ধর্ম ডেস্ক
যেসব বাক্য উচ্চারণ করলে দোয়া বিফলে যায়
প্রকাশিত:
২২ জানুয়ারী ২০২৫ ১১:৩৪
আপডেট:
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:০৩

দোয়াকে বলা হয় ইবাদতের মগজ। দোয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)
যে আল্লাহর কাছে দোয়া করে না, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন। তাই মুমিনের দায়িত্ব হলো—আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। তবে, যেনতেনভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত নয়। এমন কোনো শব্দ সেখানে ব্যবহার করা যাবে না, যা আল্লাহ অপছন্দ করেন। রাসুল (স.) শিক্ষা দিয়ে গেছেন কী ধরনের শব্দে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত নয়। নিচে তা তুলে ধরা হলো—
তোমার ইচ্ছা হলে দাও—এমন বাক্য উচ্চারণ না করা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে, সে যেন দৃঢ়তা প্রকাশের সঙ্গে দোয়া করে। আর সে যেন না বলে, ‘হে আল্লাহ! যদি তুমি ইচ্ছা করো, তবে আমাকে দান করো।’ কেননা মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর জন্য কোনো বাধ্যকারী নেই। (মুসলিম: ৬৭০৪)
মৃত্যু কামনা না করা
কোনো বিপদে পড়লে কখনো মহান আল্লাহর কাছে মৃত্যু চেয়ে দোয়া করা উচিত নয়। বরং বিপদে ধৈর্যসহকারে তাঁর আশ্রয় প্রার্থনাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন বিপদে পড়ার কারণে মৃত্যু আকাঙ্ক্ষা না করে। তবে মৃত্যু তার কামনা হয়, তাহলে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জীবিত রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত আমার হায়াত আমার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর হয়, তবে আমাকে মৃত্যু দিয়ে দিন।’ (মুসলিম: ৬৭০৭)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং মৃত্যু আসার আগে যেন মৃত্যুর জন্য দোয়া না করে। কেননা তোমাদের কেউ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মুমিন লোকের বয়স তার কল্যাণই বাড়িয়ে থাকে। (মুসলিম: ৬৭১২)
ইহকালীন শাস্তি কামনা না করা
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) একজন মুসলিম রোগীকে সেবা করতে গেলেন। সে (অসুখে কাতর হয়ে) অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল, এমনকি সে পাখির ছানার মতো হয়ে গেল। রাসুলুল্লাহ (স.) তাকে বলেন, তুমি কি কোনো বিষয় প্রার্থনা করছিলে অথবা আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে কিছু চেয়েছিলে? সে বলল, হ্যাঁ। আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহ! আপনি পরকালে আমাকে যে সাজা দেবেন তা এ ইহকালেই দিয়ে দিন। সে সময় রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, সুবহানাল্লাহ! তোমার এমন সামর্থ্য নেই যে, তা বহন করবে? অথবা তুমি তা সহ্য করতে পরবে না। তুমি এমনটি বললে না কেন? হে আল্লাহ! আমাদের কল্যাণ দাও পৃথিবীতে এবং কল্যাণ দান করো পরকালেও। আর জাহান্নাম থেকে আমাদেরকে রক্ষা করো। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, তখন তিনি তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আর আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দেন। (মুসলিম: ৬৭২৮)
ইসলামবহির্ভূত কোনো কাজের জন্য দোয়া না করা
পাপাচারমূলক কাজ করার ইচ্ছা করা ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া মহান আল্লাহ কবুল করেন না। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সর্বদা গৃহিত হয়, যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দোয়া করে এবং দোয়ায় তাড়াহুড়া করে।’ (মুসলিম: ৬৮২৯)
উল্লেখ্য, দোয়া কখনও বিফলে যায় না। এই বিশ্বাস রেখে ইখলাসের সঙ্গে দোয়া করে যাওয়া উচিত। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, কোনো মুসলিম পাপাচার বা আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া ছাড়া যেকোনো দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তিনটি জিনিসের যেকোনো একটি দান করেন—১. হয় দ্রুত তার দোয়া কবুল করেন অথবা ২. তা পরকালের জন্য সঞ্চিত রাখেন অথবা ৩. কোনো ক্ষতি (বিপদাপদ, সমস্যা ইত্যাদি) অপসারণ করেন।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ৭১০, মুসনাদে আহমদ: ১১১৩৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করুন। সবাইকে যথাযথভাবে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: