খারাপ কোলেস্টেরল কমবে যে ২ খাবারে
প্রকাশিত:
২২ জুলাই ২০২৫ ১৪:৪৭
আপডেট:
২২ জুলাই ২০২৫ ২৩:৪৫

কোলেস্টেরল হল একটি মোমের মতো চর্বি যা শরীরে অসংখ্য ভূমিকা পালন করে। কিছু কোলেস্টেরল দৈনন্দিন খাবার থেকে পাওয়া যায়, আবার কিছু আছে যা লিভার নিজে তৈরি করে। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে যে ওষুধটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, তা হলো স্ট্যাটিন।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এমন দুটি খাবার রয়েছে যেগুলো নিয়মিত খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো যেতে পারে এবং সেটিও আবার স্ট্যাটিনের মতোই কার্যকরভাবে।
সোমবার (১৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ডেইলি এক্সপ্রেস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ কোলেস্টেরল এক ধরনের নীরব ঘাতক, যেটি শরীরে কোনো উপসর্গ না দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতি করতে পারে। সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই এ সমস্যা ধরা পড়ে। যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক কিংবা রক্তনালী ব্লকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
তবে, পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এর পাশাপাশি কিছু খাবার ও প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যেগুলোর প্রভাব স্ট্যাটিনের মতোই রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে আনে।
কোলেস্টেরল কী এবং এটা ক্ষতিকর কেন?
মানবদেহে প্রধানত দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। একটি হচ্ছে– লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল, এটাকে খারাপ কোলেস্টেরল বলা হয়। আর অন্যটি হচ্ছে হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল। এটাকে ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়।
এইচডিএল মূলত শরীর থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বের করতে সাহায্য করে। তবে এলডিএল অতিরিক্ত পরিমাণে জমে গিয়ে ধমনীর দেয়ালে চর্বি জাতীয় আবরণ তৈরি করে। এটা জমতে জমতে ধীরে ধীরে ধমনী সরু করে দেয়, যার ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে যে ওষুধটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, তা হলো স্ট্যাটিন। আর স্ট্যাটিনের মতো প্রভাব ফেলে এমন দুটি খাবার হচ্ছে– ওটস এবং প্ল্যান্ট স্টেরল ও স্ট্যানলস।
ওটসে রয়েছে বেটা-গ্লুকান নামের এক দ্রবণীয় ফাইবার, যা খাওয়ার পর হজমপ্রক্রিয়ার মধ্যে এক ধরনের জেল তৈরি করে। এই জেল শরীরের পিত্তরসে থাকা কোলেস্টেরল শোষণ হতে বাধা দেয়। তখন যকৃত নতুন করে পিত্তরস তৈরির জন্য রক্ত থেকে কোলেস্টেরল টেনে নেয়, ফলে রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়।
একটি বিশ্লেষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক ৩ দশমিক ৫ গ্রাম বেটা-গ্লুকান গ্রহণ করলে ৩ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ কমে যেতে পারে। তবে ওটস খাওয়ার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে এমন কোনো নির্দিষ্ট গবেষণা এখনো হয়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন।
আর দ্বিতীয় খাবারটি হচ্ছে প্ল্যান্ট স্টেরল ও স্ট্যানলস। এগুলো এক ধরনের উদ্ভিজ্জ যৌগ, যা দেখতে অনেকটা কোলেস্টেরলের মতো। যখন কেউ স্টেরল বা স্ট্যানল খায়, তখন এটি অন্ত্রে কোলেস্টেরলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এবং রক্তে কোলেস্টেরল শোষিত হতে দেয় না। ফলে রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে।
এটি বিশেষভাবে ফোর্টিফায়েড দুধ, মার্জারিন ও দইয়ে পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবে ফল, সবজি, বাদাম ও শস্যজাতীয় খাবারেও অল্পমাত্রায় থাকে।
২০১৪ সালের একটি বিশ্লেষণ বলছে, যদি দৈনিক ৩ দশমিক ৩ গ্রাম ফাইটোস্টেরল খাওয়া যায়, তাহলে মাত্র চার সপ্তাহের মধ্যে ৬ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত খারাপ কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিক খাদ্য থেকে আমরা খুব কম পরিমাণে স্টেরল/স্ট্যানল পাই (প্রায় ৬০০ মি.গ্রাম), যা কার্যকর মাত্রার চেয়ে অনেক কম। তাই ফোর্টিফায়েড খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন বলেছে, স্টেরল ও স্ট্যানল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ নেই যে এগুলো হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। অন্যদিকে, স্ট্যাটিন নিয়ে এমন ক্লিনিক্যাল প্রমাণ রয়েছে।
মূলত স্ট্যাটিন এখনো কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা। তবে সুস্থ খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন এর প্রভাবও কম নয়। স্ট্যাটিনের পাশাপাশি ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করলে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটলে, সাইক্লিং ও সাঁতারের কাজে পাশাপাশি বেশি করে ফল, সবজি ও ফাইবারজাতীয় খাবার নিয়মিত খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট না খাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
এসএন /সীমা
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: