ইমরান খানের ছেলে বললেন, ‘বাবা বেঁচে আছেন কি না জানি না’
প্রকাশিত:
১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৩০
আপডেট:
১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৩২
কারাবন্দী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দুই ছেলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, কর্তৃপক্ষ তাদের বাবার (ইমরান খান) শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ‘‘অপরিবর্তনীয় কিছু’’ গোপন করছে। তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তার জীবিত থাকার কোনও প্রমাণ না মেলায় এমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে বলে ইমরান খানের এক ছেলে মন্তব্য করেছেন।
আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ইমরান খানের সঙ্গে কারাগারে স্বজন ও দলের নেতাকর্মীদের সাক্ষাতের সুযোগ স্থগিত রয়েছে। তাকে কারাগারে স্থানান্তর করা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ছেলে কাসিম খানকে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আদালতের সাপ্তাহিক সাক্ষাতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পরিবার ইমরান খানের সঙ্গে সরাসরি কিংবা যাচাইযোগ্য কোনও যোগাযোগ করতে পারছে না।
কাসিম খান বলেছেন, ‘‘আপনার বাবা নিরাপদ আছেন, আহত হয়েছেন, এমনকি বেঁচে আছেন কি না—এটা না জানতে পারাটা এক ধরনের মানসিক নির্যাতন।’’ তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে তার (ইমরান) সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত কোনও যোগাযোগ হয়নি।
‘‘আজ আমরা তার অবস্থা সম্পর্কে মোটেও যাচাইযোগ্য তথ্য পাচ্ছি না। আমাদের সবচেয়ে বড় ভয় হলো, আমাদের কাছ থেকে অপরিবর্তনীয় কিছু লুকানো হচ্ছে।’’
পরিবার বার বার কারাগারে ইমরান খানের ব্যক্তিগত চিকিৎসকের প্রবেশাধিকার চেয়েছে। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যক্তিগত চিকিৎসককে কারাগারে ইমরান খানের শারীরিক পরীক্ষা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশটির এক কারা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ইমরান খান সুস্থ আছেন। তাকে উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত কোনও কারাগারে স্থানান্তরের পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
৭২ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন। ২০২২ সালে দেশটির সংসদে অনাস্থা ভোটে পদচ্যুত হওয়ার পর একের পর এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। যদিও ইমরান খান দাবি করেছেন তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রাষ্ট্রীয় কোষাগার তোশাখানা থেকে সরকারি উপহার বেআইনিভাবে বিক্রির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে প্রথম সাজা ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী রায়গুলোতে আরও দীর্ঘ সাজা যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কূটনৈতিক নথি ফাঁসের অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং আল-কাদির ট্রাস্ট সংক্রান্ত পৃথক দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা। প্রসিকিউটরদের দাবি, এই ট্রাস্টের নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে ভূমি বরাদ্দ নিয়েছেন ইমরান খান।
• পরিবারের উদ্বেগ বেড়েছে
পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় যোগাযোগ না থাকায় তাদের শঙ্কা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানকে জনদৃষ্টি থেকে আড়াল করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে তার নাম কিংবা ছবি প্রচার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে কারাবন্দি হওয়ার পর তার একটি ঝাপসা আদালত কক্ষের ছবিই কেবল ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে।
কাসিম বলেন, ‘‘এই বিচ্ছিন্ন করে রাখাটা ইচ্ছাকৃত। কর্তৃপক্ষ তার বাবাকে আলাদা করে রাখছে। তারা তাকে ভয় পায়। তিনি পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং তারা জানেন, গণতান্ত্রিকভাবে তাকে হারাতে পারবে না।’’
কাসিম ও তার বড় ভাই সুলায়মান ঈসা খান মা জেমিমা গোল্ডস্মিথের সঙ্গে লন্ডনে বসবাস করেন। পাকিস্তানের বংশানুক্রমিক রাজনীতির বাইরে রয়েছেন তারা। দুই ভাই তাদের বাবাকে ‘‘আব্বা’’ বলে ডাকেন। ইমরান খানের কারাবন্দি দশা নিয়ে খুব কমই প্রকাশ্যে কথা বলেছেন তারা।
কাসিম বলেন, তারা শেষবার বাবাকে দেখেছেন ২০২২ সালের নভেম্বরে। ইমরান খান এক হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে ফেরার পর পাকিস্তানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন তারা।
তিনি বলেন, ‘‘সেই দৃশ্যটা এখনও চোখে ভাসে। বাবাকে সে অবস্থায় দেখা এমন কিছু, যা ভুলে থাকা যায় না।’’
‘‘আমাদের বলা হয়েছিল সময়ের সঙ্গে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। এখন কয়েক সপ্তাহের সম্পূর্ণ নীরবতা আর বেঁচে থাকার কোনও প্রমাণ না পাওয়ার পর সেই স্মৃতির ভার অন্যরকম হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা দেশের ভেতরে ও বাইরে নানা পথ অনুসরণ করছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি ইমরান খান বর্তমান বন্দিদশা নিয়ে কথা বলার জন্য আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি আদালতের আদেশ অনুযায়ী সাক্ষাতের সুযোগ অবিলম্বে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কাসিম বলেন, এটা শুধু রাজনৈতিক বিরোধ নয়। এটা মানবাধিকার সংকটও। সব দিক থেকে চাপ আসা উচিত। আমরা তার কাছ থেকেই শক্তি পাই। কিন্তু আমাদের জানতে হবে যে, তিনি নিরাপদ আছেন।
সম্পর্কিত বিষয়:



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: