতাংশ হচ্ছে তৈরি পোশাক। গত বছর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-ঘাটতির পরিমাণ ৬১৫ কোটি ডলার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক কমানোর শর্ত হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করে সেসব পণ্যে পর্যায়ক্রমে শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি হ্রাস চেয়েছে। এরই অংশ হিসাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে সরকারি খাতে ফুড ড্রিংক, বোয়িং বিমান ও মিলিটারি ইক্যুইপমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গম, সয়াবিন এয়ারক্রাফট ও অন্যান্য মেশিনারির ওপর ডিউটি খুব কম। তুলা আমদানিকে আরও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তুলা আমদানির ওপর ২ শতাংশ এআইটি আছে। সেটি প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি যাতে বেশি হয় সেজন্য কিছু সুবিধা দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।

এদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে আর যেসব দেশ শুল্কের খড়গে পড়েছে তার মধ্যে রয়েছে—লাওস, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া, হার্জেগোভিনা, মালয়েশিয়া, তিউনিসিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়েছে মিয়ানমার ও লাওস। তবে ট্রাম্প আগেই ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ও চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাকিস্তানও পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে। ফলে এটা সুস্পষ্ট যে, তিনটি দেশের তুলনায় তৈরি পোশাকে বাংলাদেশকে বেশি প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top