শুক্রবার, ২৯শে আগস্ট ২০২৫, ১৩ই ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


স্ট্রোকের রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ১৭ কোটি টাকার ওষুধ আনলেন শীর্ষ শ্রেয়ান


প্রকাশিত:
২৮ আগস্ট ২০২৫ ২০:৩২

আপডেট:
২৯ আগস্ট ২০২৫ ০০:৪৯

ছবি সংগৃহীত

স্ট্রোক করা রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ এনেছেন রাজশাহীর ইন্টার্ন চিকিৎসক শীর্ষ শ্রেয়ান। শীর্ষ শ্রেয়ানের গবেষণা ও প্রচেষ্টার কারণে দাতাসংস্থা ডিরেক্ট রিলিফ দুই হাজার ৫০০ ভায়াল এল্টিপ্লেস ইনজেকশন দিয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৭ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে এই জীবন রক্ষাকারী ওষুধ প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ইন্টার্ন করছেন শীর্ষ শ্রেয়ান। তার বাড়ি ময়মনসিংহে। বাবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তাই তার বেড়ে ওঠা সাভারে। শীর্ষ রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে। জুলাইয়ে এমবিবিএস শেষ করে এখন ইন্টার্ন করছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে- ইন্টার্ন চিকিৎসক হয়েও তার উদ্যোগটা প্রশংসনীয়। গত ২৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা থেকে আড়াই হাজার ভায়াল এল্টিপ্লেস পেয়েছে হাসপাতাল। বিনামূল্যে পাওয়া ভায়াল এল্টিপ্লেসের দাম প্রায় ১৭ কোটি টাকা।

এল্টিপ্লেস (Alteplase) হচ্ছে একটি থ্রোমবোলাইটিক ওষুধ, যা সাধারণত স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ফলে রক্তনালিতে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্ত মুক্ত করতে ইনজেকশন আকারে ব্যবহার করা হয়। এটি রক্তের মধ্যে জমে থাকা থ্রম্বাস বা ব্লক দূর করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতেও সাহায্য করে।

চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশে শুধু একটি কোম্পানি এই ওষুধ বাজারজাত করে। ৫০ মিলিগ্রামের ইনজেকশন ও ইনফিউশনের প্রতি ভায়ালের দাম পড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। রোগীর ওজন ৬০ কেজির বেশি হলে প্রয়োজন পড়ে দুই ভায়াল। স্ট্রোকের রোগীদের রক্ত জমাট বেঁধে গেলে সাড়ে ৪ ঘণ্টা ও হৃদরোগীদের সাড়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যে এটি প্রয়োগ করতে হয়। দরিদ্র অনেক রোগীই দামি এই ওষুধ কিনে প্রয়োগ করতে পারেন না।

জানা গেছে- স্ট্রোক প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং তা গবেষণায় কাজ করে ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএসও)। এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শীর্ষ শ্রেয়ান তাদের একটি গবেষণা দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। ওই গবেষণা প্রকল্পে শীর্ষ গবেষণা সহকারী ছিলেন। পরবর্তীতে গবেষণাপত্রটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। এটি ২০২৪ সালের অক্টোবরে সেরা গবেষণা হিসেবে নির্বাচিত হয়।

এটি দেখে আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা ডিরেক্ট রিলিফ-এর এশিয়া প্যাশিফিক রিজিয়নের ডিরেক্টর গর্ডন উইলকক অস্ট্রেলিয়া থেকে গত মার্চে শীর্ষকে ই-মেইল করেন। জানান, তারা রামেক হাসপাতালকে এল্টিপ্লেস অনুদান দিতে চান। সেটি নেওয়া, সংরক্ষণ করা ও রোগীদের প্রয়োগের মতো সক্ষমতা এই হাসপাতালের আছে কি না। ইন্টার্ন চিকিৎসক শীর্ষ তখন বিষয়টি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আযাদের সঙ্গে আলাপ করেন। পরে গর্ডন উইলককের সঙ্গে তারা ভার্চুয়াল বৈঠক করেন।

বৈঠকে অধ্যাপক ডা. আজিজুল হক আযাদ আলাপকালে গর্ডন উইলকককে জানান, এই ওষুধ শুধু স্ট্রোকের রোগীদের জন্য দেওয়া হলে লাভ হবে না। কারণ, অধিকাংশ স্ট্রোকের রোগী সাড়ে ৪ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে আসেন। তাদের ক্ষেত্রে ওষুধটা ব্যবহার করা যাবে না। হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে সাড়ে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। যদি স্ট্রোক ও হৃদরোগী- উভয় রোগীদের ওষুধটি প্রয়োগ করার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তারা সেগুলো নেবেন।

কয়েকদিন পর গর্ডন উইলকক এতে রাজি হয়ে ওষুধগুলো সরবরাহ করতে চান। এরপর ডিরেক্ট রিলিফের সঙ্গে রামেক হাসপাতালের চুক্তি হয়। গর্ডন উইলকক প্রথমে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ই-মেইলে সেটি রামেক হাসপাতালে পাঠান। সেটি প্রিন্ট করে হাসপাতালের পক্ষে স্বাক্ষর করেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ। এরপর আবার চুক্তিপত্রটি স্ক্যান করে গর্ডন উইলককের কাছে পাঠানো হয়।

গেল ২০ আগস্ট এই ওষুধ ঢাকায় আসে। এরপর একটি ফ্রোজেন ভ্যানে করে ২৫ আগস্ট ওষুধ আসে রাজশাহী। বুধবার (২৭ আগস্ট) থেকে বিনামূল্যে রোগীদের এই ইনজেকশন প্রয়োগ করা হচ্ছে।

শীর্ষ শ্রেয়ান বলেন, ওই সংস্থার আঞ্চলিক ডিরেক্টর আমাকে ই-মেইলে জানিয়েছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ওষুধটি প্রয়োজন আছে কি না। থাকলে কী পরিমাণ। মোটামুটি ৫০০০ ভায়ালের মতো ছিল। এই খবরটি পাওয়ার পর আমি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা বলি। আমাদের এখান থেকে প্রায় ২৫০০ ভায়ালের চাহিদা দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে গবেষণা করেছি। বাংলাদেশের ভাইরাস নিপা গবেষণায় কাজ করেছি। গবেষণার কাজের সময় চেনাজানা হয় তাদের সঙ্গে। আমাদের মেডিকেলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে। হাসপাতালে যেসব ওষুধ থাকে না সেগুলোর একটা লিস্ট তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। এরপর হয়ত বা আমরা ওষুধ পাব।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়সাল আলম বলেন, শিক্ষকেরা অনেক ফান্ড বাইরে থেকে এনেছেন, কিন্তু আমার জানামতে কোনো শিক্ষার্থী পারেননি। এটা শীর্ষ করে দেখিয়েছেন। এটা অভাবনীয়। আমি তাকে নিয়ে গর্বিত।

শীর্ষ শ্রেয়ানের মেন্টর অধ্যাপক আজিজুল হক আযাদ বলেন, আমরা রোগীদের জন্য এটা করতে চেয়েছিলাম। রোগীরা বিনামূল্যে পাচ্ছেন। অথচ অনেক দামি বলে অনেকেই কিনতে পারেন না। তারপরও এই ওষুধটা একেবারেই অরিজিনাল। অনেক ভালো। আমরা সত্যিই শীর্ষকে নিয়ে গর্বিত।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জানান, বুধবার থেকেই এই ওষুধ রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। খবর নিয়ে জেনেছেন আজ বিকেল পর্যন্ত ৭০ ভায়াল ব্যবহার হয়েছে। এই কৃতিত্ব শীর্ষর। সে অত্যন্ত মেধাবী। এখন ভালো লাগা কাজ করছে। সবচেয়ে ভালো লাগবে, যদি রোগীরা দ্রুত হাসপাতালে আসেন। কারণ রোগীদের মাঝে দ্রুত হাসপাতালে আসার প্রবণতা কম। রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে আসার জন্য বলা হচ্ছে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top