শনিবার, ১১ই মে ২০২৪, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১


মার্চের বেতন বকেয়া

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিক অসন্তোষ, বিক্ষোভ ও অবরোধ


প্রকাশিত:
২১ এপ্রিল ২০২০ ০০:৫০

আপডেট:
১১ মে ২০২৪ ১৩:৩২

ফাইল ছবি

গাজীপুরে বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে সোমবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এসময় বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার আরিফ রাইয়ান সহ শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাজীপুরের অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

হঠাৎ করে ছুটি ঘোষণা করায় নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলার বেশকিছু কারখানর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধ করতে পারে নি কর্তৃপক্ষ। এসব কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরেই মার্চ মাসসহ তাদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবীতে জানিয়ে আসছিল। ইতোমধ্যে কিছুসংখ্যক কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করলেও বেশকিছু কারখানার শ্রমিকদের পাওনাদি এখনও পরিশোধ করা হয়নি। সোমবারও জেলার ৭/৮টি কারখানার পোশাক শ্রমিকরা বেতন পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ করেছে।

তিনি জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বোর্ডবাজার এলাকাস্থিত কনসিস্ট এ্যাপারেলস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরেই মার্চ মাসসহ তাদের পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবীতে জানিয়ে আসছিল। বেতন ভাতা পরিশোধ না করায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার গেইটে জড়ো হয়ে বেতনভাতা পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও মালিক পক্ষের কাছ থেকে কোন আশ্বাস না পাওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।

একপর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। শ্রমিক অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের মহাসড়কের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। বিকেলে পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. রেজ্জাকুল হায়দার জানান, মহানগরীর সাতাইশ এলাকার এমএইচ ফ্যাশন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা একই দাবীতে সকাল থেকে কারখানার গেইটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে শ্রমিকরা সকাল ১০টার দিকে কারখানার পার্শ্ববর্তী সড়ক অবরোধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসময় বেতন পরিশোধের ব্যাপারে মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনার আশ্বাস দিয়ে সড়কের উপর থেকে সরিয়ে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে শ্রমিকরা বেতন পরিশোধের দাবীতে বিকেল পর্যন্ত কারখানার সামনে অবস্থান করছিল। ওই এলাকার ওয়াশিং কারখানার শ্রমিকরাও এদিন একই কারনে দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গাজীপুর মহানগরের সহকারি পুলিশ কমিশনার থোয়াই অং প্রু মারমা জানান, কুনিয়া তারগাছ এলাকায় কনসিষ্ট পোশাক কারখানায় চারদফা মার্চের বেতনের আশ্বাস দিয়েও পরিশোধ না করায় সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে ২৩ এপ্রিল বেতন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে বিকেলে আন্দোলন ত্যাগ করেন শ্রমিকরা।

টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীরর সরদার গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিক মো. জাহান আলী জানান, শ্রমিকদের মার্চের বকেয়া বেতন দেয়ার কথা বলে সোমবার সকালে কারখানা ডেকে নেয় এবং পরে কারখানা কতৃপক্ষ কিছু শ্রমিকের আইডি কার্ড জমা নিয়ে তাদের ছাটাই করা হচ্ছে এমন খবর শুনে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও কারখানায় ইটপাটকেল ছুঁড়ে। পরে ছাটাই বন্ধ করে বেতন দেয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা চলে যায়।

অপরদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম রেজা জানান, মার্চ মাসের ২০দিনের বেতনভাতা পরিশোধের দাবীতে সোমবার সকাল হতে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকার এসকো ওভেন লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। ওই মাসের ১০দিনের বেতন ইতোমধ্যে শ্রমিকদেও পরিশোধ করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়। দুপুরে আলোচনা শেষে আগামী ২৩ এপ্রিল বেতন ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলে শ্রমিকরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে ওই এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান জানান, শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আনতে মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়।

তিনি আরো জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গাজীপুরের আড়াই সহস্রাধিক কারখানার অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে গাজীপুর জেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করা হয়। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সুরক্ষা পোশাক পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস সহ গোখাদ্য ও ঔষধ উৎপাদনের জন্য প্রায় ১২০টি কারখানা চালু রাখা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই লকডাউন ভেঙ্গে এসব বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্নস্থানে তাদের মার্চ মাসের বেতন ভাতাসহ বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। তারা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কোন নিয়ম কানুনই মানছেনা।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top