শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


করোনাভাইরাস

এখনি স্কুল না খুলতে বিশেষজ্ঞদের যেসব যুক্তি


প্রকাশিত:
২৯ আগস্ট ২০২০ ১৯:১৩

আপডেট:
৩০ আগস্ট ২০২০ ০২:৪৫

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ সরকার করোনাভাইরাস মহামারির পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইতোমধ্যেই কওমি মাদরাসা ছাড়া সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। পাশাপাশি, চলতি বছরের অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী ও সমমান পরীক্ষা- জেএসসি, জেডিসি এবং প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা- পিইসিও স্থগিত করেছে। আর উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলছে, তাদের সাম্প্রতিক একটি অনলাইন সভায় এসব বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হয়েছে এবং ওই সভায় যোগ দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে ওই কমিটির মতামত চেয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি।

সেখানে তারা মতামত তুলে ধরেছেন যে বাংলাদেশে এখনো স্কুল খুলে দেয়ার মতো অবস্থা আসেনি। এ সিদ্ধান্তে স্বস্তি এসেছে অভিভাবকদের অনেকের মধ্যেই।

ঢাকার বেইলি রোডের ইশরাত জাহান শাহানার স্কুল পড়ুয়া সন্তান আছে, সে কারণে স্কুল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কেমন হয় তা নিয়ে বেশ উদ্বেগেই ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, "স্কুল বন্ধ রাখা এবং পরীক্ষা বাতিল করা সংক্রান্ত বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ",
আরেকজন অভিভাবক ফেরদৌসি রেজা চৌধুরী বলছেন, "এ মূহুর্তে এমন পরিস্থিতিতে স্কুল খোলাটা অনেক টেনশনের বিষয় হতো।"

ঢাকায় আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা: মুশতাক হোসেন মনে করেন, অভিভাবকদের উদ্বেগ যথার্থ কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে সেটা সংক্রমণের নতুন কেন্দ্র তৈরির আশঙ্কা তৈরি করতো।

"করোনা বাংলাদেশে এখনো গণসংক্রমণ পর্যায় চলছে। অন্তত ২০,০০০ করে নমুনা পরীক্ষা করে পরপর তিন সপ্তাহ সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নীচে থাকলে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়,এরপর কলেজ এবং সবশেষে স্কুল খোলার চিন্তা করতে হবে," বলছিলেন তিনি।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্কুল না খোলার বিষয়ে তারা যেসব যুক্তি দিয়েছেন সেগুলো বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন।

এতে বলা হয়েছে,ওই সভাতেই স্কুল না খোলার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে কমিটি সদস্যরা বলেন কিছু দেশ কোভিড-১৯ পরিস্থিতি উন্নতির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছিলো।

"কিন্তু এর মধ্যে অনেক দেশেই কোভিড-১৯ সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মচারী- অভিভাবকদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া। ফলে এসব দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।" কমিটি বলছে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিশুদের করোনায় আক্রান্ত হবার হার একেবারে কম নয়।

"আইইডিসিআর-এর বয়স ভিত্তিক তথ্য বিভাজনে দেখা যায় আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৭-৮ ভাগ স্কুলগামী বয়সের। এছাড়াও আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবি-এর যৌথভাবে পরিচালিত জরিপে দেখা যায় শতকরা ৪-৫ ভাগ শিশু সংক্রমিত হয়েছে"।

বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামাজিক মেলামেশা থেকে বিরত রাখা যাবেনা। পরিবহন ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়বে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে শিশুদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অভিভাবকরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে শিশুদের মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমেশন সিনড্রোম বা এমআইএস নামক জটিলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে যা আশঙ্কাজনক ও শিশুমৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মৃদু সংক্রমণের কারণেও দেহের বিভিন্ন অঙ্গ দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা একটি মাসব্যাপী দীর্ঘ কার্যক্রম যা দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জড়িত করে। ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে।
এসব বিষয় বিবেচনা করে কমিটি তার পরামর্শ দেয় যে, "এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ও পরীক্ষা নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই"।

এই অবস্থায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলার বিষয়ে মতামত প্রদান করে এবং পরবর্তীতে পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

এর আগে বাংলাদেশে মার্চ মাসের আট তারিখে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হবার পর ১৬ই মার্চ সরকার ঘোষণা করে যে ১৭ই মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্কুল, কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

চলতি বছরের ১লা এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও তখন স্থগিত করা হয়। পরে সরকার যখন প্রথম দফা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে, তখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ ৯ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

ওই সময় পর্যন্ত সকল স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টারের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়। এরপর দফায় দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য 'আমার ঘরে আমার স্কুল' শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস চলছে। অন্যদিকে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য 'ঘরে বসে শিখি' শিরোনামে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।


সূত্র : বিবিসি


সম্পর্কিত বিষয়:

শিক্ষা

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top