৫৩ বছরের বসতভিটা ছাড়তে আল্টিমেটাম, উচ্ছেদের মুখে ১৬টি পাহাড়িয়া পরিবার
প্রকাশিত:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:১৬
আপডেট:
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:১৫

রাজশাহী শহরের মোল্লাপাড়া এলাকায় দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে বসবাসরত ১৬টি পাহাড়িয়া পরিবারের বসতভিটা ছাড়তে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী জমির মালিকানা দাবি করে এসব পরিবারকে এলাকা ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনটি পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। বাকি ১৩টি পরিবারকে আগামী রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এর মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত গমনকারী পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের ছয়টি পরিবার স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে বসতভিটা না পেয়ে মোল্লাপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা ইন্দ্র ধুপির ১৬ কাঠা জমিতে বসতি গড়ে তোলে। তিন প্রজন্মের ব্যবধানে এখন এখানে ১৬টি পরিবার বসবাস করছে। এলাকাটি স্থানীয়দের কাছে 'আদিবাসীপাড়া' নামে পরিচিত।
সাম্প্রতিক সময়ে সাজ্জাদ আলী নামের এক ব্যক্তি জমির মালিকানা দাবি করে এলাকাবাসীকে উচ্ছেদের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তার দাবি, ইন্দ্র ধুপি মৃত্যুর আগে এই জমি তাকে লিখে দিয়েছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, সাজ্জাদের জমির কাগজ জাল এবং এর আগে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামও সেটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
ভুক্তভোগী মিশ্র রাম বর্মণ (৪০) বলেন, সাজ্জাদ বলেছে, ঘর ছেড়ে দে, একটা খাসি কাটবো, সবাই মিলে খাও, এরপর রবিবারের মধ্যে চলে যা। তিন মাস, ১৫ দিন, ৭ দিন করে সময় দিতেছে। এখন বলতেছে আর সময় নাই।
তিনি আরও জানান, সাজ্জাদ প্রথমে ছয়টি পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। পরে সেই প্রস্তাব কমে দাঁড়ায় ছয় লাখ টাকায়। অর্থাৎ, একটি পরিবারে তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক থাকলেও প্রত্যেকেই পাবে মাত্র দুই লাখ টাকা করে।
৮০ বছর বয়সী ফুলমনি বিশ্বাস, যিনি এই মহল্লার প্রথম বাসিন্দাদের একজন, বলেন, কোথায় যাব? আমরা তো এখুন আন্ধার ঘরে হাইতড়্যাই তো পাছি ন্যা। আন্ধার ঘরে মানুষ কিছু পায় কি না? ওই রকম আমরাও কিছু খুইজে পাছি ন্যা।
অভিযুক্ত সাজ্জাদ আলী দাবি করেন, এই জমি আমি অনেক আগেই কিনেছি। পুনর্বাসনের জন্য পরিবারগুলোকে টাকা দিয়েছি। কাউকে জোর করে উচ্ছেদ করছি না। সুন্দরভাবেই বিদায় দিচ্ছি।
তবে তিনি জমি কেনার তারিখ, দলিল নম্বর ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। এ বিষয়ে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বলেননি কিছু; তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি।
নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি আজিজুল বারী বলেন, ‘এ রকম কোনো বিষয় আমি জানি না। আমাকে কেউ জানায়নি। অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করা হলে পাহাড়িয়ারা আমার কাছে আসতে পারে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: