ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে কোন দেশ কী বলছে
প্রকাশিত:
৭ মে ২০২৫ ১৮:৫৪
আপডেট:
৮ মে ২০২৫ ১০:৪৯

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবেশি দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনাকে ‘‘যুদ্ধের শামিল’’ ও ‘‘আগ্রাসন’’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তান। যেকোনো সময় হামলার জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ। তিনি বলেছেন, ‘‘কোথায় ও কীভাবে জবাব দেব, সেটি একান্তই আমাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’’
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘‘ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা হচ্ছে, এমন অন্তত ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।’’
এমন বাস্তবতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে ভারতের হামলার মধ্য দিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা এই পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকেই সংযম প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন।
‘দায়িত্বপূর্ণ সমাধান’ খোঁজার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না হয়, সে লক্ষ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ‘‘দায়িত্বপূর্ণ সমাধানের’’ পথ খুঁজে বের করতে ভারত ও পাকিস্তানকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৬ মে) ওয়াশিংটন ডিসিতে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার এই উত্তেজনা একটি চলমান পরিস্থিতি। আমরা এখনও বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’’
এ বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দেশদুটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক পর্যায়ে যোগাযোগ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ব্রুস বলেন, ‘‘এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কেবল দর্শকের ভূমিকা পালন করছে না, আমরা সক্রিয়ভাবে দুই পক্ষের সঙ্গে যুক্ত আছি। অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই পরিস্থিতির মধ্যেও চলমান বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে অবগত রয়েছি।’’
এর আগে, হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের এই হামলাকে “লজ্জাজনক” উল্লেখ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘‘এটি সত্যিই দুঃখজনক। আমি শুধু চাই, দ্রুত এই সংকটের অবসান ঘটুক।’’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত। তিনিও দ্রুত এই সংকটের অবসান কামনা করেন।
পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বের করতে ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব সামলানো রুবিও।
সর্বোচ্চ সংযমের আহ্বান জাতিসংঘের
ভারত-পাকিস্তানের এই সামরিক উত্তেজনা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তার মুখপাত্র বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের সামরিক অভিযান নিয়ে (জাতিসংঘ) মহাসচিব অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’’
তিনি উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। গুতেরেসের ভাষ্যমতে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কোনো সামরিক সংঘাত হলে তার ভার বিশ্ব বহন করতে পারবে না।
রাশিয়া: কূটনৈতিক উপায়ে উত্তেজনা নিরসন সম্ভব
ভারত-পাকিস্তান চলমান ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত ও পাকিস্তানে সামরিক সংঘাত বৃদ্ধিতে রাশিয়া উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না হয়, সে জন্য দুই পক্ষকেই সংযম দেখানোর অনুরোধ করছি।
বিবৃতিতে রাশিয়া আশা প্রকাশ করেছে যে, শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক উপায়ে উত্তেজনা নিরসন করা সম্ভব।
উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব চীনের
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘ভারত ও পাকিস্তান এমন প্রতিবেশী, যাদের চাইলেও আলাদা করা যায় না। তারা চীনেরও প্রতিবেশী। তাই শান্তি ও স্থিতিশীলতায় অগ্রাধিকার দিয়ে দুপক্ষকেই আমরা শান্ত ও সংযত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি (চলমান) পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে, এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে উভয় দেশকে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
এছাড়া দুই দেশের মধ্যকার এই উত্তেজনা কমাতে প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবও দিয়েছে চীন।
এ বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তানের বর্তমান উত্তেজনা কমাতে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে চায় চীন। এ ক্ষেত্রে আমরা আান্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।’’
শান্তি স্থাপনে দুই দেশকেই সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
চলমান উত্তেজনা প্রশমনে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকেই যুক্তরাজ্য সহযোগিতা করতে চায় বলে জানিয়েছেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের বার্তা হলো, আমরা দুই দেশেরই বন্ধু ও অংশীদার। ফলে উভয় দেশকেই সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, সংলাপ, উত্তেজনা প্রশমনে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশেরই যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে এবং এসব বিষয়ে সহযোগিতা লাগলে তা করার ইচ্ছা আমাদের আছে।’’
পূর্ণাঙ্গ সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা জাপানের
পাকিস্তানে ভারতের অপারেশন সিঁদুর পরিচালনার ঘটনায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাপান।
পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় কঠোর নিন্দা জানায় জাপান। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করি না। ওই ঘটনার পর সৃষ্ট বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টাপাল্টি প্রতিশোধমূলক হামলার দিকে গড়াতে পারে এবং তা পূর্ণ মাত্রার সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে আমরা ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন সংযম প্রদর্শন করে এবং সংলাপের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করে।’’
সংযম দেখানোর আহ্বান ফ্রান্সেরও
ভারত ও পাকিস্তানকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্সও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসী হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ভারতের অভিপ্রায়ের বিষয়টি আমরা বুঝি। তবে উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে এবং নিজ নিজ দেশের বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযম অনুশীলন করার আহ্বান জানাই।’’
দেশটির টিএফ১ টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই আহ্বান জানান।
এ সময় ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দুই দেশের কারোরই যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের দিকে যাওয়ার ইচ্ছা আছে, তা আমার মনে হয় না।’’
শান্তি ও সংযমের আহ্বান বাংলাদেশের
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। বুধবার (৭ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুই দেশকে শান্ত থাকার পাশাপাশি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উদ্ভূত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ সরকার। আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ আশাবাদী যে, কূটনৈতিকভাবে এই উত্তেজনা নিরসন হবে এবং শান্তি ফিরে আসবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’’
মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে অপারেশন সিঁদুর নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জন ক্ষেপণাস্ত্র এবং পাঁচজন গোলার আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ।
সীমান্তে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর পাল্টা গোলায় ৭ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভারতীয় পুলিশ ও চিকিৎসকরা।
সূত্র: ইউএনবি
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: