শনিবার, ২৮শে জুন ২০২৫, ১৪ই আষাঢ় ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


তালগাছ কেটে বাবুই পাখির বাসা ধ্বংস, মারা গেছে শতাধিক পাখি


প্রকাশিত:
২৮ জুন ২০২৫ ১৬:৫৮

আপডেট:
২৮ জুন ২০২৫ ২১:৩৩

ছবি সংগৃহীত

ঝালকাঠি সদর উপজেলায় একটি বিশাল তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুই পাখির ছানা ও ডিম ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে পূর্ব গুয়াটন গ্রামে মোবারেক আলী ফকিরের মালিকানাধীন জমির পার্শ্ববর্তী সড়কের পাশে তালগাছটি ফারুক ব্যাপারীর নামের এক ব্যক্তি কেটে ফেলেছেন।

পূর্ব গুয়াটনের যে তালগাছটি কাটা হয়েছে, সেটি বহু বছর ধরে এলাকায় বাবুই পাখিদের প্রধান আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। গাছটি কেটে ফেলার ফলে শতাধিক বাবুইছানা, অসংখ্য ডিম ও বাসা মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায়। কেটে ফেলা গাছের নিচে আহত ও মৃত পাখির ছানা ও ভাঙা বাসাগুলো পড়ে থাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামের বাসিন্দা মোবারক আলী ফকির তার বাড়ির পাশের তালগাছটি ফারুক ব্যাপারীর কাছে বিক্রি করেন। এরপর ফারুক ব্যাপারী কয়েকজন শ্রমিক (কুঠারি) নিয়ে গাছটি কেটে ফেলেন। গাছ কাটার সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক ছুটে গিয়ে গাছটি না কাটার অনুরোধ করেন। এমনকি গাছের বাজারমূল্য পরিশোধ করে সেটি সংরক্ষণ করতে চাইলেও তারা কোনো কথায় কর্ণপাত করেননি।

স্থানীয় পরিবেশ সচেতন নাগরিক সাব্বির ও জাহিদুল বলেন, এই গাছ শুধু একটি গাছ নয়, এটি একটি প্রাণবৈচিত্র্যের কেন্দ্র ছিল। গাছে গাছে পাখির কিচিরমিচির, ডিম, ছানা-সব মিলে এটি ছিল প্রাণের উৎস। যারা এটি কেটেছে, তারা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।

তারা জানান, গাছ কাটার কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা শুধু কথা অমান্য করেই ক্ষান্ত হননি, বরং চরম দুর্ব্যবহার করেছেন প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে। একপর্যায়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকে আনা হলেও ততক্ষণে সব শেষ।

ঘটনার পর শনিবার সকালে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। শেখেরহাট ইউনিয়নের গুয়াটন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমি গাছ কাটার পর ঘটনাটি জানতে পারি। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বহু পাখির বাসা নষ্ট হয়েছে। বিষয়টি ইউএনও ম্যাডামকে জানানো হয়েছে এবং তার নির্দেশে গাছটি জব্দ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ঝালকাঠির নেটওয়ার্ক মেম্বার আল-আমিন বাকলাই বলেন, বাবুই পাখি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পৃথিবীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অন্যতম নিদর্শন। তাদের বাসা তৈরির কারুকাজ ও সামাজিক আচরণ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। এমন নির্মমতা শুধুই পরিবেশের ক্ষতি নয়, বরং মানবিকতার অপমৃত্যু বলেও মন্তব্য করেন তারা। বাবুই পাখি পরিবেশবান্ধব ও সংরক্ষিত প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। তাদের আবাস ধ্বংস করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই আইনের আওতায় আনা উচিত।

ঝালকাঠির সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা) ফরেস্টার মো. আরিফুর রহমান বলেন, গাছ কাটার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি একটি বিশাল তালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে, যার ডালে শত শত বাবুই পাখির বাসা ছিল। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার ইউএনও ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গাছ কাটার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে পৃথক মামলা দায়েরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে গাছ কাটায় জড়িতদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top