ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য বিশেষ গৃহায়ন প্রকল্পের উদ্যোগ
প্রকাশিত:
১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:২০
আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২৫ ২০:০২

সরকারের গৃহায়ন কর্মসূচির আওতায় গৃহহীন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড জাস্টিসের (নেটজ বাংলাদেশ) আয়োজনে একটি সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করে না। আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, বাংলাদেশি। বাংলাদেশ বহু নৃ-গোষ্ঠী সম্বলিত একটি দেশ। সরকারের গৃহায়ন কর্মসূচির আওতায় গৃহহীন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান মন্ত্রী।
‘ভূমি ব্যবহার ও মালিকানা স্বত্ব’ আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণের পথে জানিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পরবর্তী বাজেট অধিবেশনের আগেই সংসদে আইন তৈরির জন্য তা পাঠানো হবে। একই সময় ‘ভূমি ব্যবহার স্বত্ব গ্রহণ আইন’ এবং ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’-এর খসড়াও সংসদে পাঠানো সম্ভব হবে।
মন্ত্রী জানান, ‘ভূমি ব্যবহার ও মালিকানা স্বত্ব আইনে’র আওতায় নাগরিকদের ‘সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ’ তথা সিএলও নামে একটি ডকুমেন্ট দেওয়া হবে, যেখানে ভূমি মালিকানার সব তথ্য থাকবে- জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য বিভিন্ন ধরনের দলিলাদির প্রয়োজন হবে না। এছাড়া একই সঙ্গে স্মার্ট কার্ডও দেওয়া হবে। কার্ডে মালিকানার সব ডিজিটাল তথ্য থাকবে।
‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার’ আইনের আওতায় অবৈধ ভূমি দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে উপযুক্ত শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা থাকবে। ‘ভূমি ব্যবহার স্বত্ব গ্রহণ’ -আইনের আওতায় মাটির তলদেশ দিয়ে পাইপলাইন স্থাপন ও মাটির নিচে অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে করলে পুরো জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হবে না, অধিকন্তু জমির মালিক আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, তিনটি আইন পাস হলে তা ভূমিসেবা ডিজিটালাইজেশনের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে, যা পুরো ভূমি ব্যবস্থাপনায় আমূল সংস্কার আনবে।
মন্ত্রী মনে করেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ শেষ হলে জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব অনেকাংশে কমে আসবে। আমরা নাগরিকদের জন্য ‘কমফোর্ট জোন’ তৈরি করছি এবং দেশের অপেক্ষাকৃত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছি।
সমতল অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত জনসাধারণের ভূমি সম্পর্কিত দ্বন্দ্বের নানা দিক এবং অহিংস পদ্ধতিতে দ্বন্দ্ব সমাধানের পদ্ধতি ও সম্ভাব্য উপায় সংশ্লিষ্ট এক গবেষণার ওপর সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিইব) নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা।
ভূমি নিয়ে নৃ-গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব প্রশমনে গবেষক জনপ্রশাসন, সুশীল সমাজ এবং স্থানীয়ভিত্তিক বিভিন্ন উদ্যোগের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভূমি সেবায় নিয়োজিতদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুষ্ঠু বণ্টন, নাগরিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ, সামাজিকভাবে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, স্থানীয়ভাবে নারীদের জন্য হেল্প ডেস্ক স্থাপন, যৌথ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যে দিয়ে আন্তঃ-সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধি ইত্যাদি।
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান, ডাসকো ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আকরামুল হক অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ভুক্ত তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক অনুষ্ঠানে তাদের কথা জানান।
সম্পর্কিত বিষয়:
গৃহহীন
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: