শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করছে ‘সুপারবাগ’ সংক্রমণ


প্রকাশিত:
১২ অক্টোবর ২০২২ ০৬:২৮

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৭

ছবি সংগৃহীত

মহামারি আকারে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে ‘সুপারবাগ ইনফেকশন’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন কোনো ব্যাকটেরিয়া তার বিরুদ্ধে কার্যকর সব ওষুধ প্রতিরোধে সক্ষম হয়ে ওঠে তখন সেটিকে সুপারবাগ বলা হয়। ২০১৯ সালে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী এই সুপারবাগের কারণে ১২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বিখ্যাত মেডিকেল সাময়িকী ল্যানসেটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুপারবাগ সংক্রমণে ২০১৯ সালে যে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ মারা গেছেন তাদের শরীরে সংক্রমণ রোধে সবচেয়ে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলেও তা কাজে আসেনি।

ভারতে দ্রুত এই সুপারবাগ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির চিকিৎসকরা।

দেশটির পশ্চিমের রাজ্য মহারাষ্ট্রের কস্তুরবা হাসপাতালে সুপারবাগে সংক্রমিত প্রায় এক হাজার রোগী ভর্তি আছেন। যাদের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স নামে এই নিরব ঘাতক যে দেশগুলোতে খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে ভারত তার মধ্যে একটি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, দেশটিতে প্রতিবছর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণে প্রায় ৬০ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ পরিস্থিতি কিভাবে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে তা উঠে এসেছে নতুন এক সরকারি গবেষণা প্রতিবেদনে।

মহারাষ্ট্রের কস্তুরবা হাসপাতালে চালানো জরিপে দেখা গেছে, পাঁচটি প্রধান ব্যাকটেরিয়াল প্যাথোজেনকে (ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু) মোকাবেলায় যেসব অ্যান্টিবায়োটিকের সবচেয়ে বেশি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল সেগুলো খুব কমই কাজ করছে।

এসব প্যাথোজেনের মধ্যে রয়েছে কলেরা সংক্রামক ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়া, নিউমোনিয়ার ব্যাকটেরিয়া এবং শ্বাসনালী ও ত্বকের সংক্রামক রোগ ছড়ানো স্ট্যাফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া।

এসব প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে প্রধান যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো এসব রোগ নিরাময়ে ১৫ শতাংশেরও কম কার্যকর বলে চিকিৎসকরা প্রমাণ পেয়েছেন।

তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হল একাধিক ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম অ্যাসিনেটোব্যাক্টার বাউমানি, যেটি সিসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা ফুসফুসের সমস্যার রোগীদের আক্রমণ করে।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কার্বাপেনেম নামের একদল অতি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এক বছরে ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ৩০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা তথ্যে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

কস্তুরবা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, নিউমোনিয়া ও মূত্রনালির সংক্রমণ নিয়ে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসায়ও অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না। যেহেতু তাদের বেশিরভাগই প্রেসক্রিপশন ছাড়াই আসেন ও ওষুধের নামও বলতে পারেন না, তাদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ইতিহাস জানাও তাই দুষ্কর হয়ে পড়ে।

‘‘এইসব রোগীর চিকিৎসা দেওয়া অগ্নিপরীক্ষার সামিল হয়ে দাঁড়ায়। মরিয়া পরিস্থিতি থাকে এবং মরিয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। তাদের আরো বেশি বেশি অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয় এবং ফলাফল ভালোর চেয়ে আরও বেশি খারাপ হয়ে পড়ে।”

ভারতের অনেক চিকিৎসক কোনো বাছবিচার না করেই রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে থাকেন বলে বিশ্বাস স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ও বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে অনেকে এ রোগে আক্রান্তদের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে দিয়েছে।

গত বছর আইসিএমআর-এর এক জরিপে দেখা গেছে, ভারতের হাসপাতালগুলোতে সাড়ে ১৭ হাজারের বেশি রোগী যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অর্ধেকের বেশি একই সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সুপারবাগ সংক্রমণে মারা গেছেন।

এজন্য অবশ্য শুধু দেশটির চিকিৎসকদের দোষ দিলে হবে না। ভারতে মোট জনসংখ্যার বিশাল একটা অংশ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ও এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনই নন। এমনকী স্বচ্ছল ও শিক্ষিত শ্রেণির মানুষও অসুস্থ হলেই চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে চাপ দেন।

ভারতের বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স রোধে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে সংক্রমণের হার কমানো জরুরি। নাহলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা মহামারীর রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।


সম্পর্কিত বিষয়:

মহামারি

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top