বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


বাড়ছে এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ; ঝুঁকিতে বাংলাদেশ


প্রকাশিত:
২৪ জানুয়ারী ২০২২ ০১:৩৯

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৪ ২২:০৫

সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর এমআরএসএ ব্যাকটেরিয়া

এন্টিবায়োটিক বা ওষুধ প্রতিরোধকারী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। জানা গেছে, এইডস কিংবা ম্যালেরিয়াতে প্রতিবছর যত সংখ্যক লোক মারা যায়, এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা তার দ্বিগুণ। গবেষণার বরাত দিয়ে, বৃটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন- বিবিসি জানায়, এ ধরণের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে প্রাণ হারিয়েছে ১২ লক্ষ মানুষ।


গবেষণায় জানা যায়, গরীব দেশগুলোতে ওষুধ প্রতিরোধকারী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ পরিস্থিতি তুলনামূলক ভয়াবহ। এর থেকে রক্ষা পেতে হলে ওষুধ গবেষণায় আরও বেশি জোর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি, বর্তমানে যেসব এন্টিবায়োটিক রয়েছে তা প্রয়োগে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে চিকিৎসকদের প্রতি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ছোটখাটো অসুখে এন্টিবায়োটিকের নির্বিচার প্রয়োগ, মারাত্মক অসুখবিসুখে এর কার্যকারিতা অনেকখানি কমে যাচ্ছে।

গবেষণায় জানানো হয়, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া এবং সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের দেশগুলোতে। এই অঞ্চলে প্রতি এক লাখে মারা গেছে ২৪ জন। তুলনামূলকভাবে কম মৃত্যু হয়েছে বেশি আয়ের দেশগুলোতে। সেখানে প্রতি এক লাখে মারা গেছে ১৩ জন।

ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের অধ্যাপক ক্রিস মারে বলছেন, এই গবেষণায় সারা বিশ্বে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব কমে যাওয়ার প্রকৃত চিত্রটি ফুটে উঠেছে। "আমরা যদি এই লড়াইয়ে টিকে থাকতে চাই তাহলে যে এখনই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, গবেষণা থেকে তার পরিষ্কার ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে"।

এদিকে, বাংলাদেশে প্রচলিত এন্টিবায়োটিকের অনেকগুলো কার্যক্ষমতা কমে গেছে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব, পশু-পাখির খাবার, শাক-সবজি বা কৃষিকাজে অপ্রয়োজনে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার- ইত্যাদি কারণে এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বেড়েছে বলে জানান তারা।

বাংলাদেশের রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের এক চলমান গবেষণায় উঠে এসেছে যে দেশে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে অন্তত ১৭টির কার্যক্ষমতা অনেক কমে গেছে। আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান জাকির হোসেন হাবিব বলেন অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে অনেক ওষুধই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অপেক্ষাকৃত কম কার্যকর হয়ে পড়ছে। "আমরা যখন মেডিকেল শিক্ষার্থী ছিলাম তখন সেফট্রিয়াক্সোন অত্যন্ত কার্যকর একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ছিল। কিন্তু এখন যদি রেজিস্টান্স প্যাটার্ন দেখেন - তাহলে দেখবেন আমরা যেসব জীবাণু দেখিয়েছি, তার প্রত্যেকটি অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট।" অর্থাৎ বিশ থেকে ত্রিশ বছর আগেও যেই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর ছিল, তা এখন অনেকাংশে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি কিছুদিন আগেও যেসব অ্যান্টিবায়োটিক বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ছিল, সেগুলোও কার্যকারিতা হারাতে শুরু করেছে বলে বলেন মি. হাবিব। "বাংলাদেশে কয়েক বছর আগেও ইমিপেনাম, মেরোপেনাম গ্রুপের ড্রাগ বেশ কার্যকর ছিল। কিন্তু কোভিডের সময় এই গ্রুপের ড্রাগ রোগীদের অতিরিক্ত পরিমাণে দিয়ে এটির কার্যকারিতাও নষ্ট করে ফেলছেন চিকিৎসকরা।" মি. হাবিব বলেন, "এই গ্রুপের ড্রাগ কার্যকারিতা হারালে এরপর আমাদের হাতে আর খুব বেশি অ্যান্টিবায়োটিক থাকবে না।" ডা. হাবিবের মতে, সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো বাংলাদেশে হাসপাতালগুলোতে এমন জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা সব ধরণের অ্যান্টটিবায়োটিক প্রতিরোধী। অর্থাৎ কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেই ঐ জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর হবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালর রোগীদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা ও জীবাণুর ধরণ নিয়ে পরিচালিত হওয়া এক গবেষণার বরাত দিয়ে ডা. হাবিব বলেন, "জীবাণুদের আমরা মাল্টি ড্রাাগ রেজিস্ট্যান্ট, এক্সটেনসিভ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট আর প্যান ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট - এই তিন ভাগে ভাগ করেছি। যার মধ্যে প্যান ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হল এমন জীবাণু যার বিরুদ্ধে কোন অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর নয়।"

এসএন/জুআসা/২০২২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top