করোনা সন্দেহে রাণীনগরে ঢাকা ফেরত যুবককে বাড়িতে উঠতে দেয়নি গ্রামবাসি
 প্রকাশিত: 
                                                ২৯ মার্চ ২০২০ ০০:৫৪
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৩৬
                                                
 
                                        ঢাকা থেকে আসা নওগাঁর রাণীনগরে আল আমিন (২২) নামে এক যুবক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বাড়িতে উঠতে দেয়নি গ্রামবাসি। এদিকে ওই যুবককে তিনটি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কেউ চিকিৎসা করেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন যুবকের পরিবার। যুবক আল আমিন রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের অলঙ্কারদীঘি গ্রামের মকলেছুর রহমানের ছেলে।
মকলেছুর রহমান জানান, তার ছেলে আল আমিন দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। শুক্রবার রাতে আল আমিন গায়ে জ্বর আর কাশি নিয়ে খুব অসুস্থ্য অবস্থায় ঢাকা থেকে নওগাঁতে এসে পৌঁছে। এরপর শনিবার সকালে বাড়িতে আসার সময় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে স্থানীয় মেম্বার ও গ্রামের কতিপয় লোকজন গ্রামে উঠতে দেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে সকালেই এলাকার ভেটি স্ট্যান্ড থেকে চিকিৎসার জন্য আদমদীঘি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোন চিকিৎসা না করেই ফিরে দেয়। এর পর আবারও ছেলেকে ফিরে নিয়ে ভেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের বারান্দায় মূর্মূষ অবস্থায় রাখা হয়। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মন্ডল জানতে পেরে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় ছেলেকে চিকিৎসার জন্য রাণীনগর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেখানেও ডাক্তাররা দেখেই হাতে কাগজ ধরিয়ে নওগাঁ হাসপাতালে পাঠায়। নওগাঁ হাসপাতালে পৌঁছার পর সেখানেও কোন চিকিৎসা না দিয়ে রাজশাহী নিয়ে যান বলে হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়।
এ্যাম্বলেন্স থাকা যুবকের বাবা মকলেছুর রহমান কান্না জরিত কন্ঠে মোবাইল ফোনে আরো জানান, তার ছেলেকে কেউ চিকিৎসা দিচ্ছেনা। কেউ কাছেও আসছেনা। বর্তমানে অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। দেখা যাক রাজশাহী হাসপাতালে কি হয়!
স্থানীয় মেম্বার মোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু ও অলঙ্কারদীঘি গ্রামের হারুনুর রশিদ বলেন, ছেলেটা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এমনটি খবর পাবার পর তার পরিবারকে বলেছি মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে গ্রামে আসেন। যদি করোনা ভাইরাস না থাকে তাহলে সমস্যা নেই। আর যদি ভাইরাস থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসা করান। গ্রামে আসা যাবেনা। গ্রামের সবার নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা বাঁধা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবলু মন্ডল বলেন, খবর পেয়ে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে চৌকিদার পাঠিয়ে চিকিৎসার জন্য রাণীনগর হাসপাতালে পাঠিয়েছি।
রাণীনগর হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন, আল আমিনের প্রচন্ড জ্বর আর কাশি রয়েছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নওগাঁ হাসপাতালে স্থানান্তর করেছি। সেখানে ভাইরাস সনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আল মামুন বলেন, রাণীনগর হাসপাতাল থেকে নওগাঁ সদরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সত্যিই সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কি না বা অন্য কোন সমস্যা রয়েছে তা পরীক্ষা ছাড়া বলা যাবেনা। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত না হয়ে ছেলেটাকে গ্রামে উঠতে না দেয়া এটা অমানবিক কাজ করেছে।



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: