পাকিস্তানে বন্যায় দুই দিনে ৩৫১ জনের মৃত্যু
প্রকাশিত:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১১:৪৫
আপডেট:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ২০:৩৭

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে টানা প্রবল বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে এসেছে। গত দুই দিনে এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৫১ জন। এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধারকারীরা আশঙ্কা করছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ। সেখানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩২৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। ভূমিধস ও প্রবল পানির তোড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বহু গ্রাম ও বসতি।
এই প্রদেশের বুনের, সোয়াত, মানসেহরা, বাজাউর, তোরঘর ও বাটাগ্রাম জেলার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে বুনের জেলার বেশন্ত্রি গ্রামে প্রায় প্রতিটি পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত। বহু ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সড়কপথ ধসে গেছে, বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন।
বেশন্ত্রি গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, নিহতদের দাফনের জন্য গ্রামে কাউকে পাওয়া যায়নি। পাশের গ্রাম থেকে লোকজন এসে জানাজা ও দাফনে সহায়তা করেছেন।
এদিকে, খাইবার পাখতুনখোয়ার বাইরে গিলগিট বালতিস্তানে ১২ জন এবং আজাদ কাশ্মীরে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ করছেন। তারা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার এবং আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে উদ্ধারকারীরা বলছেন, দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলোর অধিকাংশই দুর্গম। রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ায় যানবাহন চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় রাতের বেলা উদ্ধারকাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।
হাসপাতালগুলোতেও দেখা দিয়েছে চরম সংকট। চিকিৎসা সরঞ্জাম, শয্যা এবং প্রয়োজনীয় জনবল ঘাটতির কারণে অনেক আহতকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারি হিসেবে, বন্যায় শত শত ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব, খাদ্য ও ওষুধ সংকটে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে তারা।
এরই মধ্যে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক সরকার জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর জন্য ৫০ কোটি রুপি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বুনের জেলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫ কোটি রুপি। হেলিকপ্টারে করে দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারের সহায়তা পর্যাপ্ত নয়। অনেক এলাকাতেই এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় সরকারি সাড়া খুবই ধীর এবং সীমিত বলে মনে করছেন তারা।
দেশটির দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থাগুলো বলছে, এই দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের একটি বড় উদাহরণ। সময়মতো প্রস্তুতি ও কার্যকর অবকাঠামো না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ। সূত্র: রয়টার্স
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: