বৃহঃস্পতিবার, ৮ই জুন ২০২৩, ২৫শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

Rupali Bank


মারা গেলো মহাবিপন্ন ১৩ শকুন


প্রকাশিত:
২৫ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৬

আপডেট:
৮ জুন ২০২৩ ০৭:১০

ছবি সংগৃহিত

দেশে বর্তমানে শকুনের সংখ্যা হাতেগোনা। তার ওপর সম্প্রতি মৌলভীবাজারে হত্যার শিকার হয়েছে ১৩টি মহাবিপন্ন ‘বাংলা শকুন’। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বন বিভাগ। প্রাথমিকভাবে বিষ প্রয়োগে শকুনগুলোকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বন বিভাগ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী, দেশে মাত্র ২৬০টি শকুন ছিল। তার মধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে ছিল ৮০টি। এই ১৩টি শকুনের মৃত্যুর পর এই সংখ্যা আরও কমে গেলো।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার মিত্র জানান, শকুন হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাতে বন বিভাগের মৌলভীবাজারের বর্ষিজোড়া পার্কের বিট অফিসার আবু নাঈম মোহাম্মদ নুরুন্নবী বাদী হয়ে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

তাতে মো. রোকন মিয়া ও কছনু মিয়া নামে দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বন বিভাগ শকুনের মরদেহ উদ্ধার হওয়া এলাকা থেকে বিষের বোতল উদ্ধার করেছে। ডায়েরির সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে ওই বিষের বোতল দুটি থানায় জমা দেওয়া হয়েছে।

জিডিতে বলা হয়েছে, বন থেকে আসা শিয়াল অভিযুক্ত দুজনের বাড়ির একটি ছাগলকে কামড় দিলে সেটি মারা যায়। এতে মালিক ক্ষিপ্ত হয়ে মৃত ছাগলের গায়ে বিষ ঢেলে জমিতে ফেলে রাখে। আর তা ওই কুকুর ও শিয়ালগুলো খায়। ঘটনাস্থলে কুকুর ও শিয়ালের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

আবু নাঈম মোহাম্মদ নুরুন্নবী শুক্রবার বিকালে বলেন, ‘স্থানীয় এলাকার মানুষের মুখ থেকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুজনের নাম পেয়েছি। আর বেশি কোনও তথ্য পাইনি। স্থানীয় লোকজন বলেছে, শিয়ালের কামড়ে ছাগল মারা যায়। পরে ছাগলের মরদেহে বিষ মিশিয়ে জমিতে ফেলে রাখে ছাগলের মালিক।’

আইইউসিএনের শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দিপু শুক্রবার বিকালে বলেন, ‘মৃত শকুনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়নি। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিভাগে পাঠানো হয়েছে। হয়তো দু-একদিনের মধ্যে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মর্মাহত ১৩টি শকুনের মৃত্যুতে। গত বৃহস্পতিবার দু-দফায় শকুনের মরদেহগুলো সংগ্রহ করে আইইউসিএনের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’

মারা যাওয়া বিপন্ন প্রজাতির ওই শকুন সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘২০১৫ সালে ওই শকুনগুলো দেওরাছড়া চা বাগানের উঁচু একটি গাছে বসতো। ওই গাছটি কেটে ফেলার কারণে আর শকুনগুলো দেখা যায়নি। আবার ২০২১ সালে ওই শকুনের দেখা মেলে। শকুন রক্ষায় জনসাধারণকে আরও সচেতন করে তুলতে হবে।’

মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘বন বিভাগ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। সেটি জিডি আকারে রুজু হয়েছে। তদন্ত করে শিগগিরই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

প্রসঙ্গত, আইইউসিএন বাংলাদেশের শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি শকুনের শরীরে আইইউসিএনের স্যাটেলাইট ট্যাগ লাগানো হয়েছিল। ওই শকুনকে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা করতে দেখা যায়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে শকুনটির অবস্থান একই জায়গায় অনড় ছিল। কোনও সিগন্যাল মিলছিল না। এই অনড় থাকার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে শকুনের মৃত্যুর বিষয়টি ধরা পড়ে।

আইইউসিএনের শকুন সংরক্ষণ প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দিপু বলেন, ‘বুধবার (২২ মার্চ) শকুনটির অবস্থান চিহ্নিত করি আমরা। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের রসুলপুরের বাসিন্দা ফয়সল আহমদের বাড়ি সংলগ্ন স্থান থেকে দুই দফায় মৃত অবস্থায় মোট ১৩টি বাংলা শকুন উদ্ধার করেছে আইইউসিএন ও বন বিভাগ। এ সময় মৃত ছাগল ও কুকুর-শিয়ালের দেহাবশেষও খুঁজে পাওয়া যায়।’

বন বিভাগ থেকে এরই মধ্যে মৃত শিয়াল, কুকুর ও ছাগলের মরদেহ ও গরুর হাঁড় মাটিতে পুঁতে ফেলেছে, যাতে অন্য কোনও শকুন ওই মাংস খেয়ে মারা না যায়।

এ ধরনের বিষ প্রয়োগের ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সে জন্য স্থানীয়ভাবে জনসাধারণকে সচেতন করতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : shomoynews2012@gmail.com; shomoynews@yahoo.com
সম্পাদক: মো. জেহাদ হোসেন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top