রবিবার, ১৬ই নভেম্বর ২০২৫, ২রা অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


ছাত্রদল নেতার গুমজীবন

‘চোখের কাপড় সরাতেই দেখি মানুষের হাত-পা কাটা ছবি’


প্রকাশিত:
১৬ নভেম্বর ২০২৫ ২২:০৪

আপডেট:
১৬ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:১৬

ফাইল ছবি

পঞ্জিকায় ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। সেই সময়ে ছাত্রদল নেতা মফিজুর রহমান আশিকের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ এক অধ্যায়। বিকেলের নাশতা শেষে হাঁটতে বেরোনোর পর তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় র‌্যাবের গোপন বন্দিশালা কুখ্যাত ‘আয়নাঘরে’। গোপন সেই টর্চার সেলে দুই মাস কাটে তার অমানবিক নির্যাতন আর মৃত্যুভয়ে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম হয়ে নিপীড়নের শিকার হওয়া সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন মফিজুর রহমান আশিক। গুম করার অভিযোগে মামলা করেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে।

ট্রাইব্যুনালকে আশিক জানান, তাকে ক্রেনে ঝুলিয়ে তার গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো। প্রচণ্ড পিপাসায় পানি চাইলে দেওয়া হতো না। বরং মুখে প্রস্রাব করে দিতে চাইত নির্যাতনকারী র‌্যাব সদস্যরা।

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে অসংখ্য। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে এমন বহু নারকীয় ঘটনা। বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের বহু মানুষ গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন সেই সময়ে। তখন গোপন বন্দিশালা থেকে বেঁচে ফিরলেও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাননি। কারণ তাদের আবার আয়নাঘরে নিয়ে যাওয়ার ভয় ছিল।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বোরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে এসব গুম ও নিপীড়নের অভিযোগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ সম্পর্কিত বহু অভিযোগ ইতোমধ্যে জমা পড়েছে। সম্প্রতি নিজের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন সাবেক ছাত্রদল নেতা আশিক। গত ৩ নভেম্বর তিনি ট্রাইব্যুনালে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পৈশাচিক নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুখালী গ্রামের বাসিন্দা মফিজুর রহমান আশিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের (জুয়েল-হাবিব কমিটি) সাবেক গ্রন্থাগার সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। মিরপুরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

ট্রাইব্যুনালকে আশিক জানান, ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জিয়াউর রহমান শাহিনের সঙ্গে দেখা করতে মিরপুর যান তিনি। মিরপুর-১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের রাব্বানী হোটেলে নাশতা সেরে দুজন হাঁটতে বের হন। মিরপুর-১২-এর ৬ নম্বর রোড হয়ে মুসলিম বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন তারা। বাজারের কাছে একটি ছোট কালভার্টের সামনে পৌঁছাতেই হঠাৎ তাদের পেছনে থামে একটি সাদা মাইক্রোবাস।

মুহূর্তের মধ্যে সাদা পোশাকের সশস্ত্র ব্যক্তিরা এসে দুজনকে জোর করে গাড়িতে তোলে। পরে গামছা দিয়ে তাদের চোখ ও হাত বেঁধে ফেলা হয়প্রায় আধা ঘণ্টা গাড়ি চলার পর খাড়া সিঁড়ি দিয়ে তাদের একটি ভবনের দোতলায় নেওয়া হয়সেখানেই একটি কক্ষে আশিককে বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে হাতলে হাতকড়া লাগানো হয়

গোপন টর্চার সেলে ভয়াবহ নির্যাতন

আশিক জানান, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে এক কর্মকর্তা ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল সম্পর্কে তথ্য জানতে চান। মিছিল-মিটিংয়ে কর্মী জোগাড় করা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চোখ বেঁধে তাকে ক্রেনে ঝুলিয়ে উরুর দুই পাশে বেত দিয়ে পেটাতে থাকেন অধস্তনরা। হাঁটু থেকে নিতম্ব পর্যন্ত পেটানো হয়। বেত ভেঙে যাওয়ার পর আরও দুটি বেত আনা হয়। একই সময়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ বা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন কি না? সহযোগীদের নাম ও মোবাইল নম্বর আদায়ের জন্য চাপ বাড়ানো হয়। কিন্তু আশিক অস্বীকৃতি জানালে আরও ভয়াবহ নির্যাতন শুরু হয়। তার দাবি, মা-বাবার নাম ধরে গালাগাল করতে করতে ঝুলন্ত অবস্থায় গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার নির্দেশ দেন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা

এদিকে জিয়াউর রহমান শাহিন কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। আশিকের সঙ্গে চলাফেরা করাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তাকেও তুলে নেওয়া হয় একই গোপন টর্চার সেলে। তবে তিনি রাজনীতি করেন না এ কথা কাকুতি-মিনতি করে বারবার বোঝানোর পর তাকে তুলনামূলক কম নির্যাতন করা হয় এবং পর্দার আড়ালে আশিকের পাশেই রাখা হয়। দুজনের ওপর নজরদারির জন্য সবসময় একজন র‍্যাব সদস্য নিযুক্ত থাকতেন।

আশিকের বর্ণনা অনুযায়ী, তাদের গুম করে রাখা ভবনটি র‍্যাব-১ এর আওতাধীন ছিল। ভবনের পেছনে ট্রেনের শব্দ, সামনের সড়কে গাড়ির শব্দ এবং কাছাকাছি বিমান ওঠানামার আওয়াজ নিয়মিত শুনতেন তিনি

গুমের এক সপ্তাহ পর কোনোমতে দাঁড়াতে সক্ষম হন আশিক। এক রাতে খাবারের পর দায়িত্বে থাকা সদস্য সাময়িকভাবে অনুপস্থিত থাকায় আশিক ও শাহিন পর্দার আড়ালে কিছু কথা বলতে পারেন। কিন্তু বিষয়টি টের পেয়ে দায়িত্বে থাকা র‍্যাব সদস্য দুজনকেই লাঠিপেটা করেন

তাদের জানানো হয়, ডিটেনশন সেন্টারের ভেতরে কথা বলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ

আশিক জানান, টর্চার সেলে দিনের ২৪ ঘণ্টাই হাতকড়া পরিয়ে এবং চোখ বেঁধে রাখা হতো তাকে। কেবল টয়লেটে যাওয়ার সময় হাতকড়া খোলা হলেও চোখ বাঁধা থাকত টয়লেটে ঢোকার আগ পর্যন্ত। খাওয়ার সময়ও চোখ বাঁধা অবস্থায় খেতে হতো। হাতকড়া পরেই রাত কাটাতে বাধ্য হতেন তিনি।

নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গেলে শেষ করা যাবে না। ঝুলিয়ে আমার গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো। শক লাগার সঙ্গে সঙ্গে বুক আর মাথা অবশ হয়ে যেত। শরীর ভেঙে পড়ত, অজ্ঞান হয়ে যেতাম। জ্ঞান ফিরলে আবার নির্যাতন শুরু হতো। পেছনে হাতকড়া থাকায় নড়াচড়াও করতে পারতাম না। প্রচণ্ড ব্যথায় বারবার জ্ঞান হারাতাম

গুমের ২০ দিন পর সঙ্গী শাহিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়েন আশিক। পরে তাকে আগের সেলের পাশের আরেকটি কক্ষে স্থানান্তর করা হয়।

আশিকের বর্ণনা অনুযায়ী, তাদের গুম করে রাখা ভবনটি র‍্যাব-১ এর আওতাধীন ছিল। ভবনের পেছনে ট্রেনের শব্দ, সামনের সড়কে গাড়ির শব্দ এবং কাছাকাছি বিমান ওঠানামার আওয়াজ নিয়মিত শুনতেন তিনি।

আশিক বলেন, নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গেলে শেষ করা যাবে না। ঝুলিয়ে আমার গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো। শক লাগার সঙ্গে সঙ্গে বুক আর মাথা অবশ হয়ে যেত। শরীর ভেঙে পড়ত, অজ্ঞান হয়ে যেতাম। জ্ঞান ফিরলে আবার নির্যাতন শুরু হতো। পেছনে হাতকড়া থাকায় নড়াচড়াও করতে পারতাম না। প্রচণ্ড ব্যথায় বারবার জ্ঞান হারাতাম।

তিনি জানান, তীব্র পিপাসায় পানি চাইলে এক ফোঁটা পানিও দেওয়া হয়নি আমাকে। বরং একজন র‌্যাব সদস্য আমার মুখে প্রস্রাব করার চেষ্টা করেন। নির্যাতনের তীব্রতায় টয়লেটে হেঁটে যেতে না পেরে দুই সদস্যের সাহায্যে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হতো। প্রস্রাবে রক্ত ঝরত, মূত্রনালিতে তীব্র জ্বালাপোড়া অনুভব হতো।

একদিন চোখের বাঁধন খুলে দিলে আশিক দেখেন একটি টেবিলে বৈদ্যুতিক করাত, কাটিং ব্লেডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা। এসব ধারালো বস্তু সাধারণত গাছ কাটতে ব্যবহার করা হয়। সম্ভবত বন্দিদের হাত বা আঙুল কাটতে এগুলো ব্যবহার করতেন তারা

তিনি বলেন, টানা এক সপ্তাহ হামাগুড়ি দিয়ে টয়লেটে যেতাম। এই পুরোটা সময় আমাকে ঠান্ডা মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছিল।

আশিক জানান, গুমের দিনগুলোতে প্রতিদিন সকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল করানো হতো। একদিন সময়মতো গোসল না করায় দুপুরে গোসল করতে বলা হয় তাকে। তিনি বলেন, সেদিন ট্যাংকি থেকে সূর্যের তাপে গরম হয়ে যাওয়া পানি দিয়ে ১৫ মিনিট গোসল করেছিলাম। কিন্তু বের হতেই গোপালগঞ্জের এক র‍্যাব সদস্য আমাকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে।

তিনি জানান, গুমের দুই সপ্তাহ পর এক কর্মকর্তা তার রাজনৈতিক পরিচয়, পারিবারিক পটভূমি, আর্থিক সক্ষমতা এবং শাহিনসহ তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

আশিক বলেন, ঘরের ভেতরে একটি বড় গামলা রাখা ছিল। র‍্যাব সদস্যদের কাছ থেকে জানতে পারি, ভুক্তভোগীদের ওই গামলার ওপর রেখে জবাই করা হতো। রক্ত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ সেখানে রাখা হতো, পরে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হতো

আশিক দাবি করেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রতিদিন সকাল-বিকাল বিরোধী দলের বহু নেতাকর্মীকে ওই ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে আসা হতো। তখন নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় জোরে ব্যান্ড মিউজিক বাজানো হতো, যেন বাইরে কেউ চিৎকার শুনতে না পায়।

একদিন চোখের বাঁধন খুলে দিলে আশিক দেখেন একটি টেবিলে বৈদ্যুতিক করাত, কাটিং ব্লেডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা। এসব ধারালো বস্তু সাধারণত গাছ কাটতে ব্যবহার করা হয়। সম্ভবত বন্দিদের হাত বা আঙুল কাটতে এগুলো ব্যবহার করতেন তারা।

তিনি জানান, ওই সময় তাকে এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের জন্য ইন্টারোগেশন সেলের পাশের আরেকটি সেলে রাখা হয়। সেখানে তাকে পাঁচটি কম্বল দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়। তিনি বলেন, একসময় যখন একা ফেলে রাখা হয়, তখন চোখ বাঁধা কাপড় সরিয়ে দেখি দেয়ালে মানুষের বিচ্ছিন্ন হাত-পা ও মাথা কাটার ছবি। সেগুলো দেখে খুব ভয় পেয়েছিলাম।

আশিক বলেন, ঘরের ভেতরে একটি বড় গামলা রাখা ছিল। র‍্যাব সদস্যদের কাছ থেকে জানতে পারি, ভুক্তভোগীদের ওই গামলার ওপর রেখে জবাই করা হতো। রক্ত বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মরদেহ সেখানে রাখা হতো, পরে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হতো।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে একবার আমাকে রাতের আঁধারে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় ক্রসফায়ারের উদ্দেশ্যে। রুম থেকে বের করে নেওয়ার সময় এগুলো জানতে পারি। তবে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা আমাকে দেখে সিদ্ধান্ত বদলান এবং ফের আগের রুমে পাঠিয়ে দেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন শেষে আশিককে আরেকটি ফ্ল্যাটে স্থানান্তর করা হয়। কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে সিঁড়ির পাশে একটি ছোট ঘরে তাকে রাখা হয়। ঘরটি বাইরে থেকে সবসময় তালাবদ্ধ থাকত।

আশিক জানান, খাবারের রুটিন ছিল নির্দিষ্ট- সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার দিয়ে কক্ষের দরজা তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। নিচে নামানো ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো, তাদের জীবিত রাখা হবে নাকি হত্যা করা হবে। ইন্টারোগেশন সেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক র‍্যাব সদস্যের এমন মন্তব্যে আতঙ্কে সারাদিন কেঁদেছিলেন তিনি। খাবার দিতে আসা সদস্যদের পা ধরে আগের কক্ষে ফেরত নেওয়ার অনুরোধও করেছিলেন তিনি। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলতেন না। ধীরে ধীরে মৃত্যুভয় পেয়ে বসে তাকে। শুরু করেন মৃত্যুর প্রহর গোনা।

নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন তিনি। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর দায়িত্বে থাকা সদস্যরা আশিকের সঙ্গে অল্প অল্প কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। জানান মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনার কথাও। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের দীর্ঘ সময় পার করে ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আসে আশিকের মুক্তির মুহূর্ত। তালাবদ্ধ ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় সার্জেন্ট এসে দরজা খুলে জানান আল্লাহ চাইলে দু-একদিনের মধ্যে তুমি বাড়ি যেতে পারবে। এতে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন আশিক।

তিনি বলেন, দুই মাসে দাড়ি, চুল, নখ বড় হয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর তারা এগুলো কাটার সরঞ্জাম দেন। এরপর আবার আগের কক্ষে বন্দি করা হয়। গভীর রাতে চোখ বেঁধে আরেক কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। একজন অফিসার জানতে চানআজ মুক্তি পেলে বাড়ি গিয়ে কী বলবে?’ আমি বলি- ‘দেশে আন্দোলন চলছে, তাই লুকিয়ে ছিলাম, এটা বলব।’ কোথায় ছিলাম বা কী নির্যাতন হয়েছে এসব সাংবাদিকদের না বলতে নিষেধ করেন তারা। আমি তাতে রাজি হই।

আশিক জানান, কিছুক্ষণ পর আরেক ভুক্তভোগীর এক জোড়া স্যান্ডেল তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর চোখের বাঁধন ও হাতকড়া খুলে আবার গামছা দিয়ে চোখ-হাত বেঁধে খাড়া সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামানো হয়। পরে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। প্রায় ২০ মিনিট পর মোবাইল ছাড়াই তাকে হাতিরঝিল-মধুবাগ মোড়ে নামিয়ে দেয় র‍্যাব সদস্যরা।

মাইক্রোবাস থেকে নামতেই দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়া আশিকের। কিছুক্ষণ পর তিনি সিএনজি অটোরিকশায় করে গুলশান-১ নিকেতন এলাকায় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বাসার সামনে নামেন। সেখান থেকে মিরপুরের বাসায় ফিরে আসেন। পরদিন চট্টগ্রামে গিয়ে বড় ভাইয়ের বাসায় টানা তিন মাস আত্মগোপনে থাকেন তিনি।

আশিক জানান, ‘আয়নাঘর’ নামের ওই কক্ষে পানি না দেওয়া র‌্যাব সদস্য ছিলেন রংপুরের বাসিন্দা। সূর্যের তাপে গরম পানি দিয়ে নির্যাতনকারী ছিলেন গোপালগঞ্জের একজন। আরও তিন নির্যাতনকারী র‌্যাব সদস্যের পরিচয় জানতে পেরেছিলেন তিনি। তারা হলেন- চট্টগ্রামের আলিফ, শেরপুরের সবুজ ও চাঁদপুরের আরিফ।

গুমের শিকার হওয়া এবং সেখানে নির্যাতনের অভিযোগে গত ৩ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন আশিক।

মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, র‌্যাবের তৎকালীন ডিজি মোখলেছুর রহমান, সিটিটিসির তৎকালীন প্রধান আসাদুজ্জান, পুলিশের তৎকালীন ডিসি কামরুল হাসান ও এডিসি সৈয়দ নসরুল্লাহ।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top