শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


পত্রিকা বিক্রির জমানো টাকায় হজ আদায় মতিউর রহমানের


প্রকাশিত:
৪ জুন ২০২৩ ২১:৫০

আপডেট:
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০২:৫৭

ফাইল ছবি

আল্লাহর ঘর দেখার আগ্রহ থাকলেও সামর্থ্য ছিলো না মতিউর রহমান ওরফে হকার মতি ভাই। তবে ইচ্ছা ছিলো তীব্র। তাই মনের সাহসকে পুঁজি করে তিলে তিলে পত্রিকা বিক্রির জমানো টাকায় অবশেষে হজ পালন করেছেন তিনি।

পত্রিকা বিক্রেতা মতি মিয়া নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার হররদীয়া গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তার বয়স ৭২। ৬০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত তিনি। বয়সের ভাঁড়ে শরীর ঝুঁকে গেলেও এখনো থেমে নেই তার দৈনন্দিন পত্রিকা বিক্রির কাজ। শীত, গ্রীষ্ম, রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রতিদিন অফিস, বাসা বাড়িতে পত্রিকা পৌঁছে দেন তিনি।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬০ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রির লাভের অংশ থেকে তিল তিল করে জমানো টাকায় গত বছর হজ আদায় করেছেন তিনি।

মতিউর রহমান জানান, তার বাবা পত্রিকা বিক্রির ব্যবসা করতেন। সেই সুবাদে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধের আগ থেকে তিনি পত্রিকা বিক্রির কাজে জড়িত। ছেলেবেলায় বাবা আব্দুল হালিমের হাত ধরে সেই সময়ের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘দৈনিক ইত্তেফাক’, ‘দৈনিক বাংলা’, ‘বাংলার বাণী’ ‘বাংলাদেশ অবজারভার’ দিয়ে হকারি জীবন শুরু।

তখনকার দিনে আগের দিনের পত্রিকা পাওয়া যেত পরের দিন। তখন তিনি এজেন্ট নন, পত্রিকা আসত শিবপুরের আব্দুল খালেক মাস্টারের নামে। সেখান থেকে মাত্র ৭০-৮০ কপি পত্রিকা এনে বিক্রি করতেন। পাশাপাশি ডাক বিভাগের রানের চাকুরিও করতেন। ডাকে চিঠি নিয়ে শিবপুরে আসা-যাওয়ার পথে পত্রিকা আনতেন। সেই পত্রিকা মনোহরদী ও পাশ্ববর্তী গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার কয়েকটি গ্রামের পাঠকের কাছে বিক্রি করতেন।

এভাবে কিছুদিন কাজ করার পর নিজেই পত্রিকার এজেন্ট হয়ে যান। তখনকার দিনে প্রতিদিন ৫০/৬০ কি.মি সাইকেল চালিয়ে মানুষের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিতেন তিনি। এখনো খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ফজরের নামাজ আদায়ের পর দীর্ঘ দিনের সঙ্গী সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।

বর্তমানে মতিউর রহমানের ছোট ছেলে সাইফুলও একই ব্যবসায় নেমেছেন। পত্রিকা বিক্রি অনেকটা তাদের পারিবারিক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে বলা যেতে পারে।

মতিউর রহমান জানান, ১০ বছর ডাক বিভাগের চাকুরী করে অবসরে গিয়েছেন তিনি। তবে মানুষের দ্বারে দ্বারে পত্রিকার পৌঁছে দেওয়ার সেবা থেকে অবসর নেননি। এখনো মনোহরদীর গুরুত্বপূর্ণ অফিস, পৌরসভা অফিসসহ বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, এনজিও অফিস, মনোহরদী বাজারের দোকান এবং বিভিন্ন বাসা বাড়িতে পত্রিকা পৌঁছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আনন্দের সাথেই পালন করেন। বর্তমানে প্রায় ২০০ কপিরও বেশি পত্রিকা মানুষের দৌঁড়গড়ায় পৌঁছে দেন তিনি। কাজের প্রতি একধরনের মায়া জন্মেছে বলে জানান তিনি।

মনোহরদী রিপোটার্স ক্লাবের সভাপতি কামরুল ইসলাম জানান, মতি ভাই অনেক সহজ, সরল ও সাদা মনের মানুষ। এ বয়সেও তিনি খুশি মনে পত্রিকা বিক্রি করেন। গেল বছর মতি ভাই হজ পালন করে এসেছেন।

মনোহরদী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুয়েলের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তিনি খুব সাধারণ জীবন যাপন করেন। আর্থিকভাবে খুব স্বচ্ছল না হলেও তিনি কারও কাছে পারিবারিক বা আর্থিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন না। অনেকে এই বয়েসে আর্থিক সমস্যায় পড়লে আমাদের (জনপ্রতিনিধিদের) কাছে এসে বিভিন্ন জিনিস আবদার করেন। কিন্তু তিনি তার মতো করে জীবন-যাপন করেন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top