সুদ দিতে না পারায় বসতঘরে তালা, ৮ দিন ধরে বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার
প্রকাশিত:
২৩ আগস্ট ২০২৫ ১০:৫১
আপডেট:
২৩ আগস্ট ২০২৫ ১৩:৪২

নোয়াখালীর হাতিয়ায় সুদের টাকার জন্য রিকশাচালক একরাম হোসেনের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তালা মেরে দিয়েছে তোফায়েল আহম্মদ নামে এক সুদ কারবারি। এতে গত ৮ দিন ধরে স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে খোলা বারান্দায় ঝড়–বৃষ্টির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে একরামের পরিবার।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে চরকিং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চরবগুলা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের সামনে বসে আছেন একরামের স্ত্রী ও শাশুড়ি। তাদের দুটি বসতঘরের দরজায় তালা ঝুলছে। পাশে ছোট ছোট বাচ্চারা কাঁপতে কাঁপতে মশারির নিচে বসে আছে।
স্থানীয়রা জানান, নিজের প্রয়োজনে একরাম তোফায়েল আহম্মদের কাছ থেকে সুদের ভিত্তিতে টাকা নেন। নিয়মিত সুদের টাকা দিতে না পারায় তোফায়েল তার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তালা মেরে দেন। এতে পুরো পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
রিকশাচালক একরাম হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে দুর্ঘটনায় আহত দুইজনের চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি তোফায়েলের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেই। পরবর্তীতে আরও টাকা নেওয়ায় মোট ঋণ দাঁড়ায় প্রায় ৭১ হাজার টাকা। এর বিপরীতে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। তবুও সুদের ফাঁদে পড়ে জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
একরাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমাকে কয়েক দফায় মারধর ও জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন তোফায়েল। সম্প্রতি আমার অনুপস্থিতিতে তোফায়েল ঘরের সব মালামাল বের করে তালা মেরে দিয়েছে। ফলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বারান্দায় রাত কাটাচ্ছি।
একরামের স্ত্রী বলেন, আট দিন ধরে বাচ্চাদের নিয়ে খোলা বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রান্নাবান্না বন্ধ, প্রতিবেশীদের দয়ায় কোনোভাবে দিন পার করছি।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আব্দুল হালিম বলেন, টাকার জন্য কারো বসতঘরে তালা মারা চরম অমানবিক কাজ। শিশুরা ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভুগছে, কিন্তু ওষুধ কেনারও সামর্থ্য নেই তাদের। এ ঘটনা হৃদয়বিদারক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তোফায়েল আহম্মদ বলেন, সে আমার কাছ থেকে লাভের ওপর টাকা নিয়েছে। টাকা না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। তাই আমি তালা দিয়েছি। টাকা পরিশোধ করলে তালা খুলে দেব।
চরকিং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাঈম উদ্দিন বলেন, সুদের পাওনার জন্য কারো বসতঘরে তালা মারা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আমি চৌকিদার পাঠিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি দুইজনের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে চেষ্টা করছি।
এসএন/রুপা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: